বাঁওড় ইজারা বাতিল ও জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

বাঁওড় জেলেদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ। এসময় ভুক্তভোগী জেলেরা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন
একতা প্রতিবেদক : বাঁওড় জলমহালসমূহের ইজারা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করে জেলেদের ন্যায়সংগত মালিকানার স্বীকৃতি দিয়ে সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানা নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে ভুক্তভোগী মৎস্যজীবী জেলেরা। ৪ দফা দাবিতে গত ১২ মার্চ দুপুরে রাজধানীর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে বাংলাদেশ বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলনের ব্যানারে ডাকা কর্মসূচিতে সারাদেশের বাঁওড় অঞ্চলের মৎস্যজীবী নারী-পুরুষরা অংশ নেন। এসময় জেলেরা, মৎস্যজীবীদের অনুকূলে ও জাতীয় স্বার্থে জলমহাল ব্যবস্থাপনা আইন সংশোধন; জাতীয় বাঁওড় উন্নয়ন বোর্ড, স্বতন্ত্র বাঁওড় জলমহাল নীতিমালা ও বাঁওড় জেলেদের প্রান্তিক শ্রমিক হিসাবে নিজস্ব সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার; বাঁওড় জলমহালে মাছ চাষে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের অর্থায়নে ও জেলেদের সাথে ন্যায্য উৎপাদনের অংশীদারিত্ব চুক্তি; বাঁওড় উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় প্রকৃত মৎস্যজীবীদের শুমারি, তালিকাবদ্ধ ও মৎস্যজীবী জেলে কার্ড প্রদান; বাঁওড় জেলেদের রেশনের এর ব্যবস্থা; বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি না করে বাঁওড় জলাশয়ে মাছের প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলা, বাঁওড় জেলেদের উন্নত জীবন-জীবিকা-কর্মসংস্থানের নিরাপদ পরিবেশসহ ষাটোর্ধদের পেনশনের দাবি জানান। বাংলাদেশ বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলনের আহ্বায়ক বাঁওড় জেলে নির্মল হালদারের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কৃষকনেতা লাকী আক্তারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি ডাক্তার ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)’র কোষাধ্যক্ষ কাজী রুহুল আমিন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ, বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলনের উপদেষ্টা বাঁওড় জেলে নিত্য হালদার, যুগ্ম আহ্বায়ক বাঁওড় জেলে বাসুদেব বিশ্বাস প্রমুখ। এসময় স্মারকলিপি পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব সুজন বিপ্লব। সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকাস্থ বাঁওড় আন্দোলনের নেতা সাজ্জাদ হোসেন, মফিজুর রহমান নান্নু, আবু তোয়াব অপু প্রমুখ। আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাঁওড় এখন জেলেদের অনুকূলে নেই। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপ ও প্রজাসত্ত্ব আইনে বাঁওড় জলমহাল খাসখতিয়ানভুক্তির ফলে প্রথাগত অধিকার ও মালিকানা থেকে বঞ্চিত বাঁওড় জেলেগোষ্ঠী। ৫ আগস্ট ২০২৪, গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট সরকার উচ্ছেদ ও বৈষম্যহীনতার স্লোগানের বিজয়ে গঠিত সরকার দায়িত্ব নেয়ায় ভুক্তভোগী মৎস্যজীবীরা আবার নতুন আশায় বুক বাঁধছে। নতুন করে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনের বার্তা নিয়ে সরকারের কাছে আর্জি, দেশব্যাপী বিশেষত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো বাঁওড় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর কবল থেকে রাষ্ট্রের সম্ভাবনাময় সম্পদ বাঁওড়গুলোকে উদ্ধার করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের ন্যাসয়সঙ্গত ও প্রথাগত মালিকানার ভিত্তিতে অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানে ‘জাল যার, জলা তার’ নীতির আলোকে ৬টি বাঁওড়ে ৩০ হাজার ও সমগ্র বাঁওড়পাড়ের হাজার-হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করবেন। উদ্ভূত সংকট সমাধানে আমাদের সুনির্দিষ্ট ৪ দফা দাবিনামার বাস্তবায়ন চাই। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘জাল যার, জলা তার’ নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে ‘ইজারা যার, জলমহাল তার’ এবং আরো নির্মম বাস্তবতা ‘টাকা যার, বাঁওড় ইজারা তার’। বাঁওড় ইজারা বাতিল করে জেলেদের প্রথাগত ও ন্যায়সঙ্গত মালিকানার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির যৌক্তিকতা ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় রেখে ২০২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে জেলেরা সংগঠিত হয়ে লড়ছে! তাদের লড়াইয়ের কথা কে না জানে? সরকারের সর্বোচ্চ কর্তাদের বরাবর স্মারকলিপি পেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির সংবাদ সর্বমহল বিদিত। দেশজুড়ে থাকা বাঁওড় জলাভূমিজ মৎস্যজীবী জেলে জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা সুরক্ষা ও ইনসাফ কায়েমে সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে দাবিদাওয়া পেশ ও কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের বদৌলতে বিষয়টা সকলে অবগত হয়েছে। বাঁওড় সম্পর্কিত বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সেইসব জেলেদের আলোচ্য বিষয়ে সত্যিকার অর্থে স্থায়ী সমাধানের লক্ষে সারাদেশে কয়টি বাঁওড় আছে, তা তালিকায় নথিভুক্তিকরণ, বাঁওড় পাড়ের আদিবাসিন্দা জেলে সম্প্রদায়ের মাছ ধরার অধিকার সংরক্ষণ, বাঁওড়ের প্রকৃত মৎস্যজীবী জেলে সনাক্তকরণ, বাঁওড় জেলে সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানার সদস্য অন্তর্ভুক্তকরণ, ইজারা বাতিল করে সামাজিক মালিকানায় পরিচালনে পৃথক বাঁওড় জলমহাল নীতিমালা প্রনয়ণ ও স্বতন্ত্রভাবে জাতীয় বাঁওড় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। ‘একটি বাঁওড়, একটি সমবায় সমিতি’ গঠনের বিধিমালা নির্দিষ্টকরণ ও বাঁওড়কেন্দ্রীক একাধিক সমবায় সমিতি গঠন না করার বিধান চালু করতে হবে। এইসব পদক্ষেপের বাস্তবায়নে যথাযথ রাষ্ট্রীয় ভূমিকা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। প্রচলিত ইজারা বাতিল করে বাঁওড় জলমহালে প্রকৃত মৎস্যজীবী জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক মালিকানা ও স্বার্থ সংরক্ষণে জলমহাল নীতিমালা বাস্তবায়নে অবিলম্বে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানানা বাঁওড় জেলেরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করে স্মারকলিপি পেশ করেন নেতৃবৃন্দ। এসময় বর্তমান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সংগঠনের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..