কেবল সংস্কার নয়, প্রয়োজন বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন
মিজানুর রহমান সেলিম
দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একটি বিস্ফোরণ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে চুরমার করে জনগণের মাঝে একটি স্বস্তি ও আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। জনগণের প্রত্যশা পূরণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোকে সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করার আগেই ১৯ আগস্ট হঠাৎ এক মেঘ বিস্ফোরণে প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে আসা ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভাসিয়ে নিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ফেনীসহ ১২টি জেলার ১০ লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫১ লাখ মানুষ বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং অর্ধশতাধিক মানুষ মারা যান। চরম মানবিক বিপর্যয়ে পড়া এসব মানুষদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসিত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার আরেকটি নতুন কাজের দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর পড়েছে। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে বন্যা সহায়তা তহবিলে জনসাধারণের দানের একটি অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। কমিউনিস্ট পার্টি ও অপরাপর বামপন্থি রাজনৈতিক দল, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও শ্রেণি পেশার সংগঠনসমূহ বিপুল উৎসাহে বন্যা তহবিল সংগ্রহে নেমেছেন। এক্ষেত্রে এখন প্রয়োজন বানভাসি মানুষের পাশে কমিউনিস্ট পার্টিসহ বামপন্থিদের তার সবটুকু শক্তি ও সাধ্য নিয়ে পাশে দাঁড়ানো। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের এ বিপদ হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু একইসাথে প্রয়োজন ছাত্র গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া আশাবাদ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোকে যতদ্রুত সম্ভব সংস্কার সাধন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
এ মুহূর্তে দেশের মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্বস্তি এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশাবাদের মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে। অনেকে আশা করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণতন্ত্র পুনর্গঠনের জন্য রাজনৈতিক সংস্কারে নেতৃত্ব দেবেন, এর মাধ্যমে তিনি অর্থনীতিকে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারবেন এবং অন্য কোনো স্বৈরশাসকের উত্থানকে রোধ করতে পারবেন। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোর একটি গণমুখী সংস্কার সাধনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। বামপন্থিরাও একটি বুর্জোয়া ব্যবস্থায় বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও বুর্জোয়া ব্যবস্থার মধ্যে জনগণের জন্য যেসব আইনি সুযোগ ও অধিকার রয়েছে তা প্রাপ্তির জন্য লড়াই করে। গত ১৫ বছর যাবৎ কমিউনিস্ট পার্টি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রের নিপীড়ন, বঞ্চনা ও দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। লড়াই করছে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখা ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে জনজীবনে স্বস্তি আনার জন্য। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মানুষের মধ্যে একটি মুক্ত সমাজের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাও জেগে উঠেছে। তাই অভ্যুত্থানের জাগরণ যেসব গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে, তাকে ধরে রেখে একটি সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমে কমিউনিস্ট-বামপন্থিদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের পথে অগ্রসর হওয়া জরুরি। একটি জাতীয় উজ্জীবন যখন সর্বস্তরের মানুষকে আশাবাদী করে তুলে, তখন শুধু স্বতঃস্ফূর্ততা দিয়ে সেই উজ্জীবন বেশিদিন ধরে রাখা যায় না। তাই এই উজ্জীবনের পিছনে বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে মুক্তির যে আকাঙ্ক্ষাটি সামনে চলে এসেছে, তা বর্তমান আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার গণ্ডির মধ্যে থেকে শুধুমাত্র রাষ্ট্রের সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করেই অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ, যে ব্যবস্থার মধ্যে ফ্যাসিবাদের বীজ রোপিত থাকে, শুধুমাত্র সংস্কার সাধনের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনাকে বাতিল করা যায় না, প্রয়োজন হয় দেশের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি প্রগতিমুখীন বিপ্লবী ধারার মৌলিক পরিবর্তন সাধন করা। যদিও রাষ্ট্রের সংস্কারের বাইরে আর কোনো বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়নি। তিনি রাষ্ট্রের সংস্কার সাধনের জন্যই