ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠীর সম্পর্ক
আসিফ নিপপন
আধুনিক সমাজে ফ্যাসিবাদ : একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা
ফ্যাসিবাদ একটি জটিল রাজনৈতিক দর্শন, যা একক ব্যক্তির চিন্তাধারার ফসল নয়। বরং এটি বিভিন্ন দার্শনিক, রাজনীতিবিদ এবং সমাজতাত্ত্বিকের ধারণার সংমিশ্রণ। ফ্যাসিবাদের মূল ধারণাগুলো নিৎশে, মাকিয়াভেলি, হেগেল, এবং অন্যান্য দার্শনিকের লেখা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ইতালীয় সমাজবিজ্ঞানী ভিলফ্রেদো পারেতোর লেখাগুলোতে ফ্যাসিবাদের অনেক মূল ধারণা পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ভূগোলবিদ চার্লস ম্যাককিন্ডারের ‘জর্জোগ্রাফিক্যাল পিভট থিওরি’ ফ্যাসিবাদী বিস্তারবাদী চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে।
ফ্যাসিস্ট শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ fasces থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে এক বান্ডিল রডের মাঝখানে একটা কুঠার। এই প্রতীকটি ঐতিহাসিকভাবে রোমান ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যবহার করত। মুসোলিনি তার নিজের আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ফ্যাসেস গ্রহণ করেছিলেন, সেখান থেকে “ফ্যাসিবাদী” শব্দটি রাজনীতিতে চলে এসেছে। ফ্যাসিবাদ একটি বহুমুখী ধারণা, যা সময় এবং স্থান অনুযায়ী বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। ফ্যাসিবাদ একটি জাতীয়তাবাদী, একনায়কতান্ত্রিক এবং সামরিকবাদী আদর্শ, যা ব্যক্তির চেয়ে রাষ্ট্রকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্যাসিবাদকে এক ধরনের অন্ধকার অধ্যায় হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, আজকের বিশ্বে ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই লড়াইয়ে সকলকে একত্রিত হতে হবে। জ্ঞানের প্রসার, সহিষ্ণুতা ও একতা, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এর বিরুদ্ধ লড়াই শাণিত করতে হয়। মনে রাখতে হবে যে ফ্যাসিবাদ মানবতার জন্য একটি বড় হুমকি।
সাম্রাজ্যবাদ একটি প্রাচীন উদ্বেগ : সাম্রাজ্যবাদ হলো একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র অন্য দুর্বল রাষ্ট্রকে জয় করে নিজের অধীনে আনে এবং তাদের ওপর নানারূপে শাসন করে। এই শাসনের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ।
মিশর, রোম, মঙ্গোল সাম্রাজ্য ইত্যাদি প্রাচীনকালের উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্যের উদাহরণ। আধুনিক সাম্রাজ্য: ১৬ শতক থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত ইউরোপীয় শক্তিগুলি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ফরাসি সাম্রাজ্য, স্প্যানিশ সাম্রাজ্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ফ্যাসিজম একটি রাজনৈতিক আদর্শ, যখন সাম্রাজ্যবাদ একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা। ইতিহাসে নাজি জার্মানি, ফ্যাসিস্ট ইতালি ইত্যাদি।
সাম্রাজ্যবাদ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ফরাসি সাম্রাজ্য, স্প্যানিশ সাম্রাজ্য এবং আধুনা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি।
ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী, ফ্যাসিজম এবং সাম্রাজ্যবাদ- এই তিনটি ধারণা ভিন্ন মনে হলেও, তাদের মধ্যে কয়েকটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই তিনটি ধারণাই নিজেদের শুদ্ধ এবং অন্যদের অশুদ্ধ বলে মনে করে। ধর্মীয় মৌলবাদীরা নিজেদের ধর্মকে সর্বোচ্চ এবং অন্য ধর্মকে ভুল বলে মনে করে। ফ্যাসিজমেও নিজের জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয় এবং অন্য জাতিকে হেয় করা হয়। সাম্রাজ্যবাদেও শাসক জাতি বা দেশকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
এই তিনটি ধারণাই সহিংসতাকে সমর্থন করে এবং অন্য মত অসহিষ্ণু হয়। ধর্মীয় মৌলবাদীরা নিজেদের বিশ্বাসের বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাতে পারে। ফ্যাসিজমেও বিরোধীদের দমন করার জন্য সহিংসতা ব্যবহার করা হয়। সাম্রাজ্যবাদেও শাসনাধীন অঞ্চলে বিদ্রোহ দমন করার জন্য সহিংসতা ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে এই তিনটি ধারণাতেই একজন শক্তিশালী নেতাকে সমর্থন করা হয় যিনি সব ক্ষমতা নিজের হাতে রাখে। ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীতে একজন ধর্মগুরু বা মৌলবী সব সিদ্ধান্ত নেন। ফ্যাসিজমে একজন একনায়ক নেতা সব ক্ষমতা চালায়। সাম্রাজ্যবাদেও একজন শক্তিশালী নেতা সাম্রাজ্যের বিস্তারে নেতৃত্ব দেয়।
আবার এই তিনটি ধারণাই অন্যের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। ধর্মীয় মৌলবাদীরা অন্য ধর্মের মানুষকে নিজেদের ধর্মে রূপান্তরিত করতে চায়। ফ্যাসিজমে অন্য জাতিকে নিজের অধীনে আনতে চাওয়া হয়। সাম্রাজ্যবাদে অন্য দেশকে জয় করে তাদের ওপর শাসন করা হয়।
তবে ফ্যাসিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদদের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। ধর্মীয় মৌলবাদীরা মূলত ধর্মীয় শুদ্ধতা বজায় রাখতে চায়, ফ্যাসিজম একটি জাতিকে শক্তিশালী করতে তৎপর এবং সাম্রাজ্যবাদ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি অর্জন করতে। ধর্মীয় মৌলবাদ ধর্মের ওপর ভিত্তি করে, ফ্যাসিজম জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে এবং সাম্রাজ্যবাদ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে বিকশিত হয়। এরা একে অপরকে প্রভাবিত করে। যেমন– ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী গোষ্ঠী। ফ্যাসিবাদের জাতীয়তাবাদী উগ্রবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের শক্তি অর্জনের লক্ষ্যকে অনুসরণ করে। তারা নিজেদের ধর্মকে একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মতো দেখতে চায় এবং অন্য ধর্মের মানুষদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। ফ্যাসিজম ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলিকে তাদের জাতীয়তাবাদী উগ্রবাদকে আরও শক্তিশালী করতে এবং অন্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে উৎসাহিত করে। সাম্রাজ্যবাদ ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলিকে তাদের ধর্মকে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে।
