বাজেট ঘোষণার পূর্বে সিপিবির বক্তব্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ একতা প্রতিবেদক :
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সাধারণ মানুষের জন্য এখন সময়টা ভাল নয়। অধিকাংশ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যয় বেড়েই চলেছে। সবার কাজের নিশ্চিয়তা নেই। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেবে না।
গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ পেশ করার পর এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, এবারের ঘোষিত বাজেট ধনিক শ্রেণির দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় মেহনতি ও নিম্নআয়ের মানুষের উপর চাপাবে। ফলে গরিব মেরে ধনী পোষার অতীতের ধারা এবারেও বাজেটে অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে এই সংকোচনমূলক বাজেট প্রবৃদ্ধি কমাবে কিন্তু বেকারত্ব বাড়াবে।
নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন, অর্থনৈতিক সংকটের মুখে প্রণীত এ বাজেট আয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে সাধারণ জনগণের উপর। কিন্তু জনগণের জন্য বাজেটে কল্যাণমূলক ব্যয় আরও হ্রাস করেছে।
বাজেট ঘোষণার হওয়ার পূর্বে সর্বস্তরের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে একটি সূচক ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে তা হচ্ছে আয় বৈষম্য পরিমাপের সূচক। শহরে বৈষম্য সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের ভাষায় “কেউ থাকেন গাছতলায় আর কেউ থাকেন আকাশচুম্বি অট্টালিকায়”। এই বৈষম্য শুধু আয়ের ক্ষেত্রে সত্য নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনগণের অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক অন্যান্য অধিকারের সকল ক্ষেত্রেই সত্য। আমরা জানি আমাদের সংবিধানে ‘অনুপার্জিত আয়’ এবং ‘শোষণকে’ নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রে শুধু আকাশচুম্বী বৈষম্যই সৃষ্টি হয়নি, এই বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে যুগপৎ ‘অনুপার্জিত আয়’ এবং ‘শোষণ’ প্রক্রিয়াকে ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর করার মাধ্যমে। তাই এবারের বাজেট সর্বমুখী বৈষম্য বৃদ্ধির ধারাকেই আরও বেগবান করবে। আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ কে সামনে রেখে গত ২ জুন দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই অভিমত তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান ও লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, লুনা নূর প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সময়মত সংস্কার না করা, লুটেরাদের কাছে ক্রমাগত আত্মসমর্পণ, বিদেশি তাৎক্ষণিক নির্দেশের কাছে আটকে পড়া, আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের প্রচণ্ড দুর্নীতি ও অদক্ষতা, কোভিড পরবর্তী বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা, জলবায়ু সংকট ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান সংকটের মুখে সরকারের ত্রিশংকু অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখনই জরুরিভাবে প্রতিষেধক ব্যবস্থা না নিতে পারলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিপিবি নেতারা বলেন, মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রবৃদ্ধির গতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী। বিদেশে টাকা পাচারের প্রবণতায় খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। মানুষের বৈষম্য এক দেশে দুই অর্থনীতিকে দৃশ্যমান করে তুলেছে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক বৈষম্য, নারী-পুরুষের বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে অনেক এলাকায় বিশেষত উপকূলীয় এলাকায় জানমালের ও সুপেয় পানির ঝুঁকি বাড়ছে। বৈদেশিক দেনা বাড়ছে এবং ঋণ করে ঋণ পরিশোধের তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। সরকারি তথ্যই বলছে, শহরাঞ্চলে সর্বোচ্চ আয় বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন, অর্থনৈতিক সংকটের মুখে প্রণীত এ বাজেট আয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে সাধারণ জনগণের উপর। কিন্তু জনগণের জন্য বাজেটে কল্যাণমূলক ব্যয় আরো হ্রাস করেছে।