প্রযুক্তির জালে বন্দি মানুষ অনলাইন নির্ভরতা বাড়ছে
একতা প্রতিবেদক :
আধুনিকতার ছোড়ায় প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বিনোদনে ঝুঁকছেন মানুষ, হয়ে উঠছে অনলাইননির্ভর। সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, টেলিভিশনের দিকে নজর বেশিরভাগ মানুষের। নিজেদের সময় দেওয়ার বদলে মোবাইল, ল্যাপটপের স্ক্রিনে বেশি সময় দিচ্ছেন সবাই। প্রযুক্তির জালে বন্দি হয়ে পড়েছে নাগরিক জীবন। রাজধানীতে শিশুদের খেলার মাঠ, খোলা জায়গার ভীষণ সংকট। শহরে স্বল্প জায়গার বাসায় শিশুদের বড় করে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা। তাই শিশুদের বিনোদন দিতে সহজমাধ্যম হিসেবে বসিয়ে দিচ্ছেন টেলিভিশনের সামনে, হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন মোবাইল। কার্টুন আসক্ত আর ভিডিও গেমে সময় পার করছে শিশুরা। খাওয়া-ঘুম নিয়মিত করার মতো মোবাইল ব্যবহার হয়ে উঠেছে নিত্য কাজ। ইন্টারনেট সাপ্লাই ও ব্রডব্যান্ড সহজলভ্য হবার কারণে নাগরিক জীবনে শিশু থেকে বাবা-মা কিংবা কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র প্রযুক্তিনির্ভর মানুষের সংখ্যাই বেশি।
তবে এর বেশিরভাগ প্রভাব পড়ছে কোমলময়ী শিশুদের অন্তরে। ভার্চুয়াল জগতের গতিকেই বাস্তব মনে করে শিশুরা। ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থেকে দুটি জাগরিত চোখকে সারাক্ষণ নিবদ্ধ করে রাখছে মোবাইল স্ক্রিন, ল্যাপটপ কিংবা টিভির পর্দায়। বই পড়ায় নেই আগ্রহ।
রাজধানীতে বসবাসকারী সাইফুল মাসুম বলেন, গ্রামের খোলা জায়গায় শিশুরা তবু হেসে-খেলে কিছুটা সময় কাটাতো। বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে খেলত। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে। রাজধানীর এই দুই রুমের বাসায় ঠিকমতো আলো-বাতাস ঢোকে না। দিনের পর দিন ছেলেমেয়েদের মোবাইল ইন্টারন্টে দিয়ে আটকে রাখতে বাধ্য হচ্ছি। কিছুদিন ওদের বই পড়তে উৎসাহিত করেছিলাম। কিন্তু অনলাইন থেকে কিছুতেই দূরে রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ফোন হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। শুধু শিশুরা নয়, সব শিশুরা না আমাদের মতো বয়সী মানুষদেরও প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রবণতা।
অনেকক্ষণ ধরে স্ক্রিনে থাকার কারণে সবার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে থাকে এবং কথা বলতে ভালো লাগে না। চোখ টনটন করতে থাকে, ঘাড় ব্যথা করে, হাত অবশ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি অনেক বেশি, হতে পারে বড় ধরনের রোগ বলছেন চিকিৎসকরা।
২০১৪ সালে অস্ট্রিয়ার একদল গবেষক কয়েক হাজার নারী-পুরুষের ওপর গবেষণা চালান। এদের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে না, অন্য অংশ বিশেষভাবে এর প্রতি আসক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ব্যবহার করেন না তাদের চেয়ে যারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়মিত ব্যবহার করেন তাদের মেজাজ বেশি খিটখিটে এবং অস্থির মনের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রাসেল বলেন, অনেক সময় চিন্তা করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকবো। কিন্তু চেষ্টা করেও পারলাম না। পড়াশোনা থেকে কমিউনিকেশন সবকিছু অনলাইননির্ভর। কখন কোন ক্লাস কোন নোট দিল কে আছে কে নাই সবকিছু জানার জন্যে হলেও সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে হচ্ছে। একবার চালাতে শুরু করলে আর বের হতে পারি না।
সিদ্ধেশ্বরী কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাবা ল্যাপটপে অফিসের কাজ করে থাকেন, মা আর ভাই নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখেন। খাওয়ার টেবিল ছাড়া আমাদের কথাই হয় না। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা অসামাজিক হয়ে পড়ছি। সব বুঝতে পারি তবুও এই আসক্তি থেকে বের হতে পারছি না। তবে আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্যে হলেও এসব বর্জন করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়। সম্প্রতি এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির মূল প্রতিষ্ঠান মেটা জানায়, ফেসবুকে সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ তিনের তালিকায়। বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪৮ হাজার। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করে। যার মধ্যে পুরুষ ব্যবহারকারী প্রায় ৬৮ শতাংশ। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি (৪৪ শতাংশ) ফেসবুক ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ পরিচালিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে ৬২ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত; যা উদ্বেগজনক। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালে ৫২০ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবককে নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এর সময় অনেক বাংলাদেশি যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ে, যারা বর্তমানে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছে। আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফেসবুকে আসক্ত। স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রভেড সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম মোহিত কামাল বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য তরুণকে আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তাদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক ইউটিউবসহ অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। তারা ভার্চুয়াল দুনিয়ার মতো বাস্তবেও সবকিছু ওভাবেই পেতে চায়। এতেই বাধে বিপত্তি। এখন সব বয়সী মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের আসক্তি বেড়েছে। মাদকের চেয়ে কোনো অংশে এই আসক্তি কম নয়। ঘুম কমিয়ে মনকে অসুস্থ করে দিচ্ছে অত্যাধিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
প্রথম পাতা
খুন-ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের আহ্বান
ধর্ষণ-নিপীড়নকারী ও মব সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার কর
বাঁওড় ইজারা বাতিল ও জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ
সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও ঊধ্বমুখি দাম অনেক পণ্যে
শ্রেণিদৃষ্টিতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চিত্তভূমি
দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ব্যর্থ হচ্ছে
নারীর জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে সংগ্রাম জোরদার করুন
কমরেড লাকী আক্তারের বিরুদ্ধে মব সন্ত্রাস বন্ধের আহ্বান সিপিবির
গণতন্ত্র রক্ষায় বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যের বিকল্প নাই
‘ছায়া’
হামলা-মামলার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে বামজোটের বিক্ষোভ সমাবেশ
Login to comment..