সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানানোর ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন করা চলবে না

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে সংস্কারের নামে ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলা, যাতায়াতের পর্যাপ্ত সুবিধাবঞ্চিত শহরের উপকন্ঠে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ বানিয়ে জেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন এবং জাতীয় দিবসে সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানানোর ঐতিহ্য ক্ষুন্নের অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটি। এসব ঘটনাকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত উল্লেখ করে গত ২৬ মার্চ গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এই প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র কে সি দে রোডে বিদ্যমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ষাটের দশক থেকে বাঙালির সকল প্রতিবাদ, আন্দোলন-সংগ্রাম, ঐতিহ্য-সংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। বাঙালির মুক্তি ও স্বাধিকারের আন্দোলনের পটপরিক্রমায় এবং পরবর্তীতে দেশের সকল গণআন্দোলনে এ শহীদ মিনার সর্বস্তরের মানুষের আবেগের ঠিকানা হয়ে উঠেছিল। একুশের প্রভাতফেরি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে আসছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী সর্বস্তরের জনতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সংস্কার ও আধুনিকায়নের নামে গত তিনবছর ধরে শহীদ মিনারটিকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে সেটি খুলে দেয়ার পর দেখা যায়, প্রাণের স্থাপনাটিকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা হয়েছে। সুড়ঙ্গপথ, দু’পাশে ইটের দেয়াল বানিয়ে শহীদ মিনারটিকে চোখের আড়াল করে ফেলা হয়েছে। দেখে মনে হয়, এটি যেন একটি ইট, কাঠ আর পাথরের জঞ্জাল! সর্বস্তরের রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেটি পুনঃসংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হলেও বাস্তবে তা কতটুকু আলোর মুখ দেখবে আমরা সন্দিহান। এখনও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে শহীদ মিনারটি, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করছে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ব্যবহার করতে না পারায় সিটি করপোরেশনের নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এতদিন জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিলেন। এবার সেই সম্মিলনেও বিপত্তি তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে সাগরপাড়ে একটি অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে। বলা হচ্ছে, সেখানেই পরবর্তীতে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি চট্টগ্রামবাসীর ছিল। কিন্তু সেটি নির্মাণের আগে চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন, পেশাজীবী, ছাত্র, যুব এবং সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে একবারও আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি জেলা প্রশাসন, এটা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। শহরের উপকন্ঠ দক্ষিণ কাট্টলী, সেখানে রিজার্ভ গাড়ি ছাড়া সহজে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। জনমানবহীন-নির্জন ওই এলাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আগে একবারও কেন চিন্তা করা হলো না, সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে শ্রদ্ধা জানাতে যাবে? এমনটাই প্রশ্ন নেতাকর্মীদের। বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষের মতামত না নিয়ে আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে স্মৃতিসৌধ বানিয়ে এখন জেলা প্রশাসক অনেকটা হুকুম দিচ্ছেন সেখানে সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে। নিজেরাই বাসে করে লোকজন নিয়ে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মতো একটি আয়োজনকে হাস্যকর করে তুলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ তার হৃদয়ের অনুভূতি-আর্তি থেকেই শহীদ মিনারে যান। সেই অনুভূতি নিয়ে এমন ছেলেখেলা কাম্য নয়। এমন কর্মকাণ্ড বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সম্মিলিত আয়োজনকে খণ্ডিত করেছে, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিনষ্ট করেছে, যার প্রমাণ আমরা এবার স্বাধীনতা দিবসে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পৃথক আয়োজনের মধ্যে পেয়েছি। আমরা এর তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ সিপিবি নেতারা আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে তার আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, ছাত্র, যুব, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে হবে। বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সম্মিলিত আয়োজনের ঐতিহ্য কোনোভাবেই খর্ব করা চলবে না।’ নেতৃবৃন্দ দাবি জানিয়ে বলেন, এমন অপচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সিপিবি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, ছাত্র-যুব ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..