পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচন : এ দেশের বাম প্রগতিশীলদের শিক্ষা

কানাই দাশ

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি তৃতীয়বারের মত সাউথ ব্লকে যে প্রবেশ করবে এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে এটা যত না নরেন্দ্র মোদীর সাফল্যের জন্য হবে তার চাইতে বেশি হবে কংগ্রেস ও সেকুলার দাবি করা আঞ্চলিক দলগুলোর অনৈক্য, সুবিধাবাদী সংকীর্ণতা ও সামগ্রিকভাবে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সরকারবিরোধী “ইন্ডিয়া” জোট গঠিত হয়েছিল তার সংহতি, অনৈক্য ও ব্যর্থতার কারণে। নয়তো ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মোদী যে ভন্ডামি নাটুকেপনা, ধর্মের বেসাতি মিথ্যাচারে মানুষকে সম্মোহিত করতে পেরেছিল এবার তা পারেনি। গত দশ বছরে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোদী প্রায় নিজের প্রভাবাধীনে নিয়ে আসে। সিবিআই, ইডি, প্রভৃতি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলো দিয়ে বিরোধীদল ও বিরোধীদল শাসিত রাজ্যগুলোর সরকার ও মন্ত্রীদের নানাভাবে হেয় করে চলেছে। দৃষ্টিকটু ও নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার সর্বোচ্চ প্রয়াস গ্রহণ করেছে। সর্বোপরি ভারতের একজন প্রধানমন্ত্রীর পদের ঐতিহ্যবাহী মর্যাদা সম্পূর্ণ অবমাননা করে সরাসরি গত ১০ বছর ধরে প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক প্রচার ও ভন্ডামি, একচেটিয়া লুটেরা পুঁজির আজ্ঞাবহ হয়ে, চরম ধর্মান্ধতার বেসাতি করে দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর প্রকৃত স্বরূপকে স্পষ্টতর করেছে। তিনি এখন একজন নির্বাচিত স্বৈরশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ভূমিকা না বাড়িয়ে প্রতিবেশী বাংলাভাষী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের নির্বাচন পরিস্থিতি ও এতে বামপন্থিদের ভূমিকা নিয়ে কথা বলার জন্য এ লেখার সূত্রপাত। প্রচণ্ড বাম বিরোধী সুবিধাবাদী ও অনায়াসে অসত্য বলতে পারদর্শী মমতা ব্যানার্জি প্রথমত কংগ্রেসকে ভেঙে পশ্চিমবঙ্গের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ১৯৯৮ সালে মমতার উদ্যোগে ও সমর্থনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে প্রথম পা রাখে এবং ১৯৯৯ সালে লোকসভার নির্বাচনে মমতার পূর্ণ সমর্থনে সেবার দমদম আসন থেকে বিজেপি নেতা তপন সিকদার জয়ী হয়। এভাবেই বিজেপি মমতার হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রবেশ করে । ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় এসে ভূমি সংস্কার, শিক্ষা জাতীয়করণ, পঞ্চায়েতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করে দশ বছরের মধ্যে কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে পশ্চিম বাংলার গ্রামগুলোর চেহারায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে বাম ফ্রন্ট। গ্রাম বাংলা তাদের দূর্গে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে সমাজ ও অর্থনীতির স্থবিরতার মুখে শিল্প উন্নয়নে হাত দেয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের শাসনের কারণে কিছুটা গণবিচ্ছিন্ন, পঞ্চায়েত ও ব্লক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের আত্মম্ভরিতা, অসদাচরণ, তসলিমা নাসরিন ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে মৌলবাদী সংখ্যালঘুদের সহিংসতা, সর্বোপরি শিল্পের জন্য নন্দীগ্রাম নিয়ে অপপ্রচারকে অবমূল্যায়ন করে প্রথম থেকেই কঠোর না হওয়াসহ দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ২০০৯ সাল থেকে বাম ফ্রন্টের সমর্থন কমতে থাকে এবং মানুষের মধ্যে একধরনের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। এতে শামিল হন অপরিণামদর্শী কিছু বুদ্ধিজীবী। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও কংগ্রেস তৃণমূল জোটের কাছে পরাজিত হয়। ক্ষমতায় এসেই সারা পশ্চিমবঙ্গে বাম নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মমতা নজিরবিহীন শ্বেত সন্ত্রাস শুরু করে। সর্বত্রই বামদের দলীয় দপ্তরগুলো উচ্ছেদ বা বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার কর্মীদের হয় জেলে নয়তো এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কয়েকশ কর্মীকে হত্যা করা হয়। এই সুযোগে মমতার আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে এবং কেন্দ্রের সহযোগিতায় বামদের বিকল্প হিসেবে চরম সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তার সাংগঠনিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে ভোটের জন্য মমতা মুসলিম মৌলবাদকে দৃষ্টিকটুভাবে তোষন করা শুরু করে যা এমনকি প্রগতিশীল, কল্যাণকামী মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের ক্ষুব্ধ করে তুলে এবং এর ভবিষ্যত বিরূপ পরিণতির কথা ভেবে তাঁরা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি পর্যন্ত প্রদান করেন। বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিল, কিন্তু মমতার অন্যায় প্রশ্রয়ে বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সন্দেশখালির শাহাজাহান শেখের মত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে কিছু দুর্বৃত্তের আবির্ভাব হয়, যা হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ককে কলুষিত করতে, অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে এবং হিন্দুত্ববাদ প্রচারে বিজেপিকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে। অন্যদিকে তৃণমূলের দ্বারা চরমভাবে নির্যাতিত এমনকি গৃহহীন হয়ে গ্রাম বাংলার অগণিত সাধারণ বাম কর্মী-সমর্থক নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে বিজেপিকে সমর্থন করতে শুরু করে। কেননা তখনো বাম শক্তি গ্রামেগঞ্জে মমতার আক্রমণ মোকাবিলা করে সংগঠিত হয়ে উঠতে পারেনি ক্রমাগত হামলার মুখে। ফলে ১৯৪৭ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্বহীন এই দল ২০১৯ সালের নির্বচনে সবাইকে তাক লাগিয়ে লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয় লাভ করে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের সৃষ্ট বাতাবরণে পশ্চিমবঙ্গ দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। মমতার মন্ত্রীদের অকল্পনীয় দুর্নীতি, ব্যভিচার প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবার বিজেপির আরো সুবিধা হয়েছে। এমতাবস্থায় সিপিআই(এম) এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট প্রাথমিক ধাক্কা ও অপরিমেয় নির্যাতন সামলিয়ে সাংগঠনিক কাঠামো নতুনভাবে গড়ে তুলে গণআন্দোলনে নামে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে লাগাতার প্রচেষ্টায় মমতার ভাষায় নিঃশেষ করে দেয়া বামেরা সম্ভাব্য ফলাফল জেনেও মানুষকে সচেতন করার জন্য সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠিত হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে এবার পূর্ণশক্তি নিয়ে নেমেছে। সিপিআই(এম) বিনা দ্বিধায় প্রবীণ নেতৃত্বের জায়গায় এবার পশ্চিম বাংলায় একটি নবীন প্রজন্মকে নেতৃত্বে নিয়ে এসেছে। কোনো ব্যক্তি ইমেজ বা একক নেতৃত্বে দুই লক্ষেরও বেশি সদস্যের বিরাট এই পার্টি চলছে না, চলছে যৌথ নেতৃত্বে, সম্মত সিন্ধান্তে। কমরেড