জামায়াতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিবাদ উদীচীর

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত ২৮ আগস্ট সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাকতা করা হলো। বিবৃতিতে উদীচীর নেতৃবৃন্দ বলেন, যে অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন লাখো শহিদ, সম্ভ্রম হারিয়েছেন দুই লাখ নারী, সেই সমাজ গঠনের প্রধান অন্তরায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অন্যতম পুরোধা জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করার মাধ্যমে এরা মূলত শান্তির ধর্ম ইসলামকে কলুষিত করছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরাসরি বিরোধিতা করছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা করা ছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও জামায়াত-শিবির দেশের প্রগতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে বারবার বাধা সৃষ্টি করেছে। বারবার হামলা চালিয়েছে মুক্ত চিন্তার মানুষদের উপর। ছাত্রশিবিরের নৃশংসতার শিকার হয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ অসংখ্য মানুষ। অথচ সেই জামায়াত-শিবিরের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার মাধ্যমে মূলত আবারো সেই সন্ত্রাসের রাজনীতি জিইয়ে রাখা হলো। যারা ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেদের ঘৃণ্য ভূমিকার বিষয়ে আজ পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি বা দুঃখপ্রকাশ করেনি এবং যারা এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দেয়নি, তাদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাজনীতি করতে দেওয়া হাস্যকর। উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, জামায়াত-শিবিরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ সরকার পায়নি। তাই রাষ্ট্রের চোখে জামায়াত-শিবির এখন আর সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। অথচ, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বেশ কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এক রিট মামলার রায়ে হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তা বহাল রেখেছে। এতো তথ্য প্রমাণ থাকার পরও সরকার জামায়াত-শিবিরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় উদীচীসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সর্বস্তরের মানুষ বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলা রয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি ছাত্র-জনতার যে অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে সেই গণজোয়ারেরও অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, মুক্তচিন্তার স্বদেশ গড়ে তোলা। তাই, জামায়াত-শিবির রাজনীতি করার সুযোগ পেলে তা শুধু বাহাত্তরের সংবিধানই নয়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হবে বলে মনে করে উদীচী। তাই, অবিলম্বে জামায়াত-শিবিরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে শুধু জামায়াত-শিবিরই নয়, সব ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..