লুটেরা ব্যবসায়ীদের দখলে যাচ্ছে সবকিছু
ভাষ্যকার
সমাজে-রাষ্ট্রে ধর্মের প্রভাব যেকোনো সময়ের তুলনায় ঢের বেশি। এর ফলে যদি সমাজে মানবতা, ন্যায্যতা, ন্যায়পরায়ণতার প্রসার ঘটতো তাহলে তা প্রশংসনীয় হতো নিঃসন্দেহে। কিন্তু বাংলাদেশে বরং ঘটছে উল্টোটা। শহরে যেসব সড়কের পাশে মসজিদ আছে, সেসব সড়ক দিয়ে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কোনো মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে যাওয়ারও উপায় থাকে না। বিশ্বের সব দেশেই ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানো হলেও এদেশে উল্টো বাড়ানো হয়। প্রতিবছর দেশে রমজান মাস সামনে রেখে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। রমজানের কয়েক মাস আগেই নীরবে তারা বাড়িয়ে দেয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম, যেন রমজানের শুরুতে কিংবা কয়েকদিন আগে এসব পণ্যের দাম বাড়াতে না হয়। কেউ যেন বলতে না পারে ‘রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে’। আবার রমজানের ঠিক আগমুহূর্তে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসায়ীরা পরিকল্পনা মাফিক কোনো কোনো পণ্যের দাম কিছুটা কমিয়েও দেয়। তাদের এই অপকৌশল চলছে বছরের পর বছর। এর মাধ্যমে তারা প্রতিবছর নিরীহ ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয় হাজার কোটি টাকা। এবারও সেই চক্রটি একই কৌশল অনুসরণ করছে। রমজাননির্ভর পণ্যের দাম দুই মাস আগেই তারা বাড়াতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম ‘সহনীয়’ রাখতে সরকার ভোজ্যতেলের (সয়াবিন ও পাম তেল) ভ্যাট এবং চিনি, চাল ও খেজুর আমদানির শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি। উল্টো পাইকারি বাজারেই দাম বেড়েছে তেল ও চিনির। ফলে ভোক্তার স্বার্থের জন্য শুল্কছাড়ের সুবিধাও ঢুকে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের পকেটে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে গত ৭ জানুয়ারি ‘আমি বনাম ডামি’র ভোটে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়েই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের আনার ওপর জোর দিয়েছে। আহসানুল ইসলাম টিটু ১৪ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েই নতুন দায়িত্ব ও নিজের কর্মপরিকল্পনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষেত্রে যা যা করণীয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তা করা হবে। এরপর থেকে বিভিন্ন সংস্থাকে নানা স্থানে বাজারে অভিযান চালাতেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। উল্টো কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে কোনো কোনো পণ্যের দাম। যেমন চলতি সপ্তাহে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত। মসলাজাতীয় পণ্যটির এই ভরা মৌসুমেও দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের অজুহাত সরবরাহ সংকট। একই অজুহাত দেখিয়ে গত জানুয়ারির শেষ দিকে এক দফা বাড়ানো হয়েছিল পেঁয়াজের দাম। এর আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে প্রতি কেজি দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ২৪০ টাকা পর্যন্ত।
ক্রেতারা বলছেন, এবার পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি কোনো যুক্তিতেই খাটে না। কারণ, ডিসেম্বরে বাজারে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠেছে। এই পেঁয়াজ বাজারে উদ্বৃত্ত থাকতে থাকতেই মূল পেঁয়াজ অর্থাৎ হালি পেঁয়াজ বাজারে আসবে; যাতে আগামী কয়েক মাসেও দেশে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তাই এবারের দাম বাড়ার মূল কারণ ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দাম বাড়ালেই বেশি লাভ। এ কারণেই ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে দাম বাড়াচ্ছেন। ভোক্তার প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে ব্যবসাবান্ধব না হয়ে জনবান্ধব হতে হবে।
কিন্তু নাগরিকদের প্রত্যাশামাফিক সরকারের পক্ষে ব্যবসাবান্ধব না হয়ে জনবান্ধব হওয়া আদৌ সম্ভব? এ প্রশ্নে উত্তর পাওয়া যাবে বর্তমান সংসদ, বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও সরকারের দিকে তাকালেই। দেখা যাচ্ছে, আগের সব রেকর্ড ভেঙে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অন্তত ১৯৯ জন ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। স্বাধীনতার পর সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিটি সংসদেই ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে নব্বইয়ের পর থেকে এই সংখ্যা বেড়েছে অধিক হারে। বিদায়ী সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ১৮২। তবে সব রেকর্ড ভেঙেছে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই ব্যবসায়ী।
