বন্যায় ফেনীর পরশুরাম উপজেলার ২নং ওয়ার্ড বাউর পাথর গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি একজন নিখোঁজের তথ্যও পাওয়া গেছে। পানিবন্দী রয়েছেন ১০ লাখ ৯ হাজার ৫২২ পরিবার। গত ৩০ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। প্রায় ১১টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত। অনেকেরই ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কৃষিজমি ক্ষেত খামার ধ্বংস হয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের। শুধু শ্রমজীবী মানুষ নয়, সহায়সম্বল হারিয়ে অসহায় তুলনামূলক সচ্ছলরাও। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় জেগে উঠছে ক্ষত। বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। এখন শুরু আসল লড়াই। সম্মুখীন হচ্ছেন ক্ষতির। ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পুরুষ ৪১ জন, মহিলা ৬ জন ও ৭ জন শিশু। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৪ জন, ফেনীতে ১৯, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও কক্সবাজার ৩ ও মৌলভীবাজার ১ জন মারা গেছেন। মৃত্যুর এ সংখ্যা বৃহস্পতিবার ছিল ৫২ জন।
এতে আরও জানানো হয়, বন্যায় ১০ লাখ ৯ হাজার ৫২২ পরিবার পানিবন্দী রয়েছেন। পানিবন্দী ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট তিন হাজার ২৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬৮৭ জন মানুষ এবং ৩৮ হাজার ১৯২টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য মোট ৫৬টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ চলমান বন্যায় বাড়িঘর, স্কুল ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ২০ লাখেরও বেশি শিশু এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বিগত ৩৪ বছরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়ংকর এই বন্যায় ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় খাদ্য বা জরুরি ত্রাণ সরবরাহ ছাড়া পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ ও শিশুর জন্য ইউনিসেফ জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা প্রয়োজন। গত ৩০ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মাথা গোঁজার একটু আশ্রয় খুঁজছেন; বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তা, মাঠ-ঘাট আর ক্ষেত। লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন, তাদের কাছে নেই কোনো খাবার কিংবা জরুরি কোনো ত্রাণসামগ্রী।
বাড়িঘর ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা হতাশা নিয়ে দিন পার করছেন। এখনো সরকারি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোন নিরাপদ আশ্রয় কিংবা সংস্কারের কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে এখন ক্ষতির শিকারদের মন্তব্য- ‘ত্রাণ নয় আমরা সংস্কার চাই। মাথা গোজার ঠাঁই চাই।’