মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, ঘেরাও কর্মসূচি

ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে শ্রমিকরা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করতে গেলে প্রেসক্লাবে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে
একতা প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত ড্যানিস নিটওয়্যারের মালিক বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করে ছুটির সময় শ্রমিকদের না জানিয়ে মেশিনপত্র অন্যত্র নিয়ে যায়। ঈদের পর কারখানা না খুলে উপরন্তু সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন, কারখানা চালু এবং শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে গত ৬ মে থেকে ঢাকাস্থ শ্রম ভবনের সামনে ড্যানিস নিটওয়্যারের নয় শতাধিক শ্রমিকদের টানা অবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ ও ঘেরাওসহ নানাবিধ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। গত ৬ মে উক্ত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা কাজী রুহুল আমিন, জালাল হাওলাদার, মাফুজুল ইসলাম, জাহানারা ঈমাম, সোহেল রানা, সুমা আক্তার, লাকী আক্তার, মো. ফিরোজ প্রমুখ। কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মালিকের সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শ্রমিকরা গত ৭ মে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পেশ করেছেন। নয় শতাধিক শ্রমিকের স্বাক্ষরিত আবেদনটি পেশ করার পূর্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন বলেন, গত ২৫ এপ্রিল ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গকারী মালিককে ধরে এনে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে অন্যথায় একটি কারখানার এই আন্দোলন জাতীয় শ্রমিক আন্দোলনে রূপ নিবে। মালিক কোনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি দপ্তরের সাথে সম্পাদিত চুক্তি করে নানা রকম ষড়যন্ত্র ও কারসাজি করে চলছে। গত ২৫ এপ্রিলের সভায় মালিকপক্ষ স্বীকার করে বলেছে যে, তারা শ্রমিকদের কাজে যোগদানের তারিখ পরিবর্তন করে সার্ভিস বেনিফিট মেরে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তা সংশোধন করে ৫ মে’র পূর্বেই প্রকৃত যোগদানের তারিখ ঠিক করে দিবেন কিন্তু তা করা হয়নি। অন্যান্য বকেয়া পাওনাও পরিশোধ করার কথা তারও কোনো উদ্যোগ দেখছি না। ৫ মে চূড়ান্ত সভা করে শ্রমিকদের দাবি অনুসারে কারখানা চালুসহ অন্যান্য বিষয় সমাধান করবেন। সরকারের পক্ষ থেকে ৫ তারিখ সভা আহ্বান করা হয়েছিল কিন্তু মালিক সে সভায় না এসে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। এমন অবস্থায় অতিসত্বর মালিক কে ধরে এনে পূর্ববর্তী চুক্তি এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের দাবি জানান শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমিন। প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিলসহ সচিবালয় অভিমুখী যাত্রা শুরু করলে পুরানা পল্টন মোড়ে পুলিশি বাঁধার মুখে পড়লে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিকরা। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা জালাল হাওলাদার, এম এ শাহীন, সোহেল রানা, সুমা আক্তার প্রমুখ। পরবর্তীতে শ্রমিকনেতা জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি টিম শ্রম প্রতিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। একই দাবিতে গত ৯ মে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি পেশ করার পূর্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল শুরু করলে পুলিশ বাধা প্রদান করে চড়াও হয়ে শ্রমিক এবং নেতৃবৃন্দকে শারিরীকভাবে আঘাত করে। তাৎক্ষণিক সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন পুলিশের এহেন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, চুক্তি এবং আইন অমান্যকারী মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উপরন্তু শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা প্রদান করে মালিকদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ বাহিনী অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টকে বিবেচনায় না নিয়ে বরং শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দেওয়ার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ড্যানিস নিটওয়্যারের শ্রমিক লাকী আক্তারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সহ-সভাপতি শ্রমিকনেতা হাফিজুল ইসলাম, জালাল হাওলাদার, জয়নাল আবেদীন, সোহেল রানা, সুমা আক্তার প্রমুখ। ড্যানিস নিটওয়্যারের ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন ও কারখানা চালুর দাবিতে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসাবে গত ১০ মে বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিকনেতা লাকী আক্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর দপ্তর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, মো. নুরুল ইসলাম, সোহেল রানা, সুমা আক্তার, নাজমুল হাসান, শাহনাজ পারভীন প্রমুখ। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টকে বিবেচনায় না নিয়ে বরং শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দেওয়ার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, শিল্পে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র বন্ধ করে সরকার, মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সম্পাদিত ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন ও ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নিয়ে যুক্তিযুক্ত সমাধান করতে হবে অন্যথায় আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে, শিল্পে অসন্তোষ তৈরি হবে, তার দায় মালিকদেরই নিতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ড্যানিস নিটওয়্যারের শ্রমিকদের এই ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..