আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নারীমুক্তির লড়াই শোষিত বঞ্চিত মানুষের সংগ্রাম

লক্ষ্মী চক্রবর্তী

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
সারাবিশ্বের নারীদের মতোই আমাদের দেশের নারী সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ পালন করে থাকে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের ইতিহাস। সমাজ বিকাশের সভ্যতার ক্রমবিকাশে এর ইতিহাস এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের অংশ হিসেবে বিবেচিত বিষয়। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে সারাবিশ্বে এই দিনটি উদযাপিত হয়। নারী শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে ১৮৫৭ সালে শুরু হয় শ্রমিক নারীদের আন্দোলন। এই লড়াইয়ের ফসল হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ঐ সময়কালে ১৮৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সূঁচ কারখানায় নারী শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং শ্রমঘণ্টা হ্রাসের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্কের শ্রমজীবী নারীরা চূড়ান্ত বিক্ষোভ-আন্দোলন নারীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সার্থকতার দিকে অগ্রসর হয়। এর ফলশ্রুতিতে সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ ও শ্রমিক সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করে। ১৯৪৭ সালে এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ডেনমার্কে দ্বিতীয় সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে ১৯১০ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ফ্লোরা জেটকিন এর প্রস্তাব অনুসারে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বীকৃতি লাভ করে। সারা বিশ্বজুড়ে নারীরা বহুযুগের প্রচলিত ধারায় নানা শোষণ-বৈষম্য-বঞ্চনা-নির্যাতনের সম্মুখীন। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারীরা মুক্তির আন্দোলনের অন্বেষায় আন্দোলনকে বিকশিত করছে। এই আন্দোলনের স্রোতধারায় শুধু নারীরা নয়, প্রগতিশীল পুরুষেরা নারীদের সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে নারী নির্যাতন নানাভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফতোয়াবাজী, ধর্ষণ, তালাক, যৌতৃক, এসিড নিক্ষেপ, নারী পাচার, যৌন নিপীড়ন অনবরত চলছে। নারীরা তাদের নিজগৃহে নির্যাতিত হচ্ছে। শ্রমজীবী নারীরা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতিত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। আরেকটা তৎপরতা দেখছি নারীদের সকল কর্মকাণ্ডে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয়গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমগুলোতেও নারীর অমর্যাদাকর ও অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি দৃশ্যমান হচ্ছে। সুদীর্ঘকালব্যাপী আমরা দেখছি সম্পত্তিতে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা, সন্তানের অভিভাবকত্ব, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক আইন, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাসহ ‘সিডও’ দলিলের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, নারী উন্নয়ন নীতিমালার বাস্তবায়ন জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারীর আসন সংখ্যাবৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ও সকল পর্যায়ে ৩৩% নারী রাখার বিধান কার্যকর করা। স্থানীয় সরকারের নারী প্রতিনিধিদের কার্যবিধি সুস্পষ্ট করা, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি বিদ্যমান সকল বৈষম্যমূলক আইন সংস্কার, গৃহস্থালী কাজে নারীর শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে কমিউনিস্ট পার্টি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছে। দেশে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে নানাভাবে নারীদের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে, প্রকল্প বা প্রজেক্টের মাধ্যমে নারীমুক্তির কাজের ধারায় অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। কোনভাবেই এই পথে নারীমুক্তি সম্ভব নয়। সকল প্রকার শোষণ-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত মানবমুক্তির সংগ্রামের সাথে নারীমুক্তির সংগ্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নারীমুক্তির সংগ্রাম শুধু নারীর জন্য নয় এই সংগ্রাম শোষিত, বঞ্চিত সকল মানুষের সংগ্রাম। গণতন্ত্র, প্রগতি ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে অগ্রসর করার প্রক্রিয়ায় নারীমুক্তি সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে। আমাদের সমাজ সংসারে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে অনেকটা দূরত্ব রয়েছে। তাই পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রসর করতে হবে। নারীমুক্তির লড়াইয়ে বাধাগ্রস্থদের প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অগ্রসর হতে হবে শ্রেণি-লিঙ্গ-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত মানুষদের। ১৯৭২-এর সংবিধানে নারীদের সম-অধিকারের কথা উল্লেখ আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো নারীমুক্তির বিষয়টি এখনও বাস্তবায়িত হয় নাই। আমরা সাধারণত নিম্নলিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়িত করতে চাই: ১. কর্মক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্য দূর করতে হবে।; ২. ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু করতে হবে।; ৩. সংবিধান ও সিডও সনদের আলোকে নারীমুক্তির লক্ষ্যে নারী নীতিমালার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।; ৪. সর্বক্ষেত্রে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।; ৫. কর্মক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।; ৬. সংবিধান এবং সিডও সনদের আলোকে প্রকৃত নারীমুক্তির লক্ষ্যে নারী উন্নয়ন নীতিমালার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।; ৭. সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন চাই এবং ২ ও ১৬/১ (গ) ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে।; ৮. গৃহস্থালী কাজে নারীর শ্রমের মর্যাদাকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে।; ৯. পাহাড়ে সমতলে সর্বত্র নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্লোগান হিসেবে বিবেচিত করি। আসুন, আমরা নারী-পুরুষ সকলে মিলে আমাদের বাংলাদেশকে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সমাজের অন্ধত্ব দূর করে আলোকিত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে এগিয়ে নি। জয় হোক মেহনতি মানুষের।
প্রথম পাতা
সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও ঊধ্বমুখি দাম অনেক পণ্যে
শ্রেণিদৃষ্টিতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চিত্তভূমি
খুন-ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের আহ্বান
ধর্ষণ-নিপীড়নকারী ও মব সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার কর
বাঁওড় ইজারা বাতিল ও জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ
কমরেড লাকী আক্তারের বিরুদ্ধে মব সন্ত্রাস বন্ধের আহ্বান সিপিবির
গণতন্ত্র রক্ষায় বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যের বিকল্প নাই
‘ছায়া’
হামলা-মামলার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে বামজোটের বিক্ষোভ সমাবেশ
দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ব্যর্থ হচ্ছে
নারীর জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে সংগ্রাম জোরদার করুন

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..