ফ্যাসিবাদ, মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আধুনিক রাষ্ট্র গড়তে আমাদের যে ধারণাগুলি সামনে আনা দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো সাম্য। সাম্য মানে সবার জন্য সমান অধিকার, সুযোগ এবং সুবিধা। সাম্যের অন্যতম শর্ত ন্যায়, ন্যায় মানে সবার সাথে ন্যায্য আচরণ করা, কারো সাথে বৈষম্য না করা। এটি একটি আদর্শ যা সকল মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। সাম্য একটি সুন্দর আদর্শ। এটি একটি সমাজ গড়তে সাহায্য কওে, যেখানে সবাই সমান এবং সুখী। সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য সবার যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সাম্যভিত্তিক আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো সবার জন্য সমান অধিকার। এই রাষ্ট্রে সকল নাগরিককে আইনের সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। সকল নাগরিকের কাছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমান সুযোগ থাকবে। তাদের প্রতিভা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে উন্নতি করার সুযোগ থাকবে। এই রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার ব্যবস্থা সবার জন্য সহজলভ্য হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হবে না। সরকারের সকল ক্ষমতা জনগণের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকবে। জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার পরিচালনা করবেন। নাগরিকেরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ভোগ করবে। বিভিন্ন ধর্ম, জাতি ও বর্ণের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। সামাজিক নিরাপত্তা : সকল নাগরিকের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন, চিকিৎসা ইত্যাদি পূরণের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সকল নাগরিকের কাছে উচ্চমানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকবে। পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তবে সাম্যভিত্তিক আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের চ্যালেঞ্জ অনেক। শতাব্দি ধরে চলে আসা বৈষম্যের কারণে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সহজ নয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য সাম্যের পথে একটি বড় বাধা। সামাজিক বৈষম্য : জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে সামাজিক বৈষম্য সাম্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের স্বার্থ সাম্য প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশে সাম্যের অবস্থা একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয়। আমাদের সংবিধানে সবার জন্য সমান অধিকারের কথা বলা হলেও, বাস্তবে আমরা এখনো অনেক ধরনের বৈষম্যের সম্মুখীন হই।
বাংলাদেশে মূল দিকটি হলো দেশের সম্পদ কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় আর্থিক বৈষম্য খুব প্রকট। শহর ও গ্রামের মধ্যে, উচ্চবর্গ ও নিম্নবর্গের মধ্যে আয়ের ব্যবধান অনেক বেশি। লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে। নারীরা এখনো সমাজের অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছে। তাদের কাজের সুযোগ, বেতন এবং সামাজিক মর্যাদা পুরুষের তুলনায় কম। জাতিগত বৈষম্যও আছে। দেশের কিছু নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত। ধর্মীয় বৈষম্যও রয়েছে, যদিও সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে, তবুও ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে। শিক্ষাগত বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে, ধনী ও গরিবের মধ্যে শিক্ষার মানে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তীকালে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনামলে নানা ধরনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো এসময়ে সামাজিক অসন্তোষ। বিশেষ করে যারা পরিবর্তনের আশা করেছিল। আর এই অসন্তোষকে মৌলবাদীরা তাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে পড়তে পারে। এই অস্থিরতা মৌলবাদীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে যেমন আন্দোলন দানা বাঁধছে তা সামাল দিতে গিয়ে সরকার যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে মৌলবাদীরা তাদের ক্ষমতা বাড়াতে চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দাও আছে। অর্থনৈতিক মন্দা জনগণের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বাড়ায়, যা মৌলবাদীদের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। এসময়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধের ভুল ব্যাখ্যা করে, তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ও ঘৃণা সৃষ্টি করে। ফলে রাজনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হলে, মৌলবাদী গোষ্ঠী তাদের প্রভাব বাড়াতে পারে। এসব বিপদ প্রতিরোধোর অন্যতম পন্থা হলো মানুষকে মৌলবাদী চিন্তাধারার বিরুদ্ধে সচেতন করা এবং তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত করা। সামাজিক অসাম্য দূর করে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহনশীলতা বৃদ্ধি করা। স্বচ্ছ ও দক্ষ সরকার গঠন করে জনগণের আস্থা অর্জন করা। সুশাসনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
তাই সংকটকালে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। যে কোনো উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য নতুন সরকার, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে।
লেখক : সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, যশোর
Login to comment..