বিমান বসু, সূর্য কান্ত মিশ্র, মোহাম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীর মত প্রবীণদের উৎসাহে নেতৃত্বে এসে গেছে এবং কমরেড মিনাক্ষী, দীপ্সিতা, পরমবত, ঐষী, সৃজন, প্রতীকউর রহমান প্রমুখ তরুণ নেতারা ইতোমধ্যে পার্টির মুখ হয়ে সারা পশ্চিম বাংলায় মাঠে-ময়দানে, সমাবেশ-মিছিলে বক্তব্যের ঝাঁজে- ঋজুতায় মানুষের কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। যে কংগ্রেস বিরোধিতা ছিল সিপিআই(এম) এর রাজনীতির আজন্ম স্লোগান, যে কংগ্রেসের কারণে ২০১১ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়, কেরলে বামফ্রন্টের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখনো যেখানে কংগ্রেস পরিস্থিতির নির্মোহ বিবেচনায়, সংকীর্ণ ছুৎমার্গ এড়িয়ে বৃহত্তর প্রয়োজনে, কংগ্রেসের সাথে জোট করেছে সুবিধাবাদী, বিজেপিরই একসময়ের জোট সঙ্গী, কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী, প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িক, সংখ্যালঘুদের মৌলবাদী ধারায় নিয়ে গিয়ে ও দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দিয়ে পুরো পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল সমাজ মানসকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করে দেয়া ও বিজেপির মত চরম সাম্প্রদায়িক দলকে বাংলার মাটিতে রাজনৈতিক স্পেস ও সুবিধা দেওয়া মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিপ্লবী কর্তব্যবোধ থেকে। আগামী দিনের পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে অনুপেক্ষনীয় এই শক্তি প্রভাবকের ভূমিকা যে পালন করবে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শক্তির প্রায় সমধর্মী বৈশিষ্ট্যের কারণে কিছু মৌলিক বিষয়ে প্রতিবেশী রাজ্যের রাজনীতি থেকে এ দেশের বাম প্রগতিশীলদের শিক্ষা নেয়া আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি মনে করি আমাদের দেশের রাজনীতির অন্যতম প্রধান সংকট প্রগতিশীল বাম রাজনীতির বহুধা বিভক্তি শুধু নয়, বিদ্যমান দলগুলোর অভ্যন্তরে শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ, আমিত্ব এবং আন্তরিকতার অবলুপ্তি। এজন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মতৈক্য থাকা সত্ত্বেও দলগুলোর মধ্যে ভাঙন ও বিভক্তি চলছে। ওয়ার্কার্স পাটি, বাসদ প্রভৃতির বহুধা বিভক্তি এ কথাই প্রমাণ করে। অথচ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সিপিআই(এম) এর নেতৃত্ব সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে যে নজিরবিহীন কঠিন সংকটে পড়েছিল সে সংকট তারা মোকাবিলা করেছে কমিউনিস্ট কালচার মেনে। সারা ভারতের নির্বাচনী ও রাজনৈতিক শক্তির বিবেচনায়, মূল ক্ষমতার কেন্দ্র হিন্দি বলয় থেকে বামফ্রন্ট আমাদের চেয়েও বহু যোজন দূরে বলে আমার মনে হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মত গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় একটি রাজ্যের রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করে জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপে তথা তার সাম্প্রদায়িক লুটেরা ধারাকে দুর্বল করে ভারতীয় রাজনীতিকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে রাজ্যে রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের বাম শক্তিগুলোর লড়াইয়ের ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্য (range and variety) অনেক কম। কিন্তু এখানে বামেদের অন্তর্গত কোন্দল, পেটিবুর্জোয়া সুবিধাবাদ, বিশুদ্ধবাদী শ্লোগানের আড়ালে নেতাদের নিজস্ব বলয় তৈরির অপচেষ্টা, এইসব