অতিরিক্ত লোকসানের কারণে পরপর দুজন পেঁয়াজ চাষীর আত্মহত্যা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে ঋণে জর্জরিত এক বৃদ্ধ পেঁয়াজ চাষী মীর রুহুল আমিন গত ১৪ এপ্রিল ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে গত ২৬ মার্চ মেহেরপুরের মুজিবনগরে আরেক পেঁয়াজ চাষী সাইফুল শেখ নিজের পেঁয়াজ খেতে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। দুইজন পেঁয়াজ চাষে অতিরিক্ত লোকসানের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। পরপর দুজন পেঁয়াজ চাষীর আত্মহত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠন। সংগঠনগুলো তাদের বিবৃতিতে বলেন- পরপর দুজন পেঁয়াজ চাষীর আত্মহত্যা শুধু আত্মহত্যা নয়, এটা রাষ্টীয় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। কৃষকদের আত্মহত্যার জন্য রাষ্ট্রের কৃষি ব্যবস্থাপনা দায়ী। পেঁয়াজ চাষী থেকে শুরু করে ধান, আলু, সবজি, মাছ, কৃষক যে ফসলই চাষ করুক লোকসান তাঁর অবধারিত। কৃষককে লোকসানে পড়তে বাধ্য করে রাষ্ট্রের কৃষি ব্যবস্থাপনা। এবছর কৃষক যখন পেঁয়াজ রোপণ করছিল তখন বীজের দাম ছিল কয়েকগুণ, সার-কীটনাশকের দাম তো প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। উপকরণের দাম বৃদ্ধির সাথে যুক্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার তখন কোন ব্যবস্থা নেয় নি। কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেনি। ফলে কৃষকরা চড়া সুদে এনজিও মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছে। যখন ফসল উঠল তখন প্রতিমণে মুড়িকাটা পেঁয়াজে ১২০০-১৫০০ টাকা এবং হালি পেঁয়াজে ৫০০-৭০০ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এই লোকসানের পেছনে দায়ী পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের হাতে পুরো বাজার, সংরক্ষণ, আমদানি সবকিছু নির্ভর করে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। অথচ সরকারিভাবে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ক্রয়বিক্রয়, কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে কৃষক উপকৃত হত। সরকার এসকল ব্যবস্থা না নিয়ে বরং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করে। ফলে পেঁয়াজ চাষীরা সীমাহীন লোকসানে পড়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকদের এই মৃত্যুর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। শুধু পেঁয়াজ চাষী নয়, ধান, আলু, সবজি, মাছ সহ সকল ফসলের চাষীরা এই নির্মম শোষণের শিকার বলছেন সংগঠনগুলো। এ বছর আলু চাষীরা ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছে। সরকার আলু চাষীদের রক্ষায় কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয় নি। বোরো মৌসুমে ধান কাটা শুরু হয়েছে অথচ ধান কেনার ক্ষেত্রে সরকার এমন নীতি ঘোষণা করেছে যার মাধ্যমে অবধারিতভাবে কৃষক লোকসানে পড়বে। সরকারের এই ভুমিকার ফলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলো কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনির মুনাফা লুটেপুটে খাচ্ছে। আর কৃষক ঋণগ্রস্ত হয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে সর্বশান্ত হচ্ছে। এর দায় সরকারের। সরকারের ব্যর্থতায় কৃষকদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে আত্মহত্যায় বাধ্য হওয়া দুই কৃষকের পরিবারকে তাদের সারাজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া, তাদের সকল ঋণ মওকুফ, সকল ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষীদের ক্ষতিপূরণ, আলু-ধানসহ সকল ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..