ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায়

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
আহমদ মানিক : শিক্ষাজীবনে প্রথমবারের মতো নতুন কারিকুলামের পরীক্ষা দিয়েছে জয়পুরহাটে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুমী দেওয়ান। ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩৫ নম্বর ছিল ধারাবাহিক বা হাতে কলমে আর বাকি ৬৫ ছিল লিখিত। তবে সুমী যানান, পুরো বই পড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার হলে গিয়ে জানতে পারি, সহপাঠীরা আগের দিন প্রশ্নপত্র পেয়েছে। পরীক্ষা শেষে ঘরে এসে সুমী তার বাবার কাছে দাবি করে, তাকেও যেন পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন এনে দেওয়া হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন আর উত্তর লেখার পদ্ধতির বদলে নতুন নিয়মে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন স্কুলে প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য পাওয়া যায়। রাজধানীর পোগোজ স্কুলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সকালে দেখি পরীক্ষার উত্তর ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার অনেক বন্ধু জানাল এগুলো ভালো করে দেখে পরীক্ষা দিতে আয়। আমি সেই মোতাবেক পড়ে পরীক্ষা দিলাম। দেখলাম ইউটিউবে যা আছে পরীক্ষার প্রশ্নেও তাই। বেকার কষ্ট করে আগে থেকে এবং পরীক্ষার আগের রাতে সম্পূর্ণ বই পড়লাম।’ তবে প্রায় একই ধরনের কথা রংপুরের অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও। বরিশালের সরকারি একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, ‘গতকাল রাতে ফেসবুকে প্রশ্ন পেয়েছি। তবে ভয়ে ছিলাম যদি প্রশ্ন কমন না পরে সেজন্য। কিন্তু ভাগ্য ভালো, কমন পড়েছে।’ ক্লাসের সবাই প্রশ্ন পেয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘ক্লাসের সবাই পায়নি। তবে অধিকাংশই পেয়েছে।’ তবে, অভিভাবরা এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক অভিভাবক জানান, তার সন্তান জিলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। মঙ্গলবার রাতে মূল্যায়নের নির্দেশিকা ইউটিউব থেকে সংগ্রহ করেন। ওই নির্দেশিকার সঙ্গে বুধবার স্কুলে দেওয়া নির্দেশিকার হুবহু মিল রয়েছে। এভাবে প্রশ্ন ফাঁস হলে শিক্ষার্থীরা কোনো কিছুই পড়বে না, শিখবেও না। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর হওয়া দরকার। রাজধানীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক বলেন, আমরা মঙ্গলবার বিকেলে প্রশ্ন পেলেও কোনো শিক্ষকের কাছে দিইনি। আজ সকালে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে নিজস্ব প্রিন্টারের মাধ্যমে তা প্রিন্ট করে শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে। মূল্যায়ন পরীক্ষা সুন্দরভাবে নিতে আমরা এত চেষ্টা করলাম; কিন্তু অনেকেই সেটি করলেন না। শিক্ষার্থীদের হাতে যদি প্রশ্ন ও উত্তর চলেই যাবে, তাহলে আমাদের দিয়ে এত কষ্ট করানোর তো কোনো মানে নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, আমরা যেভাবে মূল্যায়ন নির্দেশিকা তৈরি করেছি, তাতে প্রশ্ন ফাঁস হলেও খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি এই নির্দেশিকার উত্তরপত্র তৈরি করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়ছেন। এতে মূল্যায়ন কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করছি। কারো মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শুধু কথোপকথনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয়। জোড়ায় জোড়ায় যে দুজন মিলে প্রশ্নের উত্তর লিখবে তাদের মূল্যায়ন কি একসঙ্গে হবে, না আলাদা হবে এটি ষ্পষ্ট নয়। তাই এ বিষয়ে পুরোপুরি মন্তব্য করা যাবে না। তিনি বলেন, পরীক্ষার সময় আলোচনা করে কাল্পনিক চরিত্র সাজিয়ে লেখা এসবের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করা যাবে না। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা নোট বই মুখস্থ করে আসবে। এ ধরনের প্রশ্নপত্রে অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট কিংবা গ্রুপ ওয়ার্ক হতে পারে। কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যায় না। প্রশ্নপত্রে নানা দুর্বলতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান অতিথির জন্য দুজনে তালিকা তৈরি করবে। তারপরে একজনকে প্রধান অতিথি নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু প্রধান অতিথি নির্ধারণে কী যোগ্যতা থাকতে হবে তা প্রশ্নে নেই। কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করে উত্তর লিখে সঠিক অর্থে মূল্যায়ন হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মশিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্নটি গতানুগতিক প্রশ্ন নয়। প্রধান শিক্ষকদের আইডিতে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবে প্রধান শিক্ষকরা ভুল করে সেসব প্রশ্ন শেয়ার করেছেন। এভাবেই এসব প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি হয়তো বড় কোনো সমস্যা হতো না, যদি না এটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে। পরবর্তী পরীক্ষায় প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..