‘সত্যের অপলাপ’

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
কিছুদিন আগে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে একতার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল- ‘আলামত ভাল না’। এরপর আরও প্রায় তিন সপ্তাহ অতিক্রম হয়েছে। এরই মধ্যে সরকার তার মেয়াদকাল প্রায় সাত মাস পূর্ণ করে ফেলেছে। তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতির কতোটা উন্নতি হয়েছে? আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের একটি বিবৃতির দিকে চোখ রাখতে পারি। সেখানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে যে কথা বলা হয়েছে তা খুব বেশি আশা সঞ্চার করে না। বাম গণতান্ত্রিক জোট বলেছে- দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, নির্যাতন, খুন, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মব সন্ত্রাস জনগণের জানমালের নিরাপত্তাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার চরম দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব ঘটনার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। কিন্তু সরকার কি এর দায়দায়িত্ব নিয়েছে? নেয়নি। বরং উল্টোটা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “আমি তো হিসাব নিচ্ছি। অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই হয়েছে।” অথচ তার কয়েকদিন আগেই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে যে, এর মধ্যেই দেশে গণপিটুনি বেড়েছে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বাংলাদেশে গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে নিহত হয়েছে ২১ জন। বাংলাদেশ অপরাধপ্রবণ দেশ। অপরাধ হঠাৎ করেই এখান থেকে যাবে না। এই সত্য জেনেও আগের রাজনৈতিক সরকারগুলোর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, বাস্তবতাকে অস্বীকার করার প্রবণতা। মানুষ ভেবেছিল, এই সরকারের প্রধান হয়ত সেটা অন্তত করবেন না। কিন্তু তিনি সেটাই করলেন। মানুষ একইসঙ্গে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ভয়াবহ ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা, একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল তুলতে গিয়ে শিশু ধর্ষণ, নারীদের লাঞ্ছনা করাসহ সারা দেশে নারী নিগ্রহের ঘটনা জনমনে নিরাপত্তাহীনতা ও ভীতি তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের একজন গুণী সাহিত্যক প্রশ্ন তুলেছেন, “যারা মাজার ভেঙেছে, শহীদ মিনার ভেঙেছে, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙেছে, বাউল উৎসব পণ্ড করেছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে, মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করেছে, প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের কতলের ঘোষণা দিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার হতে দেখেছেন?” দেশে ‘মব সন্ত্রাস’ এখন এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেটি যে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তার একটি উদাহরণ না দিলেই নয়। সম্প্রতি হাওরাঞ্চলে জলমহাল লুটের ঘটনা ঘটছে। চারটি-পাঁচটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ঘোষণা দিয়ে সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া জলমহাল লুট করছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি সেনাবাহিনী গিয়ে কিছু করতে পারছে না। কার্যত তারা অসহায় হয়ে ফিরে আসছে। এসব ঘটনা দেখে হাওরের লোকজন বলছিলেন, তারা তাদের জীবনে কোনোদিন এ ধরনের ঘটনা দেখেননি। খোদ প্রশাসন তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলছে, এরকম চলতে থাকলে আগামী দিনে আর কেউ জলমহাল ইজারা নিতে আসবে না। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে। এতকিছুর পরেও সরকার যদি বলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি; সেটা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু না। সিপিবি ও বাম গণতান্ত্রিক জোট ঠিক সেই কথাটাই বলেছে। এই সরকার অন্য সরকারগুলোর মতই ‘সত্যের অপলাপে’ নেমে পড়েছে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..