কারণে তারা এগুতে পারছে না, যা পশ্চিমবঙ্গের বামদল সিপিআই(এম)-এ দৃশ্যমানভাবে অনুপস্থিত। এদেশে অন্ধ সাম্প্রদায়িক সামাজিক মতস্তত্ত্ব, গণতন্ত্রহীনতা, অর্থনীতিতে লুটেরাদের একাধিপত্য ও জনজীবনের দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক গণসংগঠনের নিজস্ব শ্রেণিসংগ্রাম ছাড়া বিরাজমান সংকট থেকে উত্তরণের যে সহজ কোনো বিকল্প পথ নেই- এটা সবাই বলেন। কিন্তু আন্দোলনের হাতিয়ার গণসংগঠনগুলোকে তারা বিভক্ত করে রেখেছে এবং গণসংগঠনের গণচরিত্র পাল্টে পেশাগত দাবির চাইতেও কথিত রাজনৈতিক আদর্শ গণসংগঠনগুলোর কাছে মুখ্য করে তুলেছে। এদেশে বামেরা দুই বৃহৎ দলের সমালোচনা করেন, কিন্তু নিজেদের দলের ক্রমবর্ধমান বিভক্তি, অবক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি ও শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলেন না। ইতিহাস সাক্ষী বাম-কমিউনিস্টদের ছাত্র-শ্রমিক গণসংগঠনগুলোর শক্তিই মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে আওয়ামী লীগসহ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে দৃঢ়ভাবে প্রগতির পথে পরিচালিত করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে বামেদের নানা দল তথা বামফ্রন্টে তীব্র মতানৈক্য আছে, কিন্তু বৃহত্তম সংগঠন হিসেবে সিপিআই(এম) নিজেকে, নিজের নেতৃত্বকে পরিশুদ্ধ করে অন্য দুর্বল বামদের সাথে নিয়ে দীর্ঘদিন ধৈর্য্য ধরে ঐক্য বজার রেখে চলেছে। সোভিয়েতের ভাঙনের পর গত ৩০ বছর সঠিকভাবেই কোনো কোনো বাম দল নিজেদের অভ্যন্তরে বিলোপবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে এবং এখন কারো সাথে কারো একটু দ্বিমত হলেই বিলোপবাদীর তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এদিকে নিজেরাই নিজেদের হাত-পা কেটে অর্থাৎ গণসংগঠনগুলোকে টুকরো টুকরো করে নিজেদের ক্রমে দুর্বল ও প্রকৃত অর্থে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে লেনিনীয় শিক্ষার বিপরীতে। এরা নিজেদের মধ্যে “কমরেড ইন আর্মস” এর বদলে ক্রমে “কমরেড ইন কনটেস্ট” এর জায়গায় চলে যাচ্ছে। যে কনটেস্ট হবে শ্রেণিশত্রুর বিরুদ্ধে সেই কনটেস্ট রণকৌশল ও মতাদর্শগতভাবে সমিল সহকর্মী ও সহমর্মীদের মধ্যে চলেছে। এভাবে এক সীমিত গোলকধাঁধায় আটকে যাচ্ছে এ দেশের বাম আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি। অথচ পশ্চিমবঙ্গে বামেরা কেন্দ্রে এবং রাজ্যে ক্ষমতাসীন দুই হিংস্র, দাপুটে শক্তির বিরুদ্ধে সমানে লড়ে চলেছে। সেই লড়াইয়ে ঐক্য ও সংগ্রামের এই দ্বৈরথে ও দ্বান্দ্বিক পরিবেশে বামেরা বিভিন্ন রাজ্যে মূর্ত পরিস্থিতিতে মূর্ত বিবেচনায় লড়ে চলেছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট শক্তির সাথে দেশব্যাপী বিশাল লড়াইয়ে বামেদের ধৈর্য্য ও বিচিত্র রণকৌশল, নেতৃত্বের প্রকৃত আন্তরিকতা, কমিটমেন্ট এসব কিছু থেকে এদেশের বাম প্রগতিশীলদের জানা, বোঝা ও শেখার প্রভূত বিপ্লবী উপাদান রয়েছে। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে এই মুহূর্তে এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক সংকট কী- নির্দ্বিধায় উত্তর হবে বাম দলগুলোর সব বিষয়ে সাবজেক্টিভ বিবেচনা, পারস্পরিক ও অভ্যন্তরীণ অবিশ্বাস ও বিভক্তি। এই পরিস্থিতিতে বাম নেতাকর্মীদের রবীন্দ্রনাথের গানের ভাষায় বলবো- “সহজ হবি, সহজ হবি, ওরে মন সহজ হবি”। সমাজ পরিবর্তনের অনিবার্য সত্য ও প্রত্যয় থেকে হেমিংওয়ের কথা একটু ঘুরিয়ে বলতে চাই- “Lefts are not meant for defeat’. লেখক : সভাপতি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, সিপিবি

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..