আপ্রাণ চেষ্টা করবেন বলে জনগণের বিশ্বাস এবং এটাও তাঁর বা তাঁর সরকারের কাছে কম চ্যালেঞ্জের নয়। রাষ্ট্রের মূল মূল ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কার করে ক্ষমতা প্রয়োগ ও ভোগের সক্ষমতা জনগণের হাতে যতটুকু আনা যায় সেটুকুই এই মুহূর্তের প্রত্যাশা, যা দেশের জন্য কম কিছু নয়। কারণ, আমাদের দেশে তো বটেই, গোটা বিশ্বের ইতিহাসে এই অভ্যুত্থান নানা কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন অভ্যুত্থানের উদাহরণও বিরল, যা একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামোর সকল দুর্গ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। বয়স, শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্গ নির্বিশেষে সব মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে এই অভ্যুত্থান হয়ে উঠেছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের শক্তি, প্রতিরোধ ও আকাঙ্ক্ষার রঙে রঙিন। এবারের আন্দোলনের ভাষা ও মর্মকে মূর্ত করে তুলতে আমাদের ডিজিটাল শিল্পীরা হাতে তুলে নিয়েছিলেন অনলাইন পোস্টার ও ফেস্টুনের মতো দারুণ এক অস্ত্র যা জুলাই অভ্যুত্থানের গণ-আকাঙ্ক্ষাকে নতুন প্রজন্মের কাছে অর্থবহ ও সহজবোধ্য করে তুলেছে। তাই কমিউনিস্ট-বামপন্থিদের এই আন্দোলনের ভাষা ও মর্মকে উপলব্দিতে নিয়ে জনগণের কাছে সহজবোধ্য করে কর্মসূচি হাজির করতে হবে, যে কর্মসূচিতে গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ, চৈতন্য ও গণ-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ভবিষ্যতে সবার জন্য সমতার দেশ গড়ার অঙ্গীকার ঘোষিত হয়। অর্থাৎ “এই দিন, দিন নয় আরো দিন আছে, এই দিনকে নিতে হবে সেই দিনের কাছে”।
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল দেশের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। শুধুমাত্র স্বতঃস্ফূর্ত জাতীয় উজ্জীবনের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে ইতিহাসে এরকম একটি উজ্জীবন অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। যা একটি জাতির জীবনে বারবার ঘটে না। তবে বয়স, শ্রেণি, পেশা ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের অংশগ্রহণ, এবারের গণ-অভ্যুত্থানের চালিকা শক্তি হলেও দেশের জনগণের বৃহত্তম অংশ কৃষক, শ্রমিক-ক্ষেতমজুর ও মেহনতি মানুষ তাঁদের শোষণমুক্তির সচেতন রাজনৈতিক জাগরণ, এই অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি না হওয়ায় এখনই একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের সামাজিক ভিত্তি তৈরি হয়নি, তবে এই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলবার যে আকাঙ্ক্ষা জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে, সে আকাঙ্ক্ষাকে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে সমাজের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্পষ্ট করে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনের সমস্যা-সংকটকে মূর্ত করে এটাকে লড়াইয়ের দাবি হিসেবে সামনে এনে বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগ্রাম গড়ে তোলা সম্ভব। এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতাই সমাজের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যাভিমুখী লড়াইয়ের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে।
সমাজের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কাজগুলো যেহেতু বিপ্লবী কর্তব্যের মধ্যে পড়ে সেহেতু এই কর্তব্য পালনে যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য পার্টির গণভিত্তি প্রসারিত করে পার্টিকে অবশ্যই গুণে, মানে, শৃঙ্খলায় ও নিষ্ঠায় উন্নত পার্টি হওয়ার অবিরাম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ সময়ে পার্টিকে এ যোগ্যতা অর্জন করেই পার্টিতে দীর্ঘদিন যাবৎ চলমান থাকা ভাত-কাপড়-জমি-কাজের স্লোগানকে সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও সাধারণ মানুষের ন্যায্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সংকট নিরসনের দাবিসমূহ আদায়ের লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রামকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। আমরা জানি পার্টিকে জনগণের মধ্যে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই এবং সে কাজের একমাত্র পথই হচ্ছে কৃষক-শ্রমিক-ক্ষেতমজুর গণসংগঠনসহ মেহনতি মানুষ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে লেগে পড়ে থাকা। দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি মৌলিক পরিবর্তনের জন্য শ্রমিক শ্রেণি ক্ষেতমজুর ও মেহনতি কৃষকের মধ্যে ঐক্য সংগঠন ও বিপ্লবী জাগরণ সৃষ্টি করে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের লড়াইয়ে এদের চালিকাশক্তিতে পরিণত করার কোনো বিকল্প নেই। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে পার্টির সামনে এই কর্তব্যটি পালন করাই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। কাজেই দেশবাসীর জন্য আশু জরুরি রাজনৈতিক কর্তব্য সম্পন্নের পাশাপাশি পার্টিকে কোন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দেশের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুরসহ নানা শ্রেণিপেশার মেহনতি মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে তা সহজ ও স্পষ্ট করে কর্মসূচি আকারে তুলে ধরতে হবে। দেশের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মূল ভিত্তি ঠিক রেখে কিভাবে মৌলিক সংস্কার সাধন করা হবে, তা পরিষ্কার করে জনসম্মুখে তুলে ধরা জরুরি। একই ভাবে দেশের অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতি সংস্থা ও সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর চাপিয়ে দেয়া ‘অবাধ খোলা বাজার অর্থনীতি’র ব্যবস্থার ফলে অর্থনীতিতে যে পরনির্ভরতা-উৎপাদনবিমুখ ফটকাবাজী প্রবনতা, আমলা মুৎসুুদ্দি লুটেরা পুঁজির যে অশুভ কর্তৃত্ব ও কালো টাকা নির্ভর অবাধ লুটপাটের ব্যবস্থা চলছে, তার বিলোপ সাধন করে এই ব্যবস্থার বিকল্পে কিভাবে একটি আত্মনির্ভরশীল উন্নয়নমুখী ধারায় জনগণের কল্যাণ ও জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্পসহ সর্বক্ষেত্রে উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ নিশ্চিত হবে তা কর্মসূচি আকারে অত্যন্ত সহজ-সরল বক্তব্য দিয়ে জনগণের সামনে হাজির করা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় খাতকে অর্থনীতির নিয়ামক খাত ধরে সমবায়ী খাত, ব্যক্তি খাত ও মিশ্র খাতের সুপরিকল্পিত ভূমিকা কীভাবে একচেটিয়া লুটেরা অর্থনীতির ধারাকে প্রতিরোধ করে একটি বৈষম্যহীন ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ধারা নিশ্চিত করবে তাও জনসমক্ষে পরিষ্কার কর্মসূচি হিসেবে আনা জরুরি। এছাড়াও আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সব কালো সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জোরেশোরে সামনে আনা উচিৎ।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও গ্রামীণ জীবনের আমূল বিপ্লবী পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থার বিপ্লবী পরিবর্তনের কর্মসূচি দেয়া এই মুহূর্তের জরুরি কর্তব্য “খোদ কৃষকের হাতে জমি ও সমবায়” এই নীতির ভিত্তিতে আমূল ভূমি সংস্কার করার দাবি ও অনুপস্থিত ভূমি মালিকানা বাতিল করে জমির সিলিং এক ফসলি ৫০ বিঘা এবং দুই ফসলি ৩০ বিঘা নির্ধারণ করে, খাস জমি, হাওর, বিল, জলমহলগুলোকে উৎপাদনশীল ব্যবহারে আনার লক্ষ্যে এসব সম্পদের মালিকানা দরিদ্র দুস্থ ভূমিহীন উৎপাদককের সমবায়ের হাতে ন্যস্ত করার দাবিতে এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, সব শ্রমজীবীর জন্য জাতীয় নিম্নতম মজুরি, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিশ্চিত করা, দরিদ্র জনগণের ওপর পরোক্ষ কর কমিয়ে এনে বিত্তবানদের ওপর বেশি কর আরোপের নীতি গ্রহণ, ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ন্যায্য দামে ফসল ক্রয় করে বাফার স্টক গড়ে তোলাসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য দূর কারার দাবিতে কমিউনিস্ট পার্টিকে লড়াই সংগ্রামের মাঠে থাকার বিকল্প নেই। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশ আজ সর্বগ্রাসী সংকটের হাত থেকে মুক্তি পাবে। মানুষের আশাবাদ ও দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিপ্লবী সংস্কার সাধনের উপযুক্ত সামাজিক শক্তির ভিত্তি সমার্থক নয়। কাজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতগুলো সংস্কার সাধন ও একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করলেই দেশের সর্বগ্রাসী সংকট থেকে মানুষের মুক্তি মেলা সম্ভব নয়। তাই সেই মুক্তির লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টিকেই দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি বিপ্লবী পরিবর্তনের প্রয়োজনে কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর ও মেহনতি মানুষের শোষণমুক্তির লক্ষ্যে তাঁদের শ্রেণির লড়াইয়ের পাশাপাশি এই পরিবর্তনের পক্ষের রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তি ও ব্যক্তির বৃহত্তম সমঝোতা ও ঐক্য গড়ে তোলা অনস্বীকার্য। এই লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পরিসরকে আরো বিস্তৃত করা প্রয়োজন। মনে রাখা প্রয়োজন আমাদের আছে সংগ্রামী ঐতিহ্য, আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সমগ্র জাতির ঐক্য, অপরিসীম ত্যাগ ও সংগ্রামের গৌরব গাঁথা। এবারেও জাতীয় উজ্জীবন যেভাবে মানুষকে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কর্তব্য সম্পন্ন কারার দায় আমাদের ওপর বর্তেছে। তাই আজ পুনরায় সমগ্র জাতির সব দেশপ্রেমিক জনগণ, শ্রমিক-কৃষক, মেহনতি শ্রেণি, স্তর ও ব্যক্তির সম্মিলিত প্রয়াস, শক্তি, সম্পদ, মেধা ও সমবেত সংগঠন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধনের লড়াইকে জোরদার করার লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে জেগে ওঠা স্বপ্নকে বিপ্লবী জাগরণে রূপান্তর করা সম্ভব।
লেখক: সভাপতি, বরিশাল জেলা কমিটি ও সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিবি
Login to comment..