অবৈধভাবে হকারদের উচ্ছেদ করলে তাৎক্ষণিকভাবে নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়াও ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়
একতা প্রতিবেদক :
সারাদেশে খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থান উচ্ছেদ করাকেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করেছে নতুন সরকার। তারা নির্বিচারে সারাদেশে হকার, ব্যাটারিচালিত যানবাহন, দিনমজুরদের রুটি-রুজির অবলম্বন বন্ধ করার অভিযান পরিচালনা করছে। অবিলম্বে পুনর্বাসন বা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়া সকল উচ্ছেদ ও জুলুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সর্বত্র ক্ষমতাসীনদের মধ্যে নতুন করে দখল ও বণ্টন চলছে। তারই অংশ হিসেবে গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের কর্মসংস্থান থেকে উচ্ছেদ করে শত কোটি টাকার চাঁদাবাণিজ্যে নতুন কর্ণধার নির্ধারণ করতে মানুষকে নিঃস্ব করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করলেই বাজার পরিস্থিতি আরও বেসামাল হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষ বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কোনোমতে বাঁচতে পারছে না। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নিচ্ছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ সারাদেশের মেহনতি জনতাকে জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, সিলেট, ঢাকার সাভার ও নিউমার্কেটে নির্বিচারে হকার উচ্ছেদ ও মালামাল ধ্বংসের প্রতিবাদে এবং জীবিকা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করার দাবিতে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাশিম কবীরের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক জসিম উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা শ্রমিকনেতা জলি তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, সহ-সভাপতি বিমল দাস, মঞ্জুর মঈন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক আনিস পাটোয়ারি, কেন্দ্রীয় নেতা মো. ফিরোজ, আব্দুল মজিদ, হকারনেতা হোসেন মোল্লা, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।
সমাবেশে হকার নেতৃবৃন্দ বলেন, রোজার আগে চলমান হকার উচ্ছেদ বন্ধ না হলে লক্ষাধিক হকার পথে বসবে। সরকার বড় বড় পুঁজির মালিকদের নানান সুবিধা দিলেও ক্ষুদ্র পুঁজির এ ব্যবসার উপর আঘাত করছে। হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা একটি প্রচলিত পেশা। নগরজনপদের বিকাশের সাথে সাথে এই পেশার ব্যাপ্তি এবং পরিসর আজকের রুপ লাভ করেছে। একই সাথে দীর্ঘ সময় ধরে এই দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের রুটি-রুজির অর্থনৈতিক কাজের সাথে নানান কায়েমি স্বার্থ জড়িত হয়েছে। নগর উন্নয়নে হাজার হাজার প্রকল্প এবং বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও কখনই বিপুল হকার জনগোষ্ঠীর জন্য স্থায়ী পুনর্বাসন, টেকসই প্রকল্প গৃহীত হয়নি।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হকার উচ্ছেদ বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন এবং জীবিকা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জ : হকারদের পুর্নবাসন ব্যবস্থা ও ফুটপাতে
বসে দোকানদারি করে রোজগার করার অধিকারের দাবিতে হকার সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হকার সংগঠনের জোট হকার সংগ্রাম পরিষদ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া শহীদ মিনারে সমাবেশ করে দুপুর ১১ টায় মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক অফিসে গিয়ে স্বারকলিপি দেয়া হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হকার্স সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদ, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা হাফিজুল ইসলাম, জেলা কমিটির সভাপতি আ. হাই শরীফ, সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম, জেলা কমিটির সদস্য এম এ শাহীন, হকার্স লীগের মহানগর কমিটির সভাপতি রহিম মুন্সী, সাধারণ সম্পাদক মো. পলাশ, হকার নেতা সালাম, শাহীন, সোহেল, তাসির প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, হকাররা ফুটপাতে বসে দোকানদারি করে জীবীকা নির্বাহ করে। তাঁরা উচ্ছেদ হলে কোথায় যাবে, কি করে খাবে, কিভাবে বাঁচবে? সেই বিষয় ন্যূনতম বিবেচনায় না নিয়ে হকার উচ্ছেদের যে সিদ্ধান্ত তা নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ হাজার হকারকে চরম বিপদে ফেলে দেয়েছে। এই অমানবিক ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। বর্তমান সরকার উন্নয়নের নামে গরিব-মেহনতি মানুষের রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। দেশে কোটি কোটি যুবক বেকার তাঁদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা না করে উল্টো যারা নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে তাঁদের রোজগারের পথ বন্ধ করে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিচ্ছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কর্ম করে খাওয়া ও বাঁচার অধিকার আছে। পুর্নবাসন ছাড়া কাওকে কোন স্থান থেকে উচ্ছেদ না করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও স্থানীয় সংসদস্যরা সুন্দর নগরী গড়ার নামে হকারদের উচ্ছেদ করে তাঁদের পেটে লাথি মারছে। গত এক সপ্তাহ যাবত হকাররা ফুটপাতে দোকানদারি করতে না পরায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম সংকটে দিনাতিপাত করছে।
শ্রমিক নেতারা বলেন, হকারদের পুর্নবাসন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ফুটপাতে বসে দোকানদারি করার সুযোগ দিতে হবে। স্বারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা অত্যন্ত গরিব মানুষ, দীর্ঘদিন যাবত শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে বসে দোকানদারি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবের গোলটেবিল আলোচনায় সিটি কর্পোরেশন মেয়র, নারায়ণগঞ্জ (৪) আসনের সংসদ সদস্য ও (৫) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সম্মানীত ব্যক্তিদয়ের উপস্থিতে হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই আমরা চরম সংকটে দিনাতিপাত করছি। তাঁর মধ্যে ফুটপাতে বসে হকারি করা বন্ধ করে দেয়া মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো।