একতা ভাষ্যকার :
দেশের মানুষ এক ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করলো। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বারোটি জেলার প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যায় এ পর্যন্ত ৫৪ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০ লাখ শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ সরাসরি এই ক্ষতির মধ্যেই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বৃষ্টি না থাকলেও, পানি ঠিকমত না নামায় ক্ষয়ক্ষতির বাস্তবতা নিরূপণ করার বিষয়টি এখনো মনের মধ্যে রয়ে গেছে অনেকের।
দেশের যেকোনো দুর্যোগে সাধারণ মানুষ সাধ্যমত দুর্গত এলাকার মানুষের প্রতি শুধু সহমর্মিতা দেখায় না, সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ায়। এবারের বন্যায় এটি আরো বেশি দেখা গেল। যদিও এটি নতুন নয়। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রচারমাধ্যমের বিস্তার এত বেশি না থাকায় এগুলো হয়তো দৃশ্যমান হয়নি। এবার যা হয়েছে।
তবে মানুষের যথাযথ সহযোগিতা থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম যথাযথভাবে না থাকায়, স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম এক অর্থে বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, এসব বন্যার্ত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রকৃতপক্ষে সমন্বিত উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যেটি এই সময়ের জরুরি কাজ ছিল।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একেকজন উপদেষ্টা বা তাদের মনোনীত প্রতিনিধি দুর্গত জেলাগুলোতে অবস্থান করে সকল উদ্যোগকে সমন্বিত করার কাজটি করতে পারতেন। সেটিও চোখে পড়েনি। সমন্বিত উদ্যোগের আরো জরুরি প্রয়োজন এজন্য ছিল যে, খাদ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিভিন্ন এলাকায় থেকে গেলেও কোথায় কোথায় এখনই কোন ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সেই তথ্য জানা ছিল না।
পানিবন্দি মানুষের কাছে এসব সহায়তা পৌঁছানো সাধারণ স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য ছিল দুরূহ। ওইসব এলাকায় যাতায়াতের ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা গেলে সহায়তা সামগ্রী পৌঁছানো সহজ হতো। দুর্গত এলাকাগুলোর প্রকৃত অবস্থা, কোথায় কিভাবে সহায়তা দরকার, কিভাবে তা পৌঁছাবে, এসব তথ্যের সমন্বয় হলে মানুষের প্রকৃতপক্ষেই চলমান দুর্দশা আরো লাঘব করা যেতো।
এখন বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু অনেক জায়গায় যেভাবে নামার কথা সেভাবে নামছে না। স্থানীয়ভাবে নদী-নালা, খাল-জলাশয় ভরাট করে বা যতোটুকু অবশিষ্ট আছে তা-ও নানাভাবে ভরাট হওয়ায় পানি যথাযথভাবে নামতে পারছে না। উন্নয়নের নামে এসব নদী-নালা খাল-বিল জলাশয় যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তার ফল ভোগ করছি আমরা।
বন্যার পানি নামতে শুরু করায় নানা ধরনের সংকট সামনে আসছে। আমরা জানি বন্যার সময় মানুষ যত রোগে আক্রান্ত হয় বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী তার ৮০ শতাংশেরও বেশি আক্রান্ত হয় পানিবাহিত রোগে। এজন্য খাবার পানি ও খাবারের আগে যেন যথাযথভাবে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া যায় এবং মানসম্মত খাবার খাওয়া যায় সেদিকেই নজর দেওয়া দরকার। এ কাজে খাদ্য সরবরাহের সাথে সাথে সচেতনতা তৈরি করা দরকার। এছাড়া এসময় নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এজন্য নিয়মিত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসার জন্য ক্যাম্প স্থাপন এখন অন্যতম জরুরি কাজ।
পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠছে রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা। ফসলি জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে। যদিও পানি নেমে যাওয়ার পর নতুন পলিমাটি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করবে। এবারের বন্যায় কোন কোন অঞ্চলে একতলা বাড়ি পর্যন্ত পানির নিচে চলে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে এই পানি স্থায়ী হয়েছে। তাই বসতবাড়ির এবং বাড়ির আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে অতীতের যে কোনো সময় তুলনায় অনেক বেশি। গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলের স্থানীয় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এসময় অসুস্থ মানুষ, শিশু, নারী, বয়স্ক মানুষ এবং আর্থিকভাবে দরিদ্র মানুষ বিশেষভাবে সংকট পড়েছেন।
এ অবস্থা থেকে স্থানীয় মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এজন্য প্রতিটি বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে ক্ষতির প্রকৃত তথ্য নির্ধারণ করা জরুরি। এ কাজে নির্মোহভাবে সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে, এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করেই ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য নিরূপণ করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কাজে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সচেতন মানুষের সহায়তা চাইলে তারা যে এজন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, এটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বন্যার শুরুতে সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায়, প্রকৃতপক্ষে সহায়তা পৌঁছানোর কাজ যতোটুকু ব্যাহত হয়েছে, উল্লেখিত কাজের আগে সমন্বিত কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মানুষকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একই সাথে এই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মাঝেও সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। এসময় নানা তথ্য-উপাত্ত সামনে আসে। কিছু ভুল তথ্য-উপাত্ত প্রকৃত ঘটনা বুঝতে মানুষকে সহায়তা করে করার পরিবর্তে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং মানুষের নিজস্ব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলেছে।
আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জানি। সারাবিশ্বে উন্নয়নের নামে কার্বন নিঃসরণে এই জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এর ফলে যে সংকট তৈরি হচ্ছে তা শুধু আমাদের চিরচেনা আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের জীবনে নতুন নতুন সংকট তৈরি করছে। কিছু এলাকা তলিয়ে যাওয়ার কথা বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরে বলে আসছেন। অতিবৃষ্টি, অতি খরা, অসময়ে বৃষ্টি, অসময়ে খরা, এসব নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার আমাদের দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ও ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে আমরা যে বন্যা দেখলাম অতীতে তা দেখা যায়নি। এই অঞ্চলে এত পরিমাণ বৃষ্টি, এত পরিমাণ এলাকা তলিয়ে যাওয়া এর আগে কমই দেখা গেছে। উন্নয়নের নামে নদী-নালা খাল-বিল জলাশয় দখল করে যে সৌধ গড়ে তোলা হয়েছে, তা মানুষের জীবনকেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে, এটি স্বচক্ষে মানুষ দেখল এবং উপলব্ধি করল।
২৮ আগস্ট ২০২৪ নোয়াখালীতে দেখা গেল শহরের পানি নামছে না। রাস্তার উপরে, পানির উপরেই বাজার দোকানপাট। এ অঞ্চলের পানিও যথাযথভাবে নামছে না। উন্নয়নের নামে নানামুখী কাজ হলেও পানি নিষ্কাশনের প্রকৃত ব্যবস্থা করা হয়নি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা যতটুকু আছে, তাও ভরাট হয়ে আছে। এসব দেখার কেউ নেই। আর এই পানি নেমে যে নদীতে পড়বে সেই নদী ও নদীতে যাওয়ার পথ তো বন্ধ। এ অবস্থা এখন দেশের সর্বত্র।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। ৫৪টি নদীর উৎস সেখানে। ভাটির দেশ হিসেবে উজানে আমাদের দেশে এসব নদীর পানি আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়ে আছে। ভারতের সাথে নানা সমস্যার মধ্যে পানির সমস্যার সমাধান এখনো হয় নাই। বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের সমস্যার সমাধান হয়নি। নদী কমিশন নামে আছে, তার কোন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। নানা সময় ভারত থেকে বিভিন্ন বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়া ও বন্ধ করে রাখা আমাদের দেশের নানা সমস্যা তৈরি করে। এসবের সমাধান জরুরি। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়া খুবই জরুরি। অতীতের সরকারগুলো এসব কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যার জন্য অনেক সময় ভারতের পানি আগ্রাসন আমার দেশকে কবলিত করে।
শাসকদের এসব ব্যর্থতার কারণে, নতজানু নীতির কারণে ভারতের পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের রাজনীতি এখনও বহমান। এসব বিষয়ে আবার কিছু ভুল তথ্য স্থাপন করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা হয়। এবারের এই অঞ্চলে বন্যার পর, এসব বিষয়ে জানাবুঝার জন্য বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে আলোচনা করেছেন। বন্যার প্রকৃত কারণ তুলে ধরছেন। ভারতের দায়-দায়িত্ব তুলে ধরছেন। এসব বিষয়ে নির্মোহ অবস্থানে থেকে প্রকৃত কারণ জেনেবুঝে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এসময় জরুরি হলো বন্যাদুর্গত মানুষকে রক্ষা করা। ঐ অঞ্চলের মানুষ যাতে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে তার জন্য সর্বাত্মক সহায়তা করা। এজন্য সরকারের স্বচ্ছ ও সমন্বিত উদ্যোগী আমরা প্রত্যাশা করি। একই সাথে উন্নয়নের যে গতিধারা এ ধরনের সংকট তৈরি করছে তার বিপরীতে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঢেলে সাজানোর কাজটি করার আহ্বান জানাই।
এই অঞ্চলে আমরা লক্ষ্য করলাম বন্যার পানিতে চলাচল ব্যাহত হয়, আবার ওই অঞ্চলে সাধারণ মানুষের পৌঁছানোর মতো কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এই বিকল্প ব্যবস্থার কথা এখনই ভাবতে হবে। বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়নে, পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সাধারণ সময় ওইসব স্থাপনা এলাকার মানুষের শিল্প-সাহিত্য ও বিনোদনের কাজ করে। আর দুর্যোগ মুহূর্তে ঐ স্থানে মানুষ যেন আশ্রয় লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। একই সাথে দুর্যোগ মুহূর্তে গবাদিপশুর আবাসস্থল গড়ে তোলা এবং দুর্যোগের সময় ঘরের চুরি ডাকাতির হাত থেকে বাঁচার জন্য বিকল্প পদ্ধতিও রাখতে হবে। এসব কাজে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয়ভাবেই সংকট সমাধানে বিকল্প পথের সন্ধান করা হবে। এটি এ সময়ের অন্যতম কাজ।
আমাদের দেশের মানুষ নানা সংকটে পড়লেও নিজেদের শক্তিতে বলীয়ান হয়েই তারা ঘুরে দাঁড়ায়। এবারও ঘুরে দাঁড়াবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে–এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে এবং বিশেষ করে ফেনীতে এত ধ্বংসাত্মক বন্যার সম্পর্কে কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, লক হ্যাভেন, পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেছেন- প্রথমত, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, সময় ও মেয়াদ সরাসরি বন্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও অনুরূপ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি। এই হারে বৃষ্টিপাত হলে নদীগুলোর বহনক্ষমতা অতিক্রম করে বন্যার কারণ হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছরে বৃষ্টির তীব্রতা ও সময়কাল বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, কৃষি, পাহাড় কাটা, বনভূমি নিধন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রক্রিয়ার ফলে নদীর তলদেশে পলি জমাট হওয়ার কারণে নদীর পানির বহনক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় ভূ-অভ্যন্তরে বৃষ্টির পানির প্রবেশ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা বন্যার তীব্রতা ও মেয়াদকাল বাড়িয়ে দেয়। লক্ষণীয় যে, বন্যার তীব্রতা শহরাঞ্চলে আরও গুরুতর, যেমন পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও খাগড়াছড়ি। এটি শহরাঞ্চলে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন নেটওয়ার্কের ধ্বংসের কারণে, যেখানে বেশিরভাগ প্রাকৃতিক খাল ও নদী দখলদারদের দ্বারা দখল হয়ে গেছে এবং পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো অবৈধভাবে ডাম্পিং দ্বারা আটকে আছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ফেনী জেলায়ই এক হাজারেরও অধিক নদী-খালের অবৈধ দখলদার রয়েছে। তৃতীয়ত, গত কয়েক দশক সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধির কারণে নিম্নাঞ্চলের নদীগুলোর বন্যার পানি আগের মতো দক্ষতার সঙ্গে নিষ্কাশিত হয় না। মুহুরী নদী ফেনী নদীর মাধ্যমে সরাসরি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। উপকূলের কাছে জোয়ার-ভাটা চক্রের কারণে বন্যার পানি নিষ্কাশন আরও বিলম্বিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। তিনি সমস্যা সমাধানে, সব প্রাকৃতিক নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার, খনন করে ভূ-উপরিস্থ প্রবাহের বাধাগুলো দূর করা, নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহ সামলানোর জন্য নিষ্কাশন নেটওয়ার্কের আকার এবং পরিমাণ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। তিনি বৃষ্টির পানি বহনকারী নালা-নর্দমা ও ড্রেনগুলোর কার্যকারিতা এবং বহনক্ষমতা অববাহিকার প্রাকৃতিক ঢাল ও নগরায়ণের মাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৃদ্ধি করা ও ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বন্যার ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর নকশায় অভিযোজনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
খালেকুজ্জামান জাতিসংঘের পানি প্রবাহ আইনের (১৯৯৭) আলোকে সব আন্তঃসীমান্ত নদীর জন্য একটি সমন্বিত পানি এবং পলি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ, আন্তঃনদীগুলোর অববাহিকার অন্যান্য দেশকেও এ আইন মেনে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। এছাড়া বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রটোকলকে আধুনিকায়নের উপর জোর দেন যাতে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের পরিবর্তিত বাস্তবতার সঙ্গে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সতর্কতা সংবাদ জনগণকে জানানো যায়।