মূল্যবৃদ্ধির পাল্লায় দৌড়াচ্ছে ওষুধের দাম

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

বিশেষ সংবাদদাতা : নিত্যপণ্যের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ওষুধের দাম। চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত সরঞ্জামেরও মূল্যবৃদ্ধিও হয়েছে সমানতালে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এখন নিত্যপণ্যের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এক বেলা ভাত না খেয়ে থাকা গেলেও আক্রান্ত মানুষ ও রোগীদের ওষুধ ছাড়া এক বেলাও চলে না। ওষুধ এখন মানুষের নিত্যদিনের সাথী। অনেকে তো পকেটে ওষুধ নিয়েই হাঁটেন। চলতি বছরের শুরু থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দেড়শ ওষুধের দাম ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ওষুধের। যার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন ও ইনজেকশনের দাম। এ ছাড়া বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল, সর্দি-জ্বরের ক্যাপসুল-সিরাপ, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ওষুধ এবং ভিটামিনের দামও। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ওষুধের কাঁচামাল, মার্কেটিং খরচ ও ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ইচ্ছেমতো ওষুধের মূল্য ধরছে কোম্পানিগুলো। জীবনরক্ষাকারী ওষুধের লাগামহীন দাম রোগীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। ওষুধের দাম খেয়ালখুশিমতো বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিল মাসে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ ও রুল জারি করেন। আদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন ছাড়া ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি, বিদেশি ওষুধ তৈরি ও বিক্রি থেকে বিরত রাখতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুলে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ এর ৩০ ধারার অধীনে সব ধরনের ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি করা অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুচরা ওষুধ বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের অভিযোগ, দেশের ওষুধের বাজারে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মতো দেশের ওষুধের বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ওষুধের মূল্য নির্ধারণে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কিংবা সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায় কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমাফিক ওষুধের দাম বাড়ায়। তাদের মতে, ওষুধের দাম নির্ধারণ করা উচিত জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। এভাবে চলতে থাকলে দরিদ্র, হতদরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার বাইরে চলে যাবে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তবে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামালের খরচ বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে ওষুধ উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন, কর্মচারী খরচ, গ্যাস-বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খরচ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। তাই ওষুধের দাম বৃদ্ধি ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না। রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসীর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানির দাম বাড়ানোর কারণে তাদেরও বাড়তি দামে ওষুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এবার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাইরে থেকে আমদানি করা ওষুধের দাম।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..