হাতবদলে সবজির দাম বাড়ে ৩০-৫০ টাকা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে সীতাকুণ্ডে পাহাড়ি এলাকাসহ সমতল কৃষিজমির আইলে শিমের চাষ হয়। ৬০ দিনের মাথায় অর্থাৎ মে-জুন মাস থেকে শিম উত্তোলন শুরু করেন কৃষকরা। সীতাকুণ্ডের এই উৎপাদিত শিম দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। গতবছরের মতো এবারও আগাম রূপবান শিমের চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন বাজারে আগাম উৎপাদিত রূপবান শিম বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা ধরে। এ শিম বিক্রি হবে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত। গত ২৫ এপ্রিল সীতাকুণ্ড বাজারসহ আশপাশের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, রূপবান শিম প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন দোকানদাররা। ভরা মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে শীতকালীন শিম কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। অবশ্য গ্রীষ্মকালীন শিম যে সময়ে বাজারে আসে, সেটা মৌসুম নয়। পাহাড়ি ভূমিতে যত দূর চোখ যায় বিস্তর জায়গাজুড়ে ফুটে আছে আগাম রূপবান শিমের ফুল। কোথাও থোকা থোকা ঝুলছে বেগুনি রঙের শিম। আবার কোথাও থোকা থেকে সদ্য ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের কেউ কেউ বাজারে বিক্রির জন্য শিম তুলছেন। আবার কেউ শিমের লতা পরিচর্যায় ব্যস্ত। সারাদেশের মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলা শিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এ এলাকার শিম সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হাওয়ায় দিন দিন এর চাষ বেড়ে চলেছে। সীতাকুণ্ডের শীতকালীন শিম বিশেষ করে ছুরি, লইট্টা, বাঁটা শিমের চাহিদা বেশি। এ চিত্র দেখা গেছে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা পাহাড়ে। রূপবান জাতের এই শিম গ্রীষ্মকালে লাগানো হয় বলে একে গ্রীষ্মকালীন শিম বলা হয়। কৃষকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন শিম ওঠার শুরুতে তারা এবার প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। এই রূপবান শিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৭০ টাকা পর্যন্ত। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাবিব উল্ল্যাহ বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে পাহাড়ের টিলায় শিম চাষ হয়। দুর্গম এলাকায় হাওয়ায় এর উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। পাহাড়ের শিম চাষ করার অন্যতম কারণ হলো, বর্ষায় সমতলে অতি বৃষ্টির কারণে পানি জমে শিমের লতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু পাহাড়ে পানি জমে থাকে না। ফলে শিমগাছ নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকে না। পাহাড়ে এ শিমের চাষ বাড়তে থাকায় অনাবাদি জমির পরিমাণও কমছে। তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে অনেক শিম চারা নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক। এরপরও উৎপাদিত রূপবান শিম বাজারে ভালো দামে বিক্রি করাতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। কৃষকরা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমের ফলন শীতকালীন শিমের চেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে পাওয়া যায়। ফলে এই শিমের লাভও বেশি। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সীতাকুণ্ডে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ হয়েছিল ২৫ হেক্টর জমিতে। পরের বছরও একই পরিমাণ জমিতে শিমের চাষ হয়েছিল। চলতি বছর তা বেড়ে ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের আবাদ হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, কুমিরা ইউনিয়নের রেলওয়ের পুরোনো টিবি হাসপাতাল এলাকা থেকে পূর্বদিকে অন্তত তিনটি পাহাড়ে ঢালু অংশে শিমের চাষ হয়েছে। পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচের দিকে ঢালু অংশে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে খুঁটি তৈরি করে মাচা তৈরি করা হয়েছে। এরপর প্রতিটি খুঁটির গোড়ায় তিনটি করে শিম গাছ লাগানো হয়েছে। সেগুলো থেকে এখন বেগুনি রঙের শিম ধরছে। প্রতিটি মাচায় এখন বেগুনি ফুলে ভরা। একদিকে শিম তুলছেন কৃষক, অন্যদিকে ফুল আসছে। শুক্রবার কথা হয় কুমিরা পাহাড়ে কৃষক বরূন বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাহাড়ে তিনি ২৫০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। চার দিন পরপর ১৫০ থেকে ১৬০ কেজি শিম তুলে বাজারে এসে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। শিম চাষে তার এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছে প্রায় সাত লাখ টাকা। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আরও তিন মাস শিম বিক্রি করতে পারবেন। তবে বৃষ্টি হলে ফুল ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, গত বছর শিম বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। কুমিরা এলাকায় কথা হয় আরেক কৃষক আবুল কালামের সঙ্গে; তিনি এক একর জমিতে শিম চাষ করেছেন। এর আগে তিনি ৫০ শতক জমিতে শিমের আবাদ করেছিলেন। গত বছর ভালো দাম পেয়েছেন বলে এবার আরও ৫০ শতক জমিতে চাষ করেছেন তিনি। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সীতাকুণ্ডে গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিম চাষ করেছেন প্রায় ৩০০ কৃষক। কুমিরায় বেশির ভাগ পাহাড়ি এলাকায় রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া বাঁশবাড়িয়া, সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা ও সীতাকুণ্ড পৌর সদরেও রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে পানি–সংকটের কারণে রূপবান শিমের উৎপাদন কমতে থাকে। অন্যদিকে নভেম্বরের শেষের দিকে শীতকালীন শিম বাজারে আসতে শুরু করে। শুক্রবার সীতাকুণ্ড বাজারে কথা হয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফজলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, রূপবাস শিম প্রতি কেজি ২৪০ টাকায় দরে বিক্রি করছি। কৃষক থেকে ২০০ টাকার বেশি দরে কিনতে হয়। একই বাজারে কথা হয় চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কেজিপ্রতি গড়ে ১৮০ টাকা করে কিনেছেন। এখন সেগুলো চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা বিক্রি করবেন। জোগানের ওপর নির্ভর করে তাঁরা বাজারের দর ঠিক করেন।
শেষের পাতা
‘অক্টোবর বিপ্লব অফুরন্ত বিপ্লবী প্রেরণার উৎস’
লোক-দেখানো বিশেষ উদ্যোগ নয়, বাজার ব্যবস্থাপনা জরুরি
‘জ্বালানি অপরাধীদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার কর’
সকল শ্রমিক হত্যার বিচার ও ১৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি
‘বন্দর পরিচালনায় দেশি-বিদেশি মাফিয়া চক্রের হাতে ইজারা দেওয়া বন্ধ কর’
রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি বামেদের
ক্ষেতমজুর সমিতি রংপুর জেলা কমিটির সভা
বাঁওড় ইজারা বাতিল ও মৎস্যজীবীদের মালিকানার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ ৪ দফা দাবি
খাস জলাশয়-পুকুর-বিল চায় ক্ষেতমজুররা
সিপিবি খুলনা মহানগর কমিটির সভা
অসিত বরণ বিশ্বাসের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার কর
৭ দিনের সংবাদ...
মধুখালীতে কৃষক সমিতির ইউনিয়ন সম্মেলন

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..