‘ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধের আদেশ অযৌক্তিক ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী’

শুভ চন্দ্র শীল

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে রুল জারি করেন। রিটের শুনানি শেষে গত ১৯ নভেম্বর বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টকে আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের এই আাদেশের পরে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা আন্দোলনে নেমে পড়েন। দফায় দফায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করেন অটোরিকশা শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। গত ২১ নভেম্বর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পরবর্তীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের আন্দোলনের ফলে ঢাকা থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ। ২১ নভেম্বর সকাল ৯ টা থেকেই রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, নাখালপাড়া, বসিলা, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ি এলাকায় সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন অটোরিকশা শ্রমিকরা। তাদের এই আন্দোলনের ফলে এসব এলাকার প্রধান সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। আগারগাঁওয়ে চার রাস্তার মোড়ে শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে তারা দাবি জানান, যদি ঢাকার রাস্তায় অটোরিকশা চালানোর অনুমতি না দেওয়া হয় তবে তারা একত্রিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশ-সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২০ নভেম্বর রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ খাঁ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, হাইকোর্টের এই আদেশ দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবিক বোধ বিবর্জিত। আমরা ধারণা করি মহামান্য আদালতকে ব্যাটারিচালিত যানবাহন সম্পর্কে সঠিক বাস্তবতা ও পরিস্থিতি অবগত না করায় আদালত ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধের মতো আদেশ দিয়েছেন। ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের এই আদেশ বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরীতে ১২ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। যা দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরও বলেন, হাইকোর্টের উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে উক্ত মামলার বিবাদীপক্ষ সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করতে হবে। এবং মহামান্য হাইকোর্টকে ব্যাটারিচালিত যানবাহন সম্পর্কে সঠিক বাস্তবতা ও পরিস্থিতি অবগত করতে হবে। ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে আমরা অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার ও বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স এবং যৌক্তিক রুট পারমিট প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। হাইকোর্টের এই সিন্ধান্তকে অযৌক্তিক ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী বলে দাবি করেন রাজধানীর পল্টন-শাহবাগ এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক আকবর আলী। তিনি সাপ্তাহিক একতাকে বলেন, ‘যারা রিকশাকে ক্ষতিকর যান বলছেন তারা শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী চিন্তাচেতনা করছেন। কারণ ঢাকায় রিকশা নয় প্রাইভেট গাড়ি যানজট সৃষ্টি করে। দুর্ঘটনাও তারা ঘটায়। বর্তমানে দেশ ডিজিটাল- রাস্তায় যেমন কার, বাস, ট্রাক চলে তেমনি ইঞ্চিনচালিত রিকশাও চলবে। আমরা সরকার আর কোর্টের এই বড়লোকি আদেশ মানি না।’ এ বিষয়ে আন্দোলনরত শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা সাপ্তাহিক একতাকে জানান, ‘দুর্ঘটনার দায়ে ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইককে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, কিন্তু তাদের দুর্ঘটনার কি কোন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার মোটরসাইকেল। তাই বলে কি মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে? মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান নয়। তিনি নীতিমালা চুড়ান্ত ও আধুনিকায়ন করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদান, প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, রিকশাসহ স্বল্পগতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য পৃথক বা সার্ভিস রোড নির্মাণ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান’। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অটোরিকশার ভুলদিকগুলো আমাদেরও নজরে এসেছে। তবে হুট করে অটোরিকশা বন্ধের সিন্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। অবশ্যই আগে রিকশাচালকদের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন বা স্ট্যান্ডার্ড প্রশিক্ষণ দিয়ে রাস্তায় নামানো উচিত ছিল। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি অনুমোদন নিয়ে মোটর ব্যাটারি চীন থেকে এনে অটোরিকশা বিক্রি করছেন। তাহলে আগে আমদানি বন্ধ না করে রাস্তায় নামা এতগুলো মানুষের রিকশা বন্ধ করা শ্রমিকস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন। এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আফসানা করিম নামের এক ছাত্রী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় নিহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজপথে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..