
নৃবিজ্ঞানের ভাষায় জাতি হচ্ছে একটি সমষ্টিগত পরিচয়, যা বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে গঠিত হতে পারে, যেমন- ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ভৌগোলিক অঞ্চল বা রাজনৈতিক লক্ষ্য। জাতির ধারণাটি মূলত মানুষের মধ্যে একটি সম্মিলিত সচেতনতা ও একাত্মবোধের ওপর নির্ভর করে। জাতি পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো-
সামূহিক পরিচয়: জাতি ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিচয়ের বাইরে একটি বৃহত্তর গোষ্ঠীগত স্বীকৃতি তৈরি করে।
ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা: জাতি প্রায়ই অতীতের গৌরব, সংগ্রাম বা ট্র্যাজেডিকে নিজেদের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে।
আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা: অনেক জাতি নিজেদের রাষ্ট্র গঠন বা স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম করে (যেমন, ফিলিস্তিনি জাতি)।
মোটকথায় জাতি হলো মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য। অর্থাৎ যে কোনো জাতির পরিচয় বুঝার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে তার সংস্কৃতি। ফলে যারা ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে জাতি পরিচয় গঠন করতে চায় তারা জাতির মধ্যে ধর্মকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ও বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে স্বপ্রণোদিতভাবে অথবা তৃতীয় কোনো পক্ষের উদ্দেশ্য সাধন করতে। যেহেতু জাতির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল তাই এখন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। শ্রেণি বিচারে বা ঐতিহাসিক অবস্থান থেকেও বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উপাদান হচ্ছে তার পহেলা বৈশাখ।
বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখের ইতিহাস কৃষি, সংস্কৃতি, ও প্রশাসনিক সংস্কারের সঙ্গে জড়িত।
বাংলা সনের প্রবর্তন মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কালে (১৫৫৬-১৬০৫) সূচিত হয়। মুঘল সাম্রাজ্যের রাজকার্য পরিচালিত হতো ফারসি পঞ্জিকা অনুযায়ী যা আরবির মতোই চন্দ্রমাসের হিসাবে। আরব বা ফারসি অঞ্চলে বাংলার মতো বৈচিত্র্যময় ষড়ঋতু ছিল না, ফলে চন্দ্রমাসের পঞ্জিকার হিসাবের সাথে এই অঞ্চলের কৃষি উপকরের দিনক্ষণে সমস্যা দেখা দিলো। বর্তমান সময়ে ঈদ যেভাবে প্রতিবছর আট দিন করে এগিয়ে আসে ঠিক একইভাবে কৃষি উপকর এবং খাজনা আদায়ের দিন এগিয়ে আসতো ফারসি পঞ্জিকা অনুযায়ী। স্বাভাবিকভাবে এমনও ঘটতো যে বাংলার কৃষক ধানের চারা বপন করছে কিন্তু খাজনার তারিখ চলে এসেছে। তখন সম্রাট আকবর কৃষি উপকর আদায়ের সুবিধার্থে একটি নতুন সৌর-চান্দ্রিক পঞ্জিকা চালু করেন, যা ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল। এই পঞ্জিকা তৈরিতে প্রাচীন হিন্দু সৌর পঞ্জিকা ও ইসলামি হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকার সমন্বয় করা হয়। পরবর্তীতে এটি ‘বঙ্গাব্দ’ (বাংলা বছর) নামে পরিচিতি পায়। মূলত, কৃষকদের সাথে রাজকার্যের অর্থনৈতিক সম্পর্কের সংকট নিরসনের জন্যই বাঙলা পঞ্জিকার জন্ম এবং এর সাথে সাম্প্রদায়িকতার কোন সংযোগ নেই।
