যুব বিদ্রোহ দিবসে রাজধানীতে যুব ইউনিয়নের সমাবেশ পরবর্তী মিছিল একতা প্রতিবেদক :
সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়ে যায়নি। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনো চলমান।
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসের ৯৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন আয়োজিত সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ প্রায় পৌনে ২০০ বছর লড়াই করেছে। কিন্তু সেই জাতীয় মুক্তি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সফল হয়নি, কারণ উপমহাদেশ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আজও ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসের ৯৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৮ এপ্রিল সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে সমাবেশ করে। শুরুতেই যুব বিদ্রোহ দিবস স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সিপিবি নারীসেল, জাতীয় যুব জোট, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গৃহ শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
এসময় মোহাম্মদ শাহ আলম আরও বলেন, একাত্তরে আমরা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর দেশে সাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভাবাদর্শ পুনর্বাসিত হয়েছে। ২৪-এর অভ্যুত্থানের পরেও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার নতুন উত্থান ঘটেছে। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়। নগরীর দামপাড়া এলাকায় তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকের অস্ত্রাগার দখল করে নেন বিপ্লবীরা। সেখানেই অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর চারদিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তিন ঘণ্টার সেই যুদ্ধে ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয় এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন।
যুবনেতারা বলেন, সাম্রাজ্যবাদ এখন নতুন কৌশলে শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। আগে ব্রিটিশরা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের সম্পদ লুটে নিয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও সেই লুটপাট ও পাচার থামেনি। আজও দেশের টাকা পাচার হয়ে বিদেশে ‘বেগমপাড়া’ গড়ে তোলা হচ্ছে।
মাস্টারদা সূর্যসেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের যে বিপ্লবী চেতনা ছিল, আগামী
চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহ দিবসের আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম দিনের ছাত্র ও যুব সমাজ সেই চেতনা ধারণ করে দূর্বার সংগ্রাম গড়ে তুলবে। সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
যুব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য যুবনেতা আশিকুল ইসলাম জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ ইরান মোল্লা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রফিজুল ইসলাম রফিক, নারায়ণগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক যুবনেতা সজিব প্রমুখ।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসের ৯৫তম বাষির্কী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা। সমাবেশ থেকে বক্তারা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের দিন ১৮ই এপ্রিলকে জাতীয় যুব দিবস ঘোষণা করার দাবি জানান।
১৮ এপ্রিল বিকেলে নগরীর জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, সমাজতন্ত্র ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার সংস্কারের নামে সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্রকে উৎখাত করতে চায়। বর্তমান সরকারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কাছে। আগামীতে বাংলাদেশের রাজনীতি মাস্টারদার সূর্যসেনের আদর্শের কাছে ফেরত যেতে হবে।
সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য চৌধুরী জোসেন, চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়া, সহ-সভাপতি প্রীতম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি বাবলা বড়ুয়া প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের পরিবেশিত গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। যুব সমাবেশ পরবর্তী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করেন রক্তকরবী, আনন্দ নৃত্যকলা একাডেমি, ব্যান্ড দল নিঃশব্দ নাবিকের দল।
সমাবেশ থেকে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের দিন ১৮ই এপ্রিলকে জাতীয় যুব দিবস ঘোষণা করা এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক জালালাবাদ পাহাড়টি সেনাবাহিনী থেকে অধিগ্রহণ করে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার এবং সেখানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানান।
এছাড়া চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তসহ যুব বিদ্রোহের মহানায়কদের স্মরণে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের নামকরণ করারও দাবি জানানো হয়।
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহরজুড়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলের সূর্য সেনের প্রতিকৃতিতে যুব বিদ্রোহের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা।