“চিন্তাই কর্মের উদ্দেশ্য। যে চিন্তাকে কর্মের দিকে প্রেরণা দেয় না, সে পণ্ডশ্রম। প্রবঞ্চনা মাত্র। অতএব চিন্তার সেবক যদি আমরা হয়ে থাকি, তবে কর্মেরও সেবক আমাদের হতে হবে”। উক্তিটি কমরেড লেনিনের। রাজবন্দী হিসেবে শহীদ সাবের জেলখানায় থাকাকালে তাঁর ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। শহীদ সাবের’র সময় সমাজ বিপ্লবের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, মুসলিম লীগের দোর্দণ্ড প্রতাপ, সমাজ বিপ্লবীদের ধরে ধরে জেল গারদে বন্দি করা হত। শহীদ সাবেরকেও বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত থাকায় জেলে পাঠানো হয়েছিল। শহীদ সাবের পযর্টন রাজধানী কক্সবাজারের সূর্যসন্তান।
তাঁর বাবা চকরিয়ার হারবাং নিবাসী সরকারি উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছালামত উল্লাহ। মাতা ঈদগার জমিদার কন্যা শফিকা খাতুন। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও মাতুতালয়ে ১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ছালামত উল্লাহকে সরকারি চাকরিসূত্রে ঘুরে বেড়াতে হত বিভিন্ন জায়গায়। কখনো দার্জিলিং, কখনো কলকাতা। ফলে সাবের বড় হতে লাগলেন নানা বাড়িতেই মায়ের স্নেহছায়ায়। ছোটবেলা থেকেই শান্ত-স্বভাবের ছিলেন তিনি। দামাল ছেলের দুরন্তপনা তাঁর মধ্যে ছিল না। ছেলেবেলায় ঘুড়ি, লাটাই, গুলতি আর ডাংগুলি খেলতেন। তবে এইসব খেলার বাইরেও খুঁজে পেতে চাইতেন অন্যকিছু। ঈদগাঁর প্রাইমারি স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু। নানাবাড়ির পাশেই ছিল মায়ের নিজস্ব একটি বাড়ি। সেই বাড়িতেই শৈশবের মনোরম দিনগুলো কাটিয়েছেন সাবের। তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র।
মা-বাবা শখ করে নাম রেখেছিলেন একেএম শহীদুল্লাহ। সেই নাম বাদ দিয়ে তিনি লেখালেখির জগতে শহীদ সাবের নামে পরিচিত। তিনি ঈদগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাবার কর্মসূত্রে কলকাতায় চলে যান। এ সময়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘ছন্দশিখা’ নামক পত্রিকা সম্পাদনায় জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি সমাজ বিপ্লবীদের সংগঠন মুকুল ফৌজের সাথেও জড়িত ছিলেন। সাহিত্যিক সাবের’র সৃজনশীল বিকাশের প্রথম সিঁড়ি এখান থেকেই বলা যায়। প্রাক-প্রস্তুতি পর্বে কলকাতা হেয়ার স্কুলে অধ্যয়নকালীন সময়ে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। জড়িত হয়ে পড়েন পার্ক সার্কাসের তালক্লার্ক লেনের ‘ছোটদের আসর’ এবং ‘কিশোর সংঘ’ নামে কিশোর সংগঠনের সাথে। কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস রোডে ছোটদের আসরের একটি ছোট গ্রন্থাগার ছিল। এ গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ছিলেন শহীদ সাবের। পড়ালেখার পাশাপাশি এই কর্মকে তিনি বেছে নেন। সাথে সাথে চিন্তার সাথেও পরিচিত হন। ছোটদের আসরের গ্রন্থাগারের অন্য অনেক বইয়ের সাথে ‘ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি’ প্রভৃতি মুক্তচিন্তার বইয়ের পাঠ গ্রহণ করেন। আর এইদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধুম্রজাল। এ যুদ্ধের পরিবেশে কিশোর সাবেরের মন-মানস গড়ে উঠতে থাকে এবং এই সময়েই শহীদ সাবের রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠেন। এ সময়ে আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় শহীদ সাবের’র লেখা ‘বিষকন্যা’ ছাপিয়ে সবার দৃষ্টি কাঁড়েন। এই পত্রিকার সাহিত্য পাতা দেখতেন জহুরী সম্পাদক কবি আহসান হাবীব। তিনি শহীদ সাবের’র গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পর বলেন- “অমন সপ্রতিভ ছেলে আমার চোখে পড়ে নি। বয়সের তুলনায় তাঁর মানসিক পরিপক্কতা ছিল অনেক বেশি।”
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর নিজ দেশ বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয়। নিজ জেলা চট্টগ্রামে ফিরে এসে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুলে অধ্যয়নকালীন সময়ে বামপন্থি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়লে মুসলিম লীগের রোষানলে পড়েন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব বাংলার অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ফেড়ারেশন’র এক কর্মীসভায় বক্তৃতারত অবস্থায় আলী আকসাজ ও সুভাষ চৌধুরীর সাথে শহীদ সাবেরকেও রাজবন্দী হিসেবে চট্টগ্রাম জেলে পাঠানো হয়। শহীদ সাবের বিদ্রোহের আগুন বুকে ধারণ করে কাটাতে থাকেন জেলজীবন। চট্টগ্রাম জেল থেকেই তিনি আই.এ পাস করেন এবং চট্টগ্রাম জেলে বসেই বন্দী জীবনের কাহিনী নিয়ে লেখেন তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘আরেক দুনিয়া থেকে’। ‘নিরাপত্তা বন্দী’ বলে স্বনামে লেখা ছাপানো সম্ভব ছিল না। তাই জামিল হোসেন ছদ্মনামে গোপনে চট্টগ্রাম জেল হয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত তৎকালীন সময়ে নামকরা ‘নতুন সাহিত্য’র চৈত্র ১৩৫৭ সংখ্যায় ছাপানো হয়। লেখাটি নিয়ে কলকাতায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি ও পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়। এরপর থেকেই কথাসাহিত্যিক শহীদ সাবের’র বলিষ্ঠ সাহিত্য যাত্রা শুরু হয়। কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এ লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে পত্রিকার সম্পাদককে চিঠি লিখে এ নতুন সাহিত্য প্রতিভাকে স্বাগত জানান। এটি পরে ১৯৫১ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। রচনাটি ছিল রাজবন্দীর রোজনামচা জাতীয়।
১৯৫৪ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আজিমপুর কলোনিতে বাবার সংসারে চলে আসেন। বাবা ছালামত উল্লাহ সেসময় চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। ফলে সাংসারিক দায়-দায়িত্বের চাপে পড়ে শহীদ সাবের আজিমপুর ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে যোগ দেন সহকারী শিক্ষক পদে। সেখানে কথাশিল্পী মাহমুদুল হক ছিলেন তাঁর ছাত্র। ওই সময়েই জগন্নাথ কলেজের নৈশ শাখায় স্নাতক ক্লাসে ভর্তি হন তিনি। ১৯৫৫ সালে স্নাতক পাস করে যোগ দেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে ‘দৈনিক সংবাদে’। একই সঙ্গে সংবাদের ‘সাহিত্য পাতা’ও সম্পাদনা করতেন তিনি। তখন তাঁর লিখিত সম্পাদকীয় খুবই আকর্ষণীয় হতো- তাতে প্রকাশ পেত তীক্ষ্ম বুদ্ধি ও শাণিত মননের দীপ্তি। তাতে উপস্থাপনা ও প্রকাশভঙ্গির মুন্সিয়ানাও ছিল লক্ষণীয়। সংবাদে কর্মরত থাকা অবস্থাতেই সাবের প্রথমে সেন্ট্রাল সুপরিয়র সার্ভিসের (সিএসএস) অন্তর্গত সিএসপি পরীক্ষায় বসেন; লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়ও হন উত্তীর্ণ। চোখের সমস্যার অজুহাতে নিশ্চিত সরকারি চাকরি থেকে তাঁকে করা হয় বঞ্চিত। পরে ফেডারেল ইনফরমেশন সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে পুরো পাকিস্তানে প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু তিনি ছিলেন জেলখাটা কমিউনিস্ট, পুলিশ-রিপোর্ট ছিল না সন্তোষজনক। এ কারণে তাঁকে নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি। পরে তখনকার পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি বিস্তারিত জানালে তিনি এ ব্যাপারে ওভাররুল করে, নিয়োগপত্র প্রদানের সরকারি নির্দেশের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের ৮ অক্টোবর তিনি নির্দেশ দেয়ার পূর্বেই, সেই রাতেই মার্শাল ল’ জারি করে জেনারেল আইয়ুব খান দখল করেন ক্ষমতা। তাতে সাবেরের পরিবারের আকাঙ্ক্ষা এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের গণতন্ত্র একই সঙ্গে ভেস্তে যায়। শহীদ সাবেরের লক্ষ্য, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি ছিল সমন্বয়হীন, যা তাঁকে হতাশ করে তুলেছিল। যে সংশ্লিষ্টতা থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য শহীদ সাবেরকে বিনা বিচারে চার বছর আটক করে রাখা হয়েছিল, সেই একই অপরাধে পরবর্তীতে সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের সুযোগ থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়। তদুপরি রাষ্ট্র তাঁকে শাস্তি দিচ্ছিল। জেলে পাঠিয়ে শাস্তি দিয়েছে; শাস্তি দিয়েছে বেকার রেখে এবং শেষ পর্যন্ত শাস্তি দিল তাঁকে হত্যা করে। ৩১ মার্চ, ১৯৭১। কাকডাকা ভোর। ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করে ছুটছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক। মাঝে মাঝে গুলির শব্দ, চিৎকার- তারপরই নিঃস্তব্ধতা। একসময় কয়েকটি ট্যাঙ্ক ছুটে এল তৎকালীন প্রগতিশীল পত্রিকা ‘দৈনিক সংবাদ’ অফিসের দিকে। এসেই ঠা ঠা ছুড়তে লাগল গুলি। তারপর আগুন। দাউদাউ করা আগুনে দগ্ধীভূত হয় ‘সংবাদ অফিস আর ভেতরে থাকা একজন কমিউনিস্ট ও মানবতাবাদী মানুষ। সেই নিষ্ঠুর আগুনের লেলিহান শিখায় আর সবকিছুর সঙ্গে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান সেই একজন মানুষ, সম্ভাবনাময় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, শহীদ সাবের।
তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের মধ্যে ‘আবেগ’ (১৯৫৪), এক টুকরো মেঘ (১৯৫৫), ‘ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান’ (১৯৫৮); অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে ‘পুশকিনের ইসকাপনের বিবি’ (১৯৫৮), গোগলের পাগলের ডাইরী (১৯৫৮) ও ক্যাথরিন ওয়েন্স পিয়ার’র ‘কালো মেয়ের স্বপ্ন’ (১৯৫৮) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ‘এক টুকরো মেঘ’ গল্প গ্রন্থে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার গ্রামীণ আদালতের স্বরূপ ও চিত্রকর্ষের চিত্র তুলে ধরেছেন। সেলিনা হোসেন বলেন- “এক টুকরো মেঘ’ ছোটগল্প সংকলনে আদিগন্ত শিল্প চাতুর্যের চুম্বক নেই বটে, কিন্তু প্রাণ আছে। যে প্রাণ সবাইকে উজ্জীবিত করে তোলে।” (সেলিনা হোসেন- ১৯৮১ ঃ ৫৯)। ‘ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান’ ছোটগল্পটি ৯টি ছোটগল্পের একটি সরস সংকলন। গল্পগুলোতে আছে নির্মল কৌতুক রসের সঙ্গে একটুখানি নীতিকথার স্পর্শ-বাস্তব রূঢ় ছবি-নিত্যদিনের না পাওয়ার বেদনা তাঁকে কুরে কুরে জ্বালাতন করেছে। গল্পের উপাদানকে ব্যবহৃত করে নীতিকথা তাঁর প্রাণরসকে হরণ করেনি।
শহীদ সাবেরের সাহিত্য জীবনের তৃতীয় বা শেষ পর্বটি তাঁর জীবনের বাস্তব করুণ পরিণতি। এ সময়ে তিনি মূলত অসংখ্য কবিতা লিখেছেন, কিন্তু কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি তাঁর জীবদ্দশায়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিক্ষিপ্তভাবে। বাংলা একাডেমী, মুহাম্মদ ইদরিস আলী, মাফরোহা চৌধুরী কিছু কিছু কবিতা সংগ্রহ করে তাদের সংকলনে স্থান দিয়েছেন। আর কিছু কবিতা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ ও ‘দৈনিক সংবাদ’ অফিস আগুনে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাওয়ায় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সেলিনা হোসেন সম্পাদিত ‘শহীদ সাহেব রচনাবলী’তে শহীদ সাবেরের ২১টি এবং মাফরোহা চৌধুরীর ‘সঙ্গ প্রসঙ্গ’ (১৯৯১) সংকলনে ২টি কবিতা রয়েছে। তাঁর কবিতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃৃষ্টি করেছেন ‘শোকার্ত মায়ের প্রতি’ কবিতাটি। এ কবিতাটি চট্টগ্রাম জেলে বসেই লিখেছেন। এ কবিতায় তৎকালীন রাজনৈতিক সহিংসতার বিবরণ শব্দ শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এতে সাঁওতাল নেত্রী ইলামিত্রের গ্রেফতার ও জেল অভ্যন্তরে অমানবিক নির্যাতনের কাহিনী চিত্রিত হয়েছে।
এ কবিতাটি পূর্ব বাংলার কবিতার ভাণ্ডারে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কারণ এই কবিতার আবেদন সর্বজনীন। চিরকালের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠে এই কবিতা বিপ্লবীদের মাঝে নতুন প্রেরণা ও উদ্দীপনা যোগাবে নিঃসন্দেহে। তাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁর বন্ধু রণেশ দাশগুপ্ত ‘অসমাপ্ত শিল্পীর জীবনের কথা’ প্রবন্ধে বলেন- শিল্পীর সৃষ্টির প্রয়োজনের দিক দিয়ে এই অনুভবের অবকাশ নিশ্চয় উৎসাহজনক। কিন্তু মনের আগুন চাপা রাখার বিপদ আছে। একটা স্বাতন্ত্রী অনেক সময় জ্বালা সহ্য করতে পারে না। অনর্থে ঘটে যায়। শহীদ সাবেরের বেলায়ও তেমন ঘটেছিল। ১৯৫০-১৯৫৮ পর্যন্ত প্রথম জীবনের ক’টা বছর তিনি লিখতে পেরেছিলেন। তারপর হতে কোন একটা সময় বিবাগী হয়ে গেছেন। হালছাড়া নৌকার মত যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন অনির্দিষ্ট লক্ষ্যে ভেসে চলেছিলেন। মাঝে মাঝে অবশ্য সম্বিত ফিরে আসতো এবং তখনই কবিতা লিখে ফেলতেন।
মানসিক বৈকল্যের মধ্যেও তিনি অসংখ্য সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবিতা লিখেছেন এবং সম্পাদকীয় কলাম লিখেছেন। এসময়ে কবিতার পাশাপাশি রণেশ দাশগুপ্ত ও সত্যেন সেনের অনুসরণে গানও লিখেছেন তিনি। এ রকম একটি গান ‘ওরে মাঝি, নৌকা ছেড়ে দে’। গানটি গোলাম মোহাম্মদ ইদু সংগৃহীত এবং শেখ লুৎফর রহমানের সুরে বেতার ও বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ এবং প্রতিভাবান কথাশিল্পী সৃজনশীল সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমী পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৭২, ছোটগল্প), কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার-২০০৩ (মরণোত্তর), কক্সবাজার পদক-২০০৪ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। ২০০৮ সালে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে তাঁর নিজ জেলা কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, হুমায়ুন ছিদ্দিকী ও মনির ইউসুফ’র তত্ত্বাবধানে ‘শহীদ সাবের পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।