একতা সরেজমিন

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন মেহনতি-শ্রমজীবী মানুষ

শুভ চন্দ্র শীল

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সহিংসতা, হত্যাযজ্ঞ, হামলা-মামলা, কারফিউ এসব মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের চরম সংকটে খেসারত দিচ্ছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। অর্ধসপ্তাহ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পাড় করেছে রাজধানীর নিম্ন আয় করা মানুষেরা। কারফিউ ফলে রাস্তায় বের হতে পারে নি সাধারণ মানুষ। ফলে নিত্য ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তারা পড়েন হতাশায়। হকারি থেকে রিকশাচালক প্রতিটি মানুষের জীবনে নেমে আসে অশান্তি। কারফিউ-এর কারণে ঘরে বসে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছে এসব শ্রমজীবী মানুষ। কারফিউ সময়ে রাস্তায় মানুষ কম থাকায় অনেকের রিকশা জমার টাকা তুলতেই কষ্ট হয়েছে সেখানে বাড়তি টাকা আয় করা তো দূরের কথা এমনটাই মন্তব্য রিকশাচালকদের। রাজধানীর বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ যা উপার্জন করে তা দিয়ে নিজে খেয়েদেয়ে পরিবারকে টাকা পাঠাতে হয়। একদিন কাজ না করলে না খেয়ে বসে-শুয়ে দিন পাড় করতে হয় তাদের। পরিবার পরিজন রেখে বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় রাজধানীতে ভিড় জমায় এসব মেহনতি শ্রমজীবী মানুষ। রোজগারের একটা বড় অংশ বাড়িতে পাঠায় যা দিয়ে সংসারের বাকি সদস্যরা চলে। কিন্তু কারফিউ-র এই সময়ে পরিবারকে টাকা পাঠানো তো দূরে থাক নিজে চলতেই হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকার ছিন্নমূল ও নিম্ন আয় করা মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়। কারফিউ শিখিল হলে- সরেজমিনে গুলিস্তানের কিছু জায়গা ঘুরে হকার ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দোকানদাররা বসে বসে সময় কাটাইছে। এক দোকানে কাস্টমার ছিল তো ১০ দোকান ফাঁকা। পরবর্তীতে দেশে কারফিউ ঘোষণা করা হলে দোকান বন্ধ করে বাসায় বসে বসে দিন পার করছে। যাদের সামর্থ্য ছিল, জমানো টাকা ছিল তাদের সময়গুলো ভালো কাটলেও যারা নিত্য কাজের সঙ্গে জড়িত, দিন আনে দিন খায় এসব মানুষেরা না খেয়ে মাথায় টেনশন নিয়ে সময়গুলো পার করেছে। গাড়ি বন্ধ থাকায় বাড়ি যেতে চেয়েও বাড়ি যেতে পারেন নি। বাধ্য হয়ে পড়ে ছিল ঢাকায়। গুলিস্তানে হকারি করে পণ্য বিক্রি করা একটি ট্রলি ভেঙ্গে পড়ে আছে, পাশে তার মালিক চেষ্টা করছেন সেই ভাঙ্গা ট্রলি ঠিক করে যতদিন চালানো যায়। এসব নিম্ন আয়ের মানুষেরা শুধু ভয় আর হতাশা নিয়ে দিন পার করেছে ব্যাপারটা এমন নয়, ক্ষতিরও সম্মুখীন হয়েছেন অনেকে। সহিংস ঘটনায় অনেকের ভ্রাম্যামাণ দোকানটিও ক্ষতির হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ক্ষোভ করে বলেন, শুধু কি ভাঙচুর হয়েছে আমাদের মালামালও চুরি করেছে। অনেকের দাবি- কারফিউ সময়ে রাজধানী জনমানবশূণ্য থাকায় চোর, ছিনতাই, টোকাইরা পণ্য চুরি ও ভাঙচুর করার সুযোগ পেয়েছে। ২০, ২১ ও ২২ জুলাই (শনিবার, রবিবার ও সোমবার) টানা কারফিউ এর কারণে ঢাকা শহর স্তব্ধ হয়ে যায়। চারদিক থেমে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কারফিউ শিথিল হলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্বল্প পরিসরে চালু হয়। বাইতুল মোকারম জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাতে হকারি করে পণ্য বিক্রি করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, আমাদের কাছে রাজনীতি মানে কাজ করতে হবে আর দুবেলা খাবার মেনেজ করতে হবে। সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে ৮ টায় ভেন গাড়ি ঠেলে সারাদিন গলা হাঁকায় পণ্য বিক্রি করি। কি কষ্ট করে মাল বিক্রি করি তা আমরা জানি। কারফিউ থাকায় আমাদের পরিবারের সবাই খেয়ে না খেয়ে আল্লা আল্লা করে দিন পার করছি। দেশের বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে ভাঙচুর সহিংসতা এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন এসব মানুষেরা। দেশের বড় বড় বাড়ি-গাড়ি-বিত্তশালী-মহাজনেরা সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং দেশি-বিদেশি সংস্থা থেকে আর্থিক সহায়তা-নিরাপত্তা পেয়ে থাকলেও এসব শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সহায়তা তো দূরে থাক, পায় না জীবনের নিশ্চয়তা। যাদের কাছে একবেলা খাবার জোগানোর জন্য যুদ্ধ করতে হয় নিজের সঙ্গে। অথচ রাষ্ট্রের কাছে এসব মানুষের জন্য নেই কোনো ভর্তুকি কিংবা সহিংসতা পরবর্তী সময়ে সহায়তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন বামপন্থি সংগঠন ও রাজনৈতিক দল শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর জন্য জোর দাবি জানালেও সে দাবির প্রতি কোন কর্ণপাত করেনি সরকার। সরকার এবং রাষ্ট্রের এসব ব্যর্থতার কারণে সবচেয়ে বেশি মাসুল গুনছে মেহনতি মানুষ।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..