আকবরের আগেও বাংলায় স্থানীয় হিন্দু রাজারা (যেমন- সেন বংশ) সৌর পঞ্জিকা ব্যবহার করতেন, যা ‘শকাব্দ’ নামে পরিচিত ছিল। আকবরের নতুন পঞ্জিকা এই ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে কৃষি ও ঋতুভিত্তিক হিসাব নিকাশের সুবিধা নেয়। বাংলা সনের শুরু বৈশাখ মাস (এপ্রিল-মে) থেকে, যা ফসল তোলার পর নতুন অর্থবছরের সূচনা নির্দেশ করে। এ সময় কৃষকরা জমির খাজনা পরিশোধ করতেন। প্রাথমিকভাবে পহেলা বৈশাখ ছিল একটি অর্থনৈতিক উৎসব, যেখানে জমিদাররা কৃষকদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন এবং নতুন হালখাতা (হিসাবের বই) খোলা হতো। ব্রিটিশ আমলে জমিদারি প্রথার অবসানের পরও উৎসবটি লোকসংস্কৃতির অংশ হিসেবে টিকে থাকে।
গ্রাম এবং শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক পার্থক্য হচ্ছে গ্রামের উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রকৃতির অবদান অবিচ্ছেদ্য। যেহেতু কৃষকের উৎপাদনের সাথে পহেলা বৈশাখ ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কিত ফলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন মূলত গ্রামবাংলার ঐতিহ্যগত উপাদান। গ্রাম বাংলার উৎপাদনব্যবস্থার মতোই পহেলা বৈশাখের উদযাপনের ইতিহাসও প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত।
প্রভাতী আয়োজনঃ
ঘর সাজানো- সকালে বাড়িঘর পরিষ্কার করে আঁকা হয় আল্পনা। চালের গুঁড়ো দিয়ে ফুল, মাছ, লোকজ ডিজাইন ইত্যাদি নকশা তৈরি করা হয়। নতুন জামাকাপড়- গৃহস্থ পরিবারের সদস্যরা নতুন কাপড় পরেন।
খাদ্যরুচি- গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পোলাও মাংস এবং এজাতীয় অন্যান্য খাদ্য রান্না করা হয়। মিষ্টান্নের মধ্যে থাকে গুড়ের পায়েস, চিড়া-মুড়ি। এছাড়াও অমঙ্গল দূর করার প্রথা হিসাবে নিম, করল্লা, পাটশাক জাতীয় তিক্ত স্বাদের কিছু খাওয়া হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানঃ
মেলা- গ্রামের মাঠে বা নদীর পাড়ে বসে বৈশাখী মেলা। এখানে মাটির পুতুল, বাঁশের বাদ্য, কাঠের খেলনা ও অন্যান্য কুটিরশিল্প পণ্যের পসরা সাজে।
লোকসংগীত ও নৃত্য- বাউল, ভাটিয়ালি, জারি-সারি গান গাওয়া হয়। নাচের মধ্যে থাকে “লাঠিখেলা”, “ঝুমুর নাচ” প্রভৃতি।
পুতুলনাচ ও যাত্রাপালা- ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ বা যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়।
নৌকাবাইচ- নদীসংলগ্ন গ্রামগুলোতে বৈশাখী নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়, যা উৎসবকে করে তোলে প্রাণবন্ত।
কৃষি ও সামাজিক রীতিঃ
হালখাতা- কৃষকরা মহাজনের কাছে পুরনো দেনা শোধ করে নতুন খাতা খোলেন। এদিন লেনদেনে মিষ্টি বিতরণের রেওয়াজ আছে। গবাদি পশুর সাজ- কৃষকরা গরু-মহিষের গায়ে রঙ-তুলি দিয়ে সাজায়, কৃষি যন্ত্রপাতিগুলো মেরামত করে নতুন করা হয়।
সম্প্রীতি- পারিবারিক কলহ মিটিয়ে নতুন বছর শুরু করা হয়। আত্মীয়-পড়শির বাড়িতে মিষ্টি বিনিময় হয়।
বিংশ শতাব্দিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অন্যান্য বুদ্ধিজীবীরা পহেলা বৈশাখকে বাংলা সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় করেন। রবীন্দ্রনাথের ‘হালখাতা উৎসব’ শান্তিনিকেতনে পালিত হতো, যা পরে সর্বজনীন রূপ পায়। আধুনিক যুগে, ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি ক্যালেন্ডার সংস্কার করে বৈশাখের সূচনা ১৪ এপ্রিল নির্ধারণ করে, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে ১৫ এপ্রিল পালিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবসায়ীরা এই দিনে “হালখাতা” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন হিসাব শুরু করেন এবং পুরনো ঋণ মিটমাট করেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ” গানটি উৎসবের প্রাণবন্ত অংশ। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্বপাকিস্তানের উপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রয়োগ করা হয় রবীন্দ্রনাথকে লক্ষ্যবস্তু করে। এর প্রতিবাদে সদ্যপ্রয়াত গুণিজন সানজিদা খাতুন ও অন্যান্য বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণ বর্ষবরণে রমনার বটমূলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আয়োজন প্রচলন করেন যা এখনও চলমান আছে ইতিহাসের দায়বদ্ধতা থেকে। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদের দুঃশাসনের প্রতিবাদে ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগে “মঙ্গল শোভাযাত্রা” প্রবর্তিত হয়, যা ২০১৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়। আর এভাবে বাংলা নববর্ষ বা বর্ষবরণ উৎসবের বিভিন্ন আয়োজন এদেশের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিজের অবদান রেখে এসেছে। আর সেই কারনে স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী অপশক্তিগুলোর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয় বর্ষবরণ উৎসব বহুমাত্রিকভাবে। একদিকে যেমন রমনার বটমূলে বোমা হামলা চালায় স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, অন্যদিকে স্বৈরাচার বিরোধী পদক্ষেপ মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ধর্মের মুখোমুখি করানো হয় ইচ্ছাকৃতভাবে, তাছাড়াও বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনামলে পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটে যেন পহেলা বৈশাখে সর্বজনীন অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করা যায়। ফলে গুণীজন সনজীদা খাতুনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যখন শোক জানানো হয় না তখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ অভিমুখিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় জনগণের সামনে। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ বা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও স্থানীয় শ্রেণিসংগ্রামকে ব্যাহত করা। ফলে এটাই স্পষ্ট হয় যে, জাতিগত ঐক্য বিনষ্ট করতে এবং যেহেতু বিভক্ত জাতি মানেই দুর্বল জাতি তাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে পহেলা বৈশাখের ওপর আঘাত ও যাবতীয় আক্রমণ মূলত এই জাতিকে বিভক্ত ও শেকড়চ্যুত করা সাম্রাজ্যবাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। তাছাড়াও বিভিন্ন কর্পোরেট স্পন্সরশিপ দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন আয়োজনের কারনে পহেলা বৈশাখ তার গুণগত, চরিত্রগত ও পরিচয়গত বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে বিচ্যুত হচ্ছে যা গুপ্তঘাতকের মতো অগ্রসর নিওলিবারেলিজমের আগ্রাসনকেই বিস্তৃত করছে। গ্রাম্য জনগণের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস পান্তাভাতকে শহুরে উৎসবের অংশ করা হয়েছে মধ্যবিত্তীয় আত্মপরিচয়হীন প্রদর্শনবাদিতার চর্চা থেকে, এছাড়াও মুনাফার লক্ষ্যে কর্পোরেট পুঁজিবাদ উৎসব কেন্দ্রিক পণ্যের ভোক্তা সৃষ্টি করছে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে যা বর্ষবরণের মূল ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করছে জনগণকে। এসব বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হয়ে বাঙালির প্রাণের উৎসবকে তার নিজস্ব লোকজ চরিত্র ফিরিয়ে না দেয়া গেলে এবং পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদিতার প্রসারের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও জোটবদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ না গড়া গেলে জাতিগত ঐক্য এবং পরবর্তীতে জাতিগত অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
