রেড আর ইয়েলো জোনে বন্দি দেশের ব্যাংকগুলো

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্যের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। সবল ব্যাংকের তুলনায় দেশে এখন দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। নিয়মনীতি না মানা, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বহীনতা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শিথিলতা, অর্থ পাচার, সেচ্ছাচারিতা, ঋণখেলাপি ইত্যাদিকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার সমীক্ষাও এসব তথ্য জানা যায়। তার মধ্যে ১২টি ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ; এর মধ্যে ৯টি ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। বাকি ৩টির অবস্থান ইয়েলো জোনে, অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি। সব মিলিয়ে ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনের দাবি– স্বাস্থ্য ভালো আছে মাত্র ১৬টি ব্যাংকের। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে ৫৪টি ব্যাংকের এই স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ। এই স্বাস্থ্য সূচক অনুযায়ী মধ্যে যে ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে বা ভালো অবস্থায় রয়েছে, তার মধ্যে ৮টি বিদেশি ও ৮টি দেশি ব্যাংক। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ভালো অবস্থায় রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। রেড জোনে থাকা ব্যাংকগুলো হলো– বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। ৩টি ইয়েলো জোনে থাকলেও রেড জোনের কাছাকাছি থাকা ব্যাংকগুলো হলো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), সোনালী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ইয়েলো জোনে থাকা ২৯টির মধ্যে ২৬টি ব্যাংক হলো– আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল আরাফাহ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, গ্লোবাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা, মধুমতি, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে একটা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এখানে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। চলতি বছরের ব্যালেন্স সিটের ওপর ভিত্তি করে এটা করা হবে। যেটা কার্যকর হবে ২০২৫ এর মে মাস থেকে। প্রতিবেদনটিতে সব ব্যাংককে আন্তর্জাতিক রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মের অধীনে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তা হলো– মূলধনের পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণমান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন, তারল্য এবং বাজারের ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা। এতে রেটিং ১ সেরা এবং রেটিং ৫ সবচেয়ে খারাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর আগে, ২০২২ সালের ১২ জুলাই আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। ওই বছরের ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেন তিনি। কিন্তু গত দেড় পার হলেও এ ১০টি ব্যাংকের অবস্থারও উন্নতি হয়নি। এসব ব্যাংকের অধিকাংশের অবস্থান এখন রেড জোনে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..