১২০ পোশাকশ্রমিক সাময়িক বরখাস্ত, এখনো বন্ধ কিছু কারখানা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় অনন্ত গার্মেন্টস ও অনন্ত স্পোর্টস ওয়্যার কারখানার ১২০ জন শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে এমন এক নোটিশ কারখানার মূল ফটকে টাঙিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, এই ১২০ শ্রমিককে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কারখানাটির শ্রমিকরা। শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে আশুলিয়ার অনন্ত গ্রুপের অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এবং অনন্ত স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষ ১২০ জন শ্রমিককে বরখাস্ত করেছে বলে জানা যায়। এ সময় অবস্থানকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- অন্তর্বর্তী সরকার, শ্রমিক প্রতিনিধি ও মালিকপক্ষের বৈঠক শেষে মালিকপক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়ে আজ থেকে কারখানা খোলার রাখার ঘোষণা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সকালে নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ দিতে আসেন শ্রমিকরা। কিন্তু এ সময় কারখানার মূল ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান এবং কারখানায় প্রবেশে বাধা দেন। অনন্ত স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেডের সাময়িক বরখাস্ত শ্রমিক লিটন ইসলাম হৃদয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘সরকার ও মালিকপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় আমরা খুশি মনে সকালে কাজে যোগ দিতে এসেছিলাম। কিন্তু গেইট থেকে আমাদের কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি। ১২০ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের তালিকা কারখানার গেইটে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা শুনেছি শ্রম উপদেষ্টা বলেছেন, আন্দোলনের কারণে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা হবে না, শ্রমিকদের ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে না। অন্যকোনো কারখানায়ও কাউকে চাকুরিচ্যুত করা হয়নি, তাহলে আমাদের কেন সাময়িক বরখাস্ত করে নোটিশ দেওয়া হলো?,’ বলেন তিনি। প্রীতি নামে আরেক শ্রমিক জানান, আমি কোনো ঝামেলা করিনি কারখানায়, তারপরও আমাকে কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমরা সকাল থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের দাবি যেহেতু মালিকপক্ষ ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছে, আমরা এতে খুশি, আমাদের পুনর্বহাল করা হোক, আমরা খুশি মনে কাজ করতে চাই। এদিকে কারখানাটির মূল ফটকে গিয়ে দেখা যায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রমিক অসন্তোষ চলাকালে কারখানার ভেতরে ভাঙচুর, লুটপাট, উচ্ছৃঙ্খল, কাজ না করা, স্টাফদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করাসহ আইন বহির্ভূত কাজে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ এনে অনন্ত গ্রুপের অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এবং অনন্ত স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড এর মোট ১২০ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কারখানার গেইটে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, গেইটে বরখাস্তকৃত শ্রমিকদের নামের তালিকাসহ নোটিশ আছে, আমরা এ বিষয়ে এরচেয়ে বেশি জানিনা। এ সময় কারখানার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী জানান, এখানে এই মুহূর্তে কথা বলার মত কেউ নেই, নিচে কেউ আসলে জানাবো। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘যেহেতু গতকাল ত্রিপাক্ষিক একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিককে ছাটাই করা হবে না- সেখানে এভাবে ১২০ জনকে বরখাস্তের অর্থ কি? তাহলে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে লাভ কী হলো? কয়েকদিন আগে দেখেছি পার্ল গার্মেন্টস ৭৫ জন শ্রমিককে ছাটাই করেছে; হাডানায় ৮৫ জন, শিনশিনে ৮১ জন, আজ অনন্তে ১২০ জনকে ছাটাই করা হলো। আমার তো মনে হচ্ছে মালিকরাই এখন শান্তি চাচ্ছেন না। আমাদের দাবি, যত শ্রমিককে ছাটাই করা হয়েছে, অনতিবিলম্বে সবাইকে কাজে পুনর্বহাল করা হোক; অন্যথায় এর জেরে যদি শিল্পে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে মালিকপক্ষকেই এর দায় নিতে হবে।’ শ্রমিকদের ১৮টি ‘ন্যায্য দাবি’ মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি হুঁশিয়ার দিয়েছেন, এরপর কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে সরকার তা বরদাশত করবে না। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে সম্প্রতি দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান। শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘মালিক পক্ষ, শ্রমিক পক্ষ এবং সরকার পক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হচ্ছে, দীর্ঘ এক মাস ধরে আলোচনা, দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে যে মূল দাবি ১৮টা, আমরা আইডেন্টিফাই করেছি। সেই ১৮ দাবির বিষয়ে মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক পক্ষ মিলে একটা সমাধানে পৌঁছানো গেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই দাবিগুলো সমাধানের দিকে আমরা আগাব। যেগুলো সমাধান সম্ভব, সেগুলো আজকে ইমিডিয়েটলি সমাধান করে দিয়েছি এবং যেগুলো দুই পক্ষের বৈঠকের মধ্যে সমাধান হবে, সেগুলো শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হবে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকবে। এদিকে, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বন্ধ রয়েছে ১৯টি তৈরি পোশাক কারখানা। তবে অন্য কারখানাগুলোতে উৎপাদন শুরু করেছে শ্রমিকরা, যৌথ বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শিল্প পুলিশ জানায়, সর্বশেষ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অর্ধশতাধিক কারখানা বন্ধ থাকলেও বিজিএমইএ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ায় আজ থেকে অনেক কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে এখনও ১৯টিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বনিবনা না হওয়ায় উৎপাদন শুরু হয়নি। এর আগে বকেয়া বেতন ও পোশাক কারখানা চালুর দাবিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। অবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় কারখানায় যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..