পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস হচ্ছে সবুজ এলাকা ও জলাধার

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
আহমদ মানিক : রাজনৈতিক ক্ষমতা, পেশি শক্তি কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, খেলার মাঠ দখল ও জলাধার ভরাট চলছে শহরের বিভিন্ন স্থানে। নগর-পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা থাকলে তা আছে কাগজে-কলমে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বলেন, কাগজ কলমে আছে এটাই তো বিশাল। দেশে এত এত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পরিবেশবাদী সংগঠন আর মস্তবড় এক প্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ আছে। তারাও তেমনি কাগজে কলমে। চোখ তুলে তাকালে বিল্ডিং দেখি। ডানে-বামে ঘুরলে দেয়াল আর ভবন দেখি। আকাশ দেখি না বাতাস পায় না। ধ্বংস হয়ে গেছে শহরটা। রাস্তায় এখন যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড আর গাড়ির কালো ধোঁয়া তাতে বালু হারিয়ে গেছে। দিনদিন আমরা এতটা নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছি যে আমাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনে প্রকৃতির উপর করাত চালাতে দ্বিধাবোধ করছি না। ব্যক্তি উন্নয়নে এবং উন্নয়ন কাজে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে সবুজ এলাকা ও জলাধারগুলো। এবারের উষ্ণ তাপ আমাদের আভাস দিয়ে গেল। এখনি পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ না নিলে আগামীর প্রজন্ম পর্যন্ত সইবে না আমাদের এই প্রজন্মে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। থাকবে ইট-পাথরের একটা শহর। ২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪.৯৯ শতাংশ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭.১৮ শতাংশ, আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১.৮২ শতাংশে। ২০২৩ সালে বিআইপির প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে, জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২.৯ শতাংশে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। এ ব্যাপারে যানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল রহমান খান বলেন, ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির দায় শুধু বৈশ্বিক নয়। নিজস্ব কারণেই ঢাকার তাপমাত্রা অনেকাংশে বেড়েছে। ঢাকা নগরীর উন্নয়ন দর্শনের গলদের কারণে এমন দশা হয়েছে। এখন যা কিছু করা হোক না কেন, এই শহরকে আদর্শ বা বাসযোগ্য শহরে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না। তবে অনেকাংশে সমস্যা কমানো সম্ভব হবে। এজন্য সরকারকে পরিকল্পিত উপায়ে ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর কলাকৌশল নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে ভক্ষকের অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনা করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা এর অনুপস্থিতি দেখতে পাই। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক হয়ে কাজ করতে হবে। কোনও জনপদের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ গাছপালা থাকা প্রয়োজন। সেই হিসাবে জনসংখ্যার তিনগুণ গাছপালা থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার অবস্থা খুবই খারাপ, যা রীতি মতো চিন্তার বিষয়। প্রয়োজনের তুলনায় সবুজ কমে যাওয়া নগরবাসীর জন্য আরও বিপদ ডেকে আনছে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..