নয় মাসের বেশি সময় হয়ে গেল ইজরায়েল গাজায় প্যালেস্তিনীয়দের বিরুদ্ধে গণহত্যাকারী যুদ্ধ শুরু করেছে। নির্মম, নির্বিচার বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলায় এখনও পর্যন্ত ৩৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের একটা বড় অংশ নারী ও শিশু। ইজরায়েলি সেনারা হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক বাড়ি- কোনও কিছুকেই রেহাই দেয়নি। দখলকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও প্রতিদিন হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী। এবং সেই হামলায় ৫৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইজরায়েল সরকার ওই এলাকায় বেআইনি স্থায়ী বসতি গড়ার কাজ দ্রুততর করেছে এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে প্যালেস্তিনীয়দের জমি ও জলপাই কুঞ্জগুলি ক্রমশ দখল করছে।
ইজরায়েলের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ গণপ্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন। এইসব বিক্ষোভের উল্লেখযোগ্য দিক হল, একটা ভালো সংখ্যক ইহুদি জনগণও এতে শামিল হয়েছেন। তারা দাবি করছেন, ইজরায়েল এই বর্বর যুদ্ধ বন্ধ করুক এবং তারা যেন ইহুদি জনগণের নামে এইসব কুকর্ম না করে। এভাবে তারা জায়নবাদীদের থেকে এবং ইজরায়েলের উগ্রপন্থিদের থেকে নিজেদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করছেন।
ভারতে বামপন্থি দলগুলিই প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ প্যালেস্তিনীয় জনগণের এই সংগ্রাম হল ঔপনিবেশিক দখলদারি ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। জাতি গঠনের জন্য প্যালেস্তিনীয়দের সংগ্রামই একমাত্র জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম। যা সেই বিশ শতকে শুরু হয়েছে। এবং শেষ না হয়ে এখনও চলছে। প্যালেস্তাইনের সংগ্রাম কোনও ধর্মীয় ইস্যু নয়। এটা শুধুমাত্র ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘাতের ইস্যু নয়। ইজরায়েল যে প্যালেস্তাইনের ভূমি দখল করেছে তার বিরুদ্ধে প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতিরোধকে ইজরায়েল ধর্মীয় সংঘাত হিসেবেই দেখাতে চাইবে। ইজরায়েল হল ঔপনিবেশিক-স্থায়ী দখলদার রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র তাদের ১৯৬৭ সালের ভৌগোলিক সীমা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গাজা স্ট্রিপ ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে।
দুঃখজনক হলো, ভারতে হিন্দুত্বের মতাদর্শের প্রভাবের ফলে এবং মোদী সরকার ইজরায়েলকে পুরোপুরি মদত দেওয়ার কারণে, প্যালেস্তিনীয় জনগণের সংগ্রামকে দেখানো হচ্ছে একটা ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুসলিমদের লড়াই হিসেবে। এটা একটা সংকীর্ণতাবাদী ধর্মীয় সংঘাত, এই বোধ বা উপলব্ধি সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
কেরালায়, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়, আমরা দেখেছি যদি একটা ধর্মীয় প্রিজমের মধ্য দিয়ে কোনও মুক্তি সংগ্রামকে দেখার চেষ্টা হয়, তাহলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে। নির্বাচনের অনেক আগে, ২০২৩-এর অক্টোবর থেকে, যখন ইজরায়েল গাজায় বর্বর হামলা শুরু করে, তখনই সিপিআই(এম) ও এলডিএফ যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে প্রচার শুরু করে। সর্বভারতীয় স্তরে বামপন্থি দলগুলির আহ্বান কেরালাতেও তা পূর্ণ উদ্যমে কার্যকর করা হয়েছিল। এরপর যখন ভোট ঘোষণা হলো, তখন এলডিএফের যে সামগ্রিক নির্বাচনী প্রচার, যুদ্ধবিরোধী প্রচারও তার অংশ হয়ে গেল।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপনের যে প্রচার, নানা মহল থেকে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়ে গেল। এইসব প্রচারের সাধারণ বিষয়টি ছিল যে এটা একটা ‘মুসলিমদের ইস্যু’ এবং এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে সিপিআই(এম) মুসলিম ভোট নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেছে। সিপিআই(এম) ও এলডিএফের এই প্রচার অভিযান সম্পর্কে বিজেপির ব্যাখ্যা ছিল, এটা এক ধরনের মুসলিম তোষণ। এমনকী ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অফ মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ শিহাব থঙ্গল একটি সাক্ষাৎকারে সিপিআই(এম)-কে এই বলে অভিযুক্ত করেন যে, এই দল প্যালেস্তাইনের মতো একটি ‘মুসলিম ইস্যু’কে তুলে আনছে মুসলিম জনতাকেই ধোঁকা দেওয়ার জন্য। মুসলিম উগ্রবাদীরা একটা ইহুদি রাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে, এই রকম একটা জোরালো দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রভাবিত হয়ে পড়ে খ্রিস্টান চার্চের একটি অংশও।
গোটা এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। প্রথমত, এখানে দেখা যাচ্ছে কীভাবে কেরালার সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে- তা সে হিন্দু, মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হোন, সাম্প্রদায়িক মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে। এখানে এ কথা জোর দিয়ে বলা দরকার যে, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাত কোনও ধর্মীয় সংঘাত নয়। প্যালেস্তিনীয়দের দেশ যারা গত ৭৫ বছর ধরে জবরদখল করে রেখেছে, এই লড়াই সেই জবরদখলকারী ইজরায়েলের বিরুদ্ধে নির্যাতিত প্যালেস্তিনীয় জনগণের লড়াই।
অধিকৃত ভূভাগে প্যালেস্তিনীয় খ্রিস্টানদের কী পরিণতি হয়েছে সে বিষয়ে কেরালার খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। ১৯৪৮ সালে যখন ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়, তখন আরব প্যালেস্তিনীয় জনসংখ্যার ১২ শতাংশ ছিলেন খ্রিস্টান। আর এখন অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গাজা স্ট্রিপ এবং পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসকারী মোট প্যালেস্তিনীয় জনগণের মধ্যে খ্রিস্টানদের অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ শতাংশে। নতুন প্রতিষ্ঠিত ইজরায়েল রাষ্ট্রের এলাকা থেকে যখন ইজরায়েলি রাষ্ট্র নিজে এবং সশস্ত্র হামলাকারীরা জোর করে প্যালেস্তিনীয়দের উচ্ছেদের কাজ শুরু করে, তখন বহু প্যালেস্তিনীয় খ্রিস্টানকেও তাদের জমি-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। ইজরায়েল যখন জোর করে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজা দখল করে তখনও খ্রিস্টানদের উচ্ছেদ করার কাজ জারি ছিল। এর ফলে যা দাঁড়িয়েছে তা হলো, সারা বিশ্বে যত প্যালেস্তিনীয় শরণার্থী রয়েছেন তাদের ১০ শতাংশই খ্রিস্টান।
প্যালেস্তাইনের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিকস ২০১৯ সালে জনগণনার কাজ করে। সেই রিপোর্টে দেখা গেছে, প্যালেস্তাইনে তখন বাস করছিলেন মাত্র ৪৭ হাজার প্যালেস্তিনীয় খ্রিস্টান। এদের ৯৮ শতাংশই থাকেন অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে। আর গাজা স্ট্রিপে থাকেন মাত্র ১১০০ জন।
