গণবিরোধী সরকারকে পরাজিত করতে রাজপথে নেমে আসুন

আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
গত ৪ মে থেকে সরকার কর্তৃক যাত্রীবাহী ট্রেনের রেয়াত-সুবিধা প্রত্যাহার করায় আন্তনগর, মেইল, লোকাল ও কমিউটার- সব ধরনের ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণে ভাড়া বেড়েছে। এতে ১০১-২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া বাড়বে ২০ শতাংশ, ২৫১-৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া বাড়বে ২৫ শতাংশ এবং ৪০১ কিলোমিটারের বেশি পথে ভ্রমণে ভাড়া বাড়বে ৩০ শতাংশ। ১৯৯২ সালে চালু হওয়া দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতের মধ্যে সেকশনভিত্তিক রেয়াত ২০১২ সালে প্রত্যাহার করা হয়। সরকারের বর্তমান ঘোষণায় বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে রেলে যাত্রী পরিবহণে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৩৯ পয়সা। এর সঙ্গে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণির বিভিন্ন হারে ভাড়া যোগ হয়। সঙ্গে যোগ হয় ভ্যাট। এভাবেই মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ সালে রেলের ভাড়া গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। একই সরকারের আমলে ২০১৬ সালে আরেক দফা সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো হয়। এবার সরাসরি ভাড়া না বাড়িয়ে বেশি দূরত্বে ভ্রমণের রেয়াত প্রত্যাহার করে সরকার আম-জনতার বাহন রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। রাজস্ব ঘাটতি ও রেলের বছরে দুই হাজার কোটি টাকা লোকসানের দোহাই দিয়ে সরকার এবার ভাড়া বৃদ্ধি করছে। এ ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষ বছরে তিন’শ কোটি টাকা আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের কারণে ১ হাজার ৩৪টি স্টেশন-টু-স্টেশন নতুন ভাড়ার অধীনে আসবে। নতুন তালিকা অনুযায়ী ৪ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭৭ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩৪০ ও ৬৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৪০৫ ও ৭৭১ টাকা। ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩২০ ও ৬১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৩৭৫ ও ৭১৯ টাকা। ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০০ ও ৯৫৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৬২৫ ও ১১৯৬ টাকা। ৭ জানুয়ারি ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মত ক্ষমতাসীন হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি সেবাখাতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় আছে। গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও ভোক্তা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার তারা আগামী তিন বছরে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অগ্রিম ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারির চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার শর্তানুযায়ী সরকার আগামী তিন বছর প্রতি বছর চারবার করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ আগামী তিন বছরে মোট ১২ দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিশ্চিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান করে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট, যদিও এখন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের নিচে। ফলে সব সময়ই বিদ্যুতকেন্দ্রের একাংশকে বসিয়ে ভাড়া দিতে হয়, যা ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ (কেন্দ্র ভাড়া) নামে পরিচিত। বছরে এর পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ বসিয়ে রেখে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে টাকার অংকে সেটি বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। গত ১৪ বছরে ১০৩টি কোম্পানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর ৯ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ ধরলে ৪ কোটি ৫৬ লাখ গ্রাহককে প্রতিবছর শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের জন্য ১,৯৭৫ টাকার ভার বহন করতে হয়। ইতোমধ্যে আইএমএফ-এর নির্দেশে সরকার তেল ও গ্যাসের দাম নিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করেছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশে বাড়বে, কমলে কমবে। মার্চ মাসে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা। অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২৬ টাকা। আর পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২২ টাকা। শতাংশের হিসাবে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমছে ০.৬৮%, অকটেনের ৩% ও পেট্রোলের ২.৪%। কিন্তু ২০২২ সালের আগস্টে যখন দাম বাড়ানো হয়েছিল তখন সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছিল ৪২%। সম্প্রতি সরকার বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ৩ পয়সা কমিয়েছে। নগর পরিবহনে এর কোনো লাভ যাত্রীরা পাননি। এমনকি দূরপাল্লার বাস ভাড়া কমার কোনো লক্ষণও নেই। ২০২৪ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৯.৮৬, ৯.৬৭ ও ৯.৮১ শতাংশ। কিন্তু এপ্রিল-মে মাসে এসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বলে দাবি করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। পনের বছর আগে ২০০৯ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভাত ও ভোটের অঙ্গীকার করে ক্ষমতাসীন হয়েছিল। গত পনের বছরে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। দুটিতে কোনো বিরোধীদল অংশ নেয়নি। একটি নির্বাচন হয়েছে রাতে। তিনটি নির্বাচনেই জনগণের অংশগ্রহণ অপ্রতুল। জনগণের সম্মতি ছাড়াই তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে ‘নৌকা আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামী লীগে’ পরিণত করে সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে অধপতিত করেছে। চলমান উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফায় নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটার ভোট কেন্দ্রে গেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, ভোট, ভোট ব্যবস্থার পরিপূর্ণ সর্বনাশ করেছে। অপরদিকে ভাতের আশ্বাস দেয়া আওয়ামী লীগের টানা পনের বছর শাসন আমলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে। দুর্নীতি, অপশাসনে মানুষ জর্জরিত। একতরফা আমি-ডামির নির্বাচনে চতুর্থবারের মত ক্ষমতাসীন হয়ে রেল-বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-খাদ্যদ্রব্য সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধি করছে সরকার। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। লুটেরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থের এ সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। রাজপথে লড়াইয়ের মাধ্যমে হাসিনা জুলুমশাহীর পরাজয় নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ লড়াইয়ে বাম-কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে গরিব-মেহনতি মানুষকে রাজপথে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রথম পাতা
বাঁওড় ইজারা বাতিল ও জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ
সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও ঊধ্বমুখি দাম অনেক পণ্যে
শ্রেণিদৃষ্টিতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চিত্তভূমি
খুন-ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের আহ্বান
ধর্ষণ-নিপীড়নকারী ও মব সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার কর
কমরেড লাকী আক্তারের বিরুদ্ধে মব সন্ত্রাস বন্ধের আহ্বান সিপিবির
গণতন্ত্র রক্ষায় বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যের বিকল্প নাই
‘ছায়া’
হামলা-মামলার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে বামজোটের বিক্ষোভ সমাবেশ
দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ব্যর্থ হচ্ছে
নারীর জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে সংগ্রাম জোরদার করুন

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..