মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন হামলা আমেরিকার

জাতিসংঘে তীব্র প্রতিবাদ রাশিয়া-চীনের

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা বিদেশ ডেস্ক : ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী আগ্রাসনের পরিক্রমায় মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট সংকটের মাঝেই ইরাক, সিরিয়ায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে রাশিয়া এবং চীন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দু’দেশই সরব হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। দু’দেশেরই বক্তব্য, মধ্যপ্রাচ্যে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে দু’দেশে বিমানহানা চালিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন। সম্প্রতি ইরাক এবং সিরিয়ার ৮৫ জায়গায় বিমান হামলা চালায় আমেরিকা। আমেরিকার যুক্তি, জর্ডনে তাদের সেনাঘাঁটিতে ইরানের মদদপুষ্ট সশস্ত্র বাহিনী হামলা চালিয়েছিল। ৩ সেনার মৃত্যু হয়েছে। সেই হামলার বদলা নিতে ইরানের মদদপুষ্ট সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটিতে বিমানহানা হয়েছে। ইরান যদিও তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ‘‘গাজায় ইজরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণের জেরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে। উত্তেজনা প্রশমিত করার বদলে আমেরিকা নিজেদের শক্তি দেখাতে বেশি তৎপর।’’ সিরিয়া এবং ইরাক, দু’দেশই মার্কিন বিমানহানার কড়া প্রতিবাদ জানায় আগেই। দু’দেশই জানিয়ে আমেরিকার বিমানহানায় বহু সাধারণ নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। নেবেনজিয়া জাতিসংঘে বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে চালানো হয়েছে বিমানহানা। ইরানকে সংঘাতে টেনে আনতে চাইছে আমেরিকা।’’ ইয়েমেনে হউথি ঘাঁটিতে পরপর ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন। হউথিদেরকেও মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ইরানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সিরিয়ার অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ বছরের নির্বাচনে নিজের প্রচার জোরালো করার চেষ্টায় জো বাইডেন পশ্চিম এশিয়ায় খবরদারির মাত্রা বাড়িয়েছে। নিজেদের নির্বাচনের খেলায় বোড়ে করা হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলিকে। রাষ্ট্রসঙ্ঘে বেজিংয়ের রাষ্ট্রদূত ঝাঙ জুন একই সুরে বলেছেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে থাকে যে মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের কোথাও সংঘাতে মদদ দেওয়া তাদের নীতি নয়। কিন্তু কাজের বেলায় ঠিক উল্টোটাই করে থাকে। নিজেদের স্বার্থে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে সেনাকে ব্যবহার করে।’’ ইরান রাষ্ট্রসঙ্ঘে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে। বলেছে, চলতি পর্বে উত্তেজনার কারণ ইজরায়েলের দখলদারির রাজনীতি। প্যালেস্তাইন এবং গাজা ভূখণ্ডে অবিরত বোমাবর্ষণ চলছে সেই উদ্দশ্যেই। আমেরিকা এই দখলদারি রাষ্ট্রকে পুরোপুরি সমর্থন করছে। আমেরিকার মদতেই গণহত্যা চলছে গাজায়।’’ এদিকে জর্ডানে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সামরিক বাহিনী শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়ায