বর্ষবরণ ছিল গ্রামের উৎসব, একে শহুরে আয়োজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পরবর্তীতে পহেলা বৈশাখ হয়ে উঠলো বাঙ্গালীর আত্মপরিচয়ের প্রধান উপাদান। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকশ্রেণীর বিরুদ্ধে প্রধানতম সাংস্কৃতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছিলো পহেলা বৈশাখ এবং বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শোষকশ্রেণির পতন হয় এবং বাঙালির এই ঐক্যবদ্ধ থাকার চর্চা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এরপরে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটাতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে পহেলা বৈশাখের উৎসবের সাংস্কৃতিক গুরুত্বের পাশাপাশি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বও কোন অংশেই কম নয়। ফলে বাংলা বর্ষবরণের আয়োজনকে বিকৃত, বাধাগ্রস্ত করে বিলুপ্ত করতে চাইবেই বিদেশী শোষকগোষ্ঠী এবং তাদের পোষ্য দেশীয় শোষকশ্রেণির তল্পিবাহকেরা। তাই শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও পহেলা বৈশাখের গুরুত্ব অপরিসীম। রাজনৈতিকভাবে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণের পক্ষ-বিপক্ষই অনেকাংশে নির্ধারণ করে দেয় শ্রেণি প্রতিনিধিত্বকে।
যারা পহেলা বৈশাখকে ধর্মের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে আনতে চায় তারা কি জানে না যে পারস্যসহ আরবের বিভিন্ন দেশে তারাও তাদের নববর্ষ উৎসব পালন করে, যার নাম নওরোজ? সেখানে যদি সমস্যা না হয় তবে যেই বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আছে তাদের এখানে সমস্যা কেন হবে তাও এতদিন পরে? যারা পহেলা বৈশাখকে ‘বিধর্মী’’ উৎসব বলে বাঙ্গালী জাতিকে তার পরিচয়ের উৎসব থেকে বিচ্যুত করতে চায় তারা কি জানে না যে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিমের দেশ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার নাম ‘গারুদা এয়ারলাইন্স’ যা মূলত হিন্দু পুরাণের গরুড় পাখির নামে? ইন্দোনেশিয়া যেহেতু একসময় হিন্দু অধ্যুষিত দেশ ছিল তাই তারা তাদের প্রাচীন ইতিহাসকে ধারণ করে তাদের রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্সের নাম এমনভাবেই রেখেছে। ইন্দোনেশিয়ার সমস্যা না হলে আমাদের কেন হবে? অর্থাৎ এটাই স্পষ্ট যে পহেলা বৈশাখ যে সাম্প্রদায়িক লক্ষ্যবস্তু সেটা দেশবিরোধী লক্ষ্যনো উদ্দেশ্য থেকেই। বর্তমান বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনেকটাই স্তিমিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাবে, আর শহরে কর্পোরেটদের নিওলিবারেলিজম আগ্রাসনে বর্ষবরণ উৎসব কলুষিত আর পাশাপাশি আরো বহুমাত্রিক হামলা চলমান আছেই। তাদের সকলের এক অভিন্ন লক্ষ্য আর তা হচ্ছে শোষণব্যবস্থা বাধাহীনভাবে চলমান রাখতে শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত শোষিত মেহনতি জনগোষ্ঠী যেন তার ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রধান শক্তিশালী হাতিয়ার থেকে বিচ্যুত হয়। ফলে পহেলা বৈশাখের আয়োজন এবং এর পক্ষ বিপক্ষ সকল শক্তিকে শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্যায়ন করে বিপ্লবী শ্রেণিসংগ্রামের শত্রুমিত্র নির্ধারণ করে সমাজ বদলের সংগ্রামকে সাফল্যের দিকে বেগবান করা যাবে।
এককথায়, বাংলা নববর্ষের ইতিহাস কৃষি, প্রশাসন ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। এটি শুধু একটি উৎসব নয়, বরং বাংলার জনগণের ঐক্য ও আবহমান ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রকাশ।
লেখক : সদস্য, সিপিবি, ঢাকা উত্তর কমিটি