সরকারের পদত্যাগের গণদাবিতে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
* বাম গণতান্ত্রিক জোট ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদের আহ্বান * ছাত্র-জনতা হত্যা এবং রাষ্ট্রীয় স্থাপনা রক্ষায় ব্যর্থতার দায়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি * কারফিউ, সেনা, র‌্যাব, বিজিবি প্রত্যাহার করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা * ছাত্র-জনতার ওপর দমন, পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ কর * নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে গুলিবর্ষণকারীদের চিহ্নিত করে বিচার কর * নিহত-আহতদের তালিকা প্রণয়ন করে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা কর একতা ডেস্ক : হত্যাযজ্ঞের দায়ে সরকারের পদত্যাগ, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং দমন-পীড়ন-নির্যাতন ও গণগ্রেফতার বন্ধের দাবিতে দেশের কমিউনিস্ট, বাম ও প্রগতিশীল দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন দেশের বাম দলগুলি। সেই সঙ্গে এই লক্ষ্যে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাম দলগুলোর নেতৃবৃন্দ। বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ জাসদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা’র নেতৃবৃন্দ গত ২ আগস্ট বিবৃতিতে জনগণের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম ও বাংলাদেশ জাসদ আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরম গড়ে তুলেছে। উল্লেখ্য যে, গত ২৭ জুলাই শুক্রবার সকাল ১১টায় পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের সামনে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে শোক সমাবেশ ও বিক্ষুব্ধ শোক র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে কমিউনিস্ট, বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসহ প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন। পরে এই শোক সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে রাজপথ থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পরবর্তীকালে দ্রুত অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা, মতবিনিময় ও করনীয় নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অফিস সহ বিভিন্ন বাম দলের অফিসে কয়েক দফা বৈঠক করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষ ৩০ জুলাই সিপিবি অফিসে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি কমরেড জাফর হোসেন, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ নাসু, সাম্যবাদী আন্দোলনের বেলাল চৌধুরি, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, বাসদ (মাহবুব) নেতা মহীন উদ্দিন চৌধুরি রিটন, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নজরুল ইসলাম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য। পরে ২রা আগস্ট বিবৃতিতে বামদলগুলোর প্লাটর্ফম থেকে সুনিদিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। দাবি গুলো হলো: ১) ছাত্র-জনতাকে হত্যার এবং রাষ্ট্রীয় স্থাপনা রক্ষায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকার পদত্যাগ কর। ২) কারফিউ প্রত্যাহার কর, সেনা, র‌্যাব, বিজিবি ব্যারাকে ফিরিয়ে নাও। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দাও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত কর। ৩) দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার উপর দমন পীড়ন ও গণগ্রেফতার বন্ধ কর। মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের শাস্তি দাও, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কর। ৪) নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে গুলিবর্ষণকারীদের চিহ্নিত কর, বিচার কর, আন্দোলন দমন ও হামলার উস্কানিদাতাদের শাস্তির ব্যবস্থা কর। ৫) নিহত আহতদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন কর। উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা কর। বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ জাসদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা’র ওই বিবৃতি বলা হয়- গত কয়েকদিনে দেশে একদিকে যেমন রাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে স্মরণকালের ভয়াবহতম রাজনৈতিক দমন, পীড়ন, হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে আর অপরদিকে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব জাগরণ সংগঠিত হয়েছে। হত্যা নির্যাতন করে জনতার আন্দোলন দমন করা যাচ্ছে না। এই কয়েকদিনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দানবীয় আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে গড়ে উঠা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মাত্র ৭ দিনে ২১১ জনকে হত্যা, ৭ হাজারের বেশি আহত, ১১ হাজারের বেশি গ্রেফতার, আড়াই লাখের মত অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে (পত্রিকার খবর অনুযায়ী)। এই ধরনের রাষ্ট্রীয় দমনের চিত্র এই ভূখণ্ডের মানুষ পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশের গত ৫৩ বছরে আর দেখেনি। কারফিউ দিয়ে, সেনাবাহিনী নামিয়ে, বর্ডার গার্ড মোতায়েন করে, হাজার হাজার রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ছুড়ে এক নারকীয় কাণ্ড চালিয়েছে সরকার। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করেও যখন ছাত্র-জনতাকে পিছু হটাতে পারে নি তখন ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’ ঘোষণা করে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। আর এখন ‘ব্লক রেইড’ চালিয়ে রাতে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ছাত্র পরিচয় পেলেই। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও জানান, জুলাই এর ১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং ক্রমাগত শক্তি অর্জন করে সারা বাংলাদেশে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে স্কুলের ছাত্ররাও ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ করে। ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল অভূতপূর্ব। এ থেকে আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একদিকে নির্বিচার গুলি, হত্যা আর আহত করা অন্যদিকে কৃত্রিম মায়া কান্না করে সহানুভুতি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। রামপুরা টিভি সেন্টারে আগুন, ডাটা সেন্টার ধ্বংস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আগুন, মেট্রো রেলের স্টেশনে আগুন, নরসিংদীর কারাগার ভেঙে সকল বন্দীর পলায়ন এসবের কথা বলে আন্দোলনকারীদেরকে সন্ত্রাসী ও সম্পদ ধ্বংসকারী হিসেবে চিহ্নিত করার গোয়েবলসীয় প্রচার চালিয়েছে সরকার। সরকারের প্রচার দেখে মনে হয় মানুষের জীবনের চেয়ে সম্পদই এখানে প্রধান বিষয়। জামাত-শিবির নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়– এখন মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা হিসেবে জামাত-শিবির নিষিদ্ধের কথা বলছে। জামাতকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নয়, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে যা জনগনের আকাংখার পরিপন্থী। বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতি এবং দুঃশাসন চালিয়ে, শত শত ছাত্র জনতার রক্ত ঝরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কোনভাবেই তাদের অপকর্মকে আড়াল করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বিবৃতিতে বলা হয়, সারা দেশে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি হয়েছে গণআন্দোলনের পথেই এ থেকে মানুষ মুক্তি পেতে পারে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি ও ঘোষিত সকল কর্মসূচির প্রতি আমরা আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং জনগণকে রাজপথে থেকে সরকারের নিপীড়ন মোকাবিলা করে গণদাবি ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..