জাতীয় সংসদে ও রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের এই ক্রমবর্ধমান আধিপত্য রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদেরই কোণঠাসা করে ফেলছে। সংসদের মৌলিক চরিত্রই এর ফলে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ‘নীতিকাঠামো দখল’ করছেন নিজেদের ‘অর্থসম্পদ ও ব্যবসা বিকাশের’ স্বার্থে। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে যে বিনিয়োগ করছেন, তা করছেন মূলত নিজেদের সম্পদ আরও বাড়ানোর জন্য।
দেশের আইনপ্রণেতা হিসেবে এবং রাজনীতিতে আইনজীবীদের একসময় দাপট ছিল। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বড় সংখ্যায় তাঁদের ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। তবে গত ৩০ বছরে বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনজীবীদের অংশগ্রহণ কমেছে, বেড়েছে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৮ শতাংশ আর আইনজীবী ৩১ শতাংশ। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদে ব্যবসায়ীদের হার বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়। আর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ৩০০ জন সদস্যের মধ্যে ৬২ শতাংশই ছিলেন ব্যবসায়ী। বাকিদের মধ্যে আইনজীবী ১৪ শতাংশ, কৃষিজীবী ৪ শতাংশ এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন ৭ শতাংশ।
সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাড়েনি। তাঁদের রাজনৈতিক শক্তিমত্তা আসে ব্যবসায়ী হিসেবে অর্থের মালিক হওয়ার কারণে। অর্থের জোরে তারা বড় দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন। পরে নির্বাচিত হয়ে সংসদে নিজেদের স্বার্থে আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখছেন। ব্যাংকিং, পোশাকশিল্প বা বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে নীতিকাঠামো ঠিক করছেন ব্যবসায়ীরাই। তারা সংসদের মৌলিক চরিত্র বদলে দিচ্ছেন। গত জাতীয় সংসদে ব্যাংকিং কোম্পানি আইনে এমন পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যা এমনকি মন্ত্রিসভার বৈঠকেও প্রস্তাব করা হয়নি। সংশোধিত আইনে ব্যাংক মালিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ব্যবসায়ী আইনপ্রণেতাদের কারণেই দেশের বিজ্ঞানীদের উৎপাদিত কোভিড টিকার অনুমোদন বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়। দেশের বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত পাটের পলিমারের ব্যাগ উৎপাদনে গতি না আসার পেছনেও তারাই কলকাঠি নাড়েন।
ব্যবসায়ী আইনপ্রণেতাদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় নবগঠিত বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯ সদস্যের মধ্যে ৬ জনই পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁদের অন্তর্ভুক্তিতে এই কমিটিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা সংঘাত দেখা দিতে পারে। কারণ, জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী, এমন কোনো সদস্য সংসদীয় কমিটিতে নিযুক্ত হবেন না, যাঁর ব্যক্তিগত, আর্থিক ও প্রত্যক্ষ স্বার্থ কমিটিতে বিবেচিত হতে পারে, এমন বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার বাণিজ্যসহ অন্তত ছয়টি কমিটিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। অন্য পাঁচটি হলো শ্রম ও কর্মসংস্থান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; নৌপরিবহন; প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাজ হলো তার আওতাধীন মন্ত্রণালয়ের কাজ পর্যালোচনা করা। পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়ম ও গুরুতর অভিযোগের প্রশ্ন সামনে এলে তা তদন্ত করা। আইন পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করা বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া বা সুপারিশ করাও সংসদীয় কমিটির কাজ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুর মাত্র পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ৫০টি সংসদীয় কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি কমিটি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত। বাকি ১১টি কমিটি সংসদের বিভিন্ন বিষয়সম্পর্কিত। কমিটিগুলোর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সদ্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তাঁর পেশা ব্যবসা (পোশাকশিল্প ও অন্যান্য)। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে শেখ হেলাল উদ্দিনের পেশা ব্যবসা ও রাজনীতি। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে শেখ আফিল উদ্দিন, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও মাহমুদ হাসান পেশায় ব্যবসায়ী। এ কমিটির একমাত্র নারী সদস্য সুলতানা নাদিরা মধুমতি টাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এস এম আল মামুনের রয়েছে জাহাজভাঙা শিল্পের ব্যবসা। এ কমিটির আরেক সদস্য শামীম ওসমান তৈরি পোশাক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুর রউফের পেট্রল পাম্পের ব্যবসা আছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া লঞ্চ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) ওয়েবসাইটে ‘স্নিগ্ধা ওভারসিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিজাম উদ্দিন হাজারীর নাম আছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী (নোয়াখালী-৬) ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
এবার ১২টি সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সদ্য সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদে এসেছেন এ কে আব্দুল মোমেন, অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, কৃষি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শ ম রেজাউল করিম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী, ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শরীফ আহমেদ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান।
দেশের সংসদীয় ইতিহাসে আগে মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৭ সালে কার্যপ্রণালি বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে একই সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা যায় না। তবে সাবেক মন্ত্রীদের সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি করার বিষয়ে কার্যপ্রণালি বিধিতে কোনো বাধা নেই। মূলত দশম সংসদ থেকে সদ্য-সাবেক মন্ত্রীদের সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি করার প্রবণতা বাড়তে শুরু করে।
‘বাংলাদেশে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যকরতা: সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন ২০১৫ সালে প্রকাশ করেছিল টিআইবি। ওই প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নবম সংসদের ছয়টি স্থায়ী কমিটিতে একাধিক সদস্যের কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ছিল। আর ২০১৪ সালের দশম সংসদের পাঁচটি স্থায়ী কমিটিতেও একাধিক সদস্যের কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ছিল।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক স্থায়ী কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সদস্য থাকায় এবং কিছু ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী সভাপতি হওয়ায় কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে।
গবেষকের মনে করেন, সদ্য সাবেক মন্ত্রীদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি করাতে সুবিধা-অসুবিধা দুটিই আছে। সুবিধা হচ্ছে, তাঁরা মন্ত্রণালয়ের কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু বড় অসুবিধা হলো প্রথম দিকে সংসদীয় কমিটিকে কাজ করতে হবে গত মেয়াদে মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো নিয়ে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের বিষয় এলে হয়তো তদন্ত হবে না। এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। কোনো নীতিও হয়তো সংসদীয় কমিটিতে সমালোচনার দৃষ্টিতে আলোচনা করা হবে না।
বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল সংসদে এক ভাষণে আইন প্রণয়নকাজে সংসদ সদস্যদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, জাতীয় সংসদে প্রথিতযশা আইনজীবীদের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তোবা সংসদে বিল আকারে উপস্থাপিত আইনের পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের জন্য বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
সংসদ বিষয়ে নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা কি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এতটুকু আলোড়িত করতে পেরেছে? ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করলে কী অবস্থা হয়, তা এখন নাগরিকেরা টের পাচ্ছেন বাজারে গিয়ে কিংবা ইউটিলিটি সেবার বিল পরিশোধ করতে গিয়ে। এ অবস্থায় হুমায়ুন আজাদের কবিতার সেই লাইনটিই মনে পড়ে যায়- ‘আমি জানি সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।’ হুমায়ুন আজাদ বেঁচে থাকলে এখন কী লিখতেন, ‘আমি জানি সবকিছু ব্যবসায়ীদের দখলে যাবে’!
প্রথম পাতা
সংবিধান নিয়ে বিতর্ক গণতান্ত্রিক উত্তরণকে নস্যাৎ করবে
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেন, এবার?
ডেঙ্গুর সঙ্গে বাড়ছে চিকনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী
৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সিপিবির সমাবেশ
রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণ সিটির নাগরিক সেবা তলানিতে
সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি-লুটপাট দলীয়করণ কৃষকদের নিঃস্ব করে দিয়েছে
সারাদেশে শোষণ বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সিপিবির
‘সংস্কৃতি চর্চার মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি’
‘ভোট’
Login to comment..