মাফিয়াদের কাছ থেকে লুটের টাকা উদ্ধার করতে হবে

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
মাফিয়া চক্রের ভয়াল থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে দেশের আর্থিক খাত। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার- সর্বত্রই দেদারসে চলেছে লুটপাট। একেক সময় একেকটি চক্র সক্রিয় হয়ে দফায় দফায় লুটে নিয়েছে সাধারণ মানুষের কষ্টে উপার্জিত অর্থ। রাতের আঁধারে সিঁদ কেটে চুরি নয়, অনেকটা প্রকাশ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে সটকে পড়েছে লুটেরাগোষ্ঠী। প্রতিটি ক্ষেত্রে লুটপাটকারীদের চেহারা উন্মোচিত হলেও বলতে গেলে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। কারণ এদের প্রত্যেকেই ছিল ক্ষমতা কাঠামোর শক্তিশালী অংশীদার। হয় সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের লোক, না হয় দলের তহবিল যোগানদাতা। ফলে শাস্তির পরিবর্তে নানা কৌশলে লুটপাটের নতুন নতুন পথ তৈরি করে দিয়েছে সরকার। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে লুটপাটের মহোৎসবে মেতেছে ডাকাতের দল। জাতীয় অর্থনীতির হৃৎপি- বা হার্ট হলো আর্থিক খাত। হৃৎপি- যেমন রক্ত পরিশোধন করে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সরবরাহের মাধ্যমে মানবদেহকে সচল রাখে, তেমনি আর্থিক খাতও বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখে। হৃৎপিণ্ডে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক থাকলে যেমন শরীর ভালো থাকে তেমনি ব্যাংক খাত ভালো থাকলে অর্থনীতিও ভালো থাকে। কিন্তু গত দেড় দশকের সীমাহীন লুটপাট দেশের আর্থিক খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে দীর্ঘকাল ধরেই দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছিল। এই খাতকে সমস্যামুক্ত করতে ঋণ আদায়ে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি ছিল। তা না করে বিগত সরকার লুটপাটের বহুমুখী সুযোগ তৈরি করেছে। পুরনো ব্যাংকগুলোর দূর্বলতা দূর না করে নতুন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মূল যোগ্যতা ছিল দলীয় লোক হওয়া। মূলত অবৈধ উপায়ে আয় করা বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরির জন্য অনেকে ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েছেন। সরকারও এসব অর্থের উৎস জানতে চায়নি। কালো টাকায় ব্যাংকের মালিক হয়ে এদের অনেকে পুরো ব্যাংককেই গ্রাস করে ফেলে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের আর্থিক খাতে মাফিয়া চক্রের মূল হোতা ছিলেন সালমান এফ রহমান। ব্যাংক, পুঁজিবাজার, বন্ড মার্কেট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। একে একে ছয়টি ব্যাংক দখল করে লুটপাট চালিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এরকম আরও অনেক নজির আছে, যেখানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। নজরুল ইসলাম মজুমদার, নাফিস শরাফত, মহিউদ্দীন খান আলমগীর, আবদুল হাই বাচ্চুসহ সরকারের আশির্বাদপুষ্ট আরো অনেকে দেদারসে লুটে নিয়েছে ব্যাংকের টাকা। হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের নামে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হলেও তা আর ফেরত আসেনি। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। মাত্র দু’বছর আগে যেখানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা; সেখানে গত মার্চ মাস পর্যন্ত তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায়– যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সেই সাথে অবলোপনের নামে হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আরো প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ ঋণ অনাদায়ী থাকায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। যাদের কারণে দেশের আর্থিক খাত চরম দুরবস্থায় পড়েছে সেই লুটেরাদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তাদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে তাদের কাছ থেকে সব টাকা উদ্ধার করতে হবে। আগামীতে যেন এ ধরনের লুটপাট না হতে পারে সেজন্য কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে। এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে, ভবিষ্যতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন এ ধরনের লুটপাট আর না করতে পারে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..