গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে বিনিয়োগকারীদের লাগাম টানার চেষ্টা করছে সরকার
৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী : সিপিবি
ঐশ্বর্য সৌরভ :
গ্যাস মূল্যবৃদ্ধি একদিকে জনজীবনের সংকট বাড়াবে, অপরদিকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রশ্রয় পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
দলটির নেতারা গত ১৫ এপ্রিল এক বিবৃতিতে নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও গণবিরোধী আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি শিল্প বিশেষ করে ক্ষুদ্র শিল্পে নতুন সংকট তৈরি করবে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি জনগণের ঘাড়েই চাপানো হবে। অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার অতীতের সরকারের ধারাবাহিকতায় মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারা অব্যাহত রেখে চলেছে, যা সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ গ্যাসসহ যে সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা প্রত্যাহার করে জনজীবনের শান্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে ভোক্তা, বামপন্থি রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের তীব্র আপত্তি ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানিতে দেখা দেয় তুমুল হট্টগোল। সবকিছু ঊর্ধ্বে ৩৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আসলো।
করোনা সংক্রমণের সময় থেকে শুরু করে ২০২৪-এ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল তাদের। তারপরেও এ সরকার নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ছাড়লো।
এতে নতুন শিল্পে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে মনে করছেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, যেখানে নতুন সরকার একদিকে সার্বিক বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক ওই সময় এ গ্যাসের দাম বাড়ানো ‘উল্টো নীতি’ নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত। এতে যেমন নতুন বিনিয়োগ মুখ ফিরিয়ে নিবে তেমনি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমবে।
এ পরিস্থিতিতে দেশের নিট পোশাক রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নেতারা বলেন, শিল্প গ্যাসের দাম আগে ৩০ টাকা ছিল, সেটাই নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। এরপর আরও দাম বাড়ালে নতুন করে শিল্প স্থাপনের আগ্রহ হারাবেন বিনিয়োগকারীরা। সরকার একদিকে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলে অন্যদিকে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
পোশাক শিল্পেও বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে বলে মন্তব্য মালিকদের। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট ইস্যু যখন চুঙ্গে ঠিক সে সময় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় কঠিন হবে ব্যবসায়ীদের জন্য। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোর মালিকরা বড় সমস্যায় পড়বেন বলে জানান মালিকরা। অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও আছে বলে মনে করছেন মালিকরা। এতে যেমন কর্মসস্থান কমবে তেমনি বেকার হবে হাজারো শ্রমিক ও তাদের পরিবার।
শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক দাবি করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সংগঠনটি বলেছে, নতুন ও বিদ্যমান গ্রাহকের জন্য আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে। গ্যাসের নতুন মূল্যহার পুনর্বিবেচনার দাবি জানায় সংগঠনটি।
এফআইসিসিআই বলছে, বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন শুধু নতুন শিল্প বা বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলবে। সংগঠনটি এ ধরনের জরুরি সংস্কারের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানায়।
ব্যবসায়িক নেতারা বলছেন, নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন- তাদের বেশি বিল দিতে হবে। যে কারণে চলমান অনেক শিল্পের খরচ বাড়বে। অনেক পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, কাঁচামালের দাম বাড়বে। শেষে পণ্যের দাম বাড়বে, যা শুধু ভোক্তা নয় সবাইকে ভোগাবে।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা দেশের কারখানা বন্ধ করে দেশটাকে আমদানি নির্ভর করতে চান বলে মনে করেন কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
এমনিতেই দেশের শিল্প-কারখানা বছরের বেশিরভাগ সময় গ্যাস সংকটে ভুগছে। গ্যাসের অভাবে কারখানার উৎপাদন প্রতিনিয়ত কমছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যমান শিল্প খাতে একটি বড় ধাক্কা। আর নতুনদের জন্য লাল বার্তা বলে মনে করেন সাংবাদিক-কলামিস্ট মোস্তফা কামাল।
টানা কয়েক বছর ধরেই দেশের অর্থনীতি টালমাটাল। ডলার-সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার আর লুটপাটে ভঙ্গুর ব্যাংক খাত। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। এরপর থেকে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় হামলার পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। আবার নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাস না পেরোতেই সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা যায়। ঈদের আগেও শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। সবমিলিয়ে বর্তমানে দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এ অবস্থায় সরকারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
এর আগে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় শিল্পে গ্যাসের দাম। শিল্প ও ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম ১১ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩০ টাকা। পরে গত বছর ক্যাপটিভে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৩১ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রথম পাতা
‘এক যাত্রা দুই ফল’
গুজব ও ধর্মীয় উসকানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও নারীসমাজ
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার আহ্বান
বগুড়ায় উদীচীর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনে হামলা-ভাঙচুর
সংবিধান পুনর্লিখন ও চার মূলনীতি পরিবর্তনের বিপক্ষে সিপিবি
করিডোর নয়, মানুষ চায় দ্রুত নির্বাচন
ক্ষেতমজুরদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য শোষণ-বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে
নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ উপাচার্য ও প্রক্টর-কে পদত্যাগ করতে হবে
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে
Login to comment..