ইজরায়েলি রাষ্ট্র এবং তাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলি একটা নিপীড়ণের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা জোর করে জমি দখল করছে, বর্ণবিদ্বেষী দেওয়াল তৈরি করেছে, বিভিন্ন গোষ্ঠীকে টুকরো টুকরো করে তাদের আত্মিক সম্পর্ককে ধ্বংস করছে। এইসব গোষ্ঠী ও তাদের আত্মিক সম্পর্কটাই হল সামগ্রিকভাবে প্যালেস্তিনীয় জাতির অভিজ্ঞান। (এই বিশ্বাস প্রচলিত যে), যীশু বেথলেহম শহরে জন্মেছিলেন। এই শহরটা এখন অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে। ৭০ বছর আগে এখানকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ছিলেন খ্রিস্টান। কিন্তু ২০০১ সালে ইজরায়েলি রাষ্ট্র বর্ণবিদ্বেষী প্রাচীর তুলতে শুরু করে এবং তার জেরে বেথলেহমকে জেরুজালেম থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। বেথলেহম শহর এখন দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। এবং সেখানে যেসব জমির মালিক ছিলেন প্যালেস্তিনীয় মুসলিম ও খ্রিস্টানরা, সেগুলি ইহুদিদের স্থায়ী দখলদারি বসতি গড়ে তোলার জন্য জবরদখল করা হয়েছে। এর ফলে খ্রিস্টানদের ওই শহর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এখন তারা শহরের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ। সংখ্যায় ধরলে এরা হলেন ১১,০০০ মানুষ।
যেসব খ্রিস্টান বেথলেহমে থাকেন তারা মাত্র কয়েক মাইল দূরের শহর জেরুজালেমে যেতেও পারেন না। এমনকী ইস্টারের সময়ও তাদের পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়। অনেকেই সেই পারমিট পান না। ফলে জেরুজালেমে যেখানে যীশুকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল বলা হয় সেই Church of HolySepulchre-এ যেতে পারেন না।
ইজরায়েলি রাষ্ট্র এবং জায়নবাদী উগ্রপন্থি শক্তিগুলি মুসলিম ও খ্রিস্টান প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে কখনই ফারাক করেনি। দু’পক্ষকেই দখলদারি আগুনে পুড়তে হয়েছে। প্যালেস্তাইনের চার্চগুলি ও সেখানকার খ্রিস্টান গোষ্ঠীগুলিই এখন পৃথিবীর প্রথম খ্রিস্টান গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সবচেয়ে প্রাচীন, জীবন্ত যোগসূত্র। এইসব খ্রিস্টানদের একটা বড় অংশ ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে অনুসরণ করে। এরপরেই রয়েছেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুগামীরা। এবং সবশেষে যারা এসেছেন তারা প্রোসেট্যান্ট চার্চের অনুগামী।
প্যালেস্তিনীয় খ্রিস্টান ও তাদের সব চার্চের নেতৃত্ব, সকলে মিলে একটা চমৎকার ঘোষণা জারি করেছিলেন। সেই ঘোষণাপত্রের নাম কাইরোজ প্যালেস্তাইন ডকুমেন্ট অফ ডিসেম্বর ১১, ২০০৯। এতে সই করেছিলেন হাজার হাজার খ্রিস্টান এবং জেরুজালেম ভিত্তিক ১৩টি চার্চের প্যাট্রিয়ার্ক এবং আর্চবিশপেরা এই ঘোষণাকে অনুমোদন করেছিলেন। ইজরায়েলি দখলদারি শেষ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এটা খুবই জোরাল একটা ঘোষণা।
কাইরোজ দলিলে বলা হয়েছে, ‘আমরা এ কথাও ঘোষণা করছি যে প্যালেস্তাইনের জমিতে ইজরায়েলি দখলদারি ঈশ্বর ও মানবতার বিরুদ্ধে পাপ। কারণ, এই দখলদারির ফলে ঈশ্বর প্যালেস্তিনীয়দের যে মৌলিক মানবাধিকারগুলি দান করেছেন, সেগুলি থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
ইজরায়েলি রাষ্ট্রের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই প্যালেস্তাইন থেকে খ্রিস্টানদের তাড়িয়ে দিয়ে শরণার্থী করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্যালেস্তাইনকে ইজরায়েল খুব সহজেই একটা ধর্মীয় ইস্যু হিসেবে উপস্থাপিত করতে পারে এবং দেখানোর চেষ্টা করে যে এই সংঘাত আসলে ইহুদি ও মুসলিমদের সংঘাত। এটাই আবার পশ্চিমী দুনিয়ার ইসলাম আতঙ্ককে পুষ্ট করে।
ইজরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র হয়ে ওঠার এই বাস্তবতা অন্যসব ধর্মীয় গোষ্ঠীকে অবদমিত করে রেখেছে। এই বিষয়টা বহু পণ্ডিত ও লেখক নথিভুক্ত করেছেন। বিশিষ্ট লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পলের ফ্রম দ্য হোলি মাউন্টেন বইটি সুপ্রাচীন কালের খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থানগুলি ছুঁয়ে চলা একটা ভ্রমণকাহিনি। বইটিতে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের প্রাচীন খ্রিস্টান মঠ ও স্মৃতিস্তম্ভগুলি কীভাবে ধ্বংস করে দিয়ে একেবারে মুছে ফেলেছে জায়নবাদীরা। ইতিহাস নতুন করে লেখার আকাঙ্ক্ষায় এবং জেরুজালেমের কেন্দ্রে ছিল একমাত্র জুডাইজমই- একথা প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় খননকার্য চালাচ্ছে এবং চেষ্টা করছে ইহুদিদের ধর্মীয় স্থানগুলি পুনরুদ্ধার করতে। এরই পাশাপাশি তারা খননকাজের মাধ্যমে আবিষ্কৃত প্রাচীন খ্রিস্টান মঠগুলিকে ধ্বংস করে একেবারে মুছে ফেলছে।
গাজায় যে অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতায় যুদ্ধ চালাচ্ছে ইজরায়েল, তাতে গাজার খ্রিস্টানদেরও রেহাই দেয়নি তারা। দুটো ঘটনা থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। দ্বাদশ শতাব্দির চার্চ দ্য চার্চ অফ সেন্ট পরফিরিয়াসে বোমা ফেলা হয়েছে। এই হামলায় সেখানে আশ্রয় নেওয়া ১২টিরও বেশি খ্রিস্টান ও মুসলিম পরিবারকে তারা হত্যা করেছে। পরে যেখানে খ্রিস্টান পরিবারগুলি আশ্রয় নিয়েছিল সেই দ্য হেলি ফ্যামিলি চার্চেও ইজরায়েলের স্নাইপারদের গুলিতে এক মা ও তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। ঠান্ডা মাথায় এই হত্যার এমনকি নিন্দা করেছেন স্বয়ং পোপও।
এটা বিস্ময়ের যে এইসব ঘটনাই কেরালার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। বরং এখন প্রতিদিন তাদের বলা হচ্ছে যে, ইসলামি মৌলবাদীরাই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। এইসব প্রচারের বেশিরভাগেরই উৎস হল আমেরিকার নির্দিষ্ট কয়েকটি চার্চ, যেখানে দক্ষিণপন্থি ধর্মপ্রচারকেরা জায়নবাদীদের কট্টর সমর্থকে পরিণত হয়েছে।
খুব কম মানুষই জানেন, হামাস যে একটা শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিল, তার কারণ গোড়ার দিকে ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ-ই এদের ঠেকা দিয়ে ওপরে তুলেছিল। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি পিএলও-কে ঠেকাতে ইজরায়েল রাষ্ট্র হামাসকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। সেই থেকে আমরা দেখছি চক্রাকারে ইসলামি মৌলবাদ ও তার বিপরীতে ইহুদি দক্ষিণপন্থি উগ্রপন্থার উত্থান। দক্ষিণপন্থি ইহুদি উগ্রপন্থাই এখন নেতানিয়াহু সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
সুতরাং, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাতকে সাম্প্রদায়িক চশমার ভেতর দিয়ে দেখার বিরোধিতা করাটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্যালেস্তাইনের জনগণ- তারা মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান যা-ই হোন না কেন- সমসাময়িক কালে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়পর্ব জুড়ে দখলদারির নিপীড়ন সহ্য করেছেন। এটা ঘটছে কারণ আরব ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দমিয়ে রাখার কাজে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অগ্রবর্তী ঘাঁটি হয়ে উঠেছে ইজরায়েল। বিশ্ব পরিস্থিতি বদলের কারণে, বিশেষত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, ধর্মীয় পরিচয়বাদী শক্তি এখন একেবারে রাজনৈতিক মঞ্চের মাঝখানটায় চলে এসেছে। আরব দেশগুলির রাজতন্ত্র ও শেখতন্ত্র, যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর, তারাও প্যালেস্তিনীয় জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
এইসব বিরুদ্ধ উপাদানকে স্বীকৃতি দিয়েও আমাদের উচিত হবে প্যালেস্তিনীয় জনগণের সাহস ও মনোবলের প্রশংসা করা। কারণ, দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের রাস্তা থেকে তারা কখনোই পিছিয়ে আসেননি। কেরালার জনগণ, তারা যে ধর্মেরই অনুসারী হোন না কেন, তাদের জড়ো করা যাবে এবং অবশ্যই জড়ো করতে হবে প্যালেস্তিনীয় জনগণের ন্যায়বিচার ও মুক্তির স্বপক্ষে।
সৌজন্যে : মার্কসবাদী পথ