বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মুক্তিভবনে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম [ ছবি: রতন কুমার দাস ]একতা প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘ব্যবস্থা বদল ছাড়া দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তি নেই। এর জন্য সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে সমাজ বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে। সমাজ বিপ্লব ছাড়া শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না’।
সিপিবি দীর্ঘদিন ধরে দেশ ও মানুষের মুক্তির আন্দোলন অগ্রসর করতে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কর্মসূচি সামনে রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে এখনো ভোটের গণতন্ত্রের স্থায়ী ধারা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ও ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে গণতন্ত্র ও বৈষম্য মুক্তির কথা সামনে আসলেও, এই ধারায় দেশকে অগ্রসর করার লেশমাত্র লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরনো ব্যবস্থা বহাল রেখেই পথ চলছে। তাইতো বাজার ব্যবস্থা সংস্কারে হাত পর্যন্ত দিতে পারেনি। এজন্য বাজার সিন্ডিকেট ভাঙেনি নিত্যপণ্যের দামের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই।
বক্তারা বলেন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসেনি। জানমালের নিরাপত্তাহীনতা চলছে। ‘মব সন্ত্রাস’, দখলদারিত্ব দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ এ অবস্থার অবসানে অন্তত ভোটের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা আহ্বান জানান।
সিপিবি নেতারা বলেন, বিগত দিনের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলমান আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে নানা শক্তি সমবেত হয়েছিল। ছাত্র জনতা শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণে অভূতপূর্বক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। এই গণঅভ্যুত্থানের পর এখন নানা শক্তি তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। এই অবস্থায় গণ-অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেতন দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনকারী শক্তিসমূহের সাথে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও

এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে বসেনি। বরং সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ চলছে বলেই দেশবাসীর সামনে প্রতিয়মান হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এবারের আন্দোলনের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী বক্তব্য সামনে চলে এসেছে। দেশের প্রকৃত বৈষম্য হচ্ছে ধন বৈষম্য-শ্রেণি বৈষম্য। এই বৈষম্যের অবসান ঘটানো ছাড়া দেশ ও মানুষের মুক্তি অর্জন করা যাবে না। আর এজন্যই চাই দুর্বৃত্তায়িত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন।
পুঁজিবাদী শোষণ শাসন ব্যবস্থা বহাল রেখে বৈষম্যমুলক সমাজ করা যাবে না মন্তব্য করে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশের উত্থান ছাড়া একই ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য রাজনীতিতে নানা মোড়ক তৈরি করা হলেও তা দিয়ে জনগণের মুক্তি আসবে না। এজন্য এবারের গণ-অভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বামপন্থার পথ ধরেই ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে।
গত ৬ মার্চ বিকেল ৪ টায় রাজধানীর মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, কেন্দ্রীয় সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানবেন্দ্র দেব।
এছাড়াও, সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিপিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৮টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও সারাদেশে পার্টির পতাকা উত্তোলন, সমাবেশ-র্যা লি-মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম জাতীয় পতাকা ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া সিপিবি কার্যালয়ের নিচে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ৭৭ বছরে যেসব নেতা-কর্মী পার্টির পতাকা সমুন্নত রাখতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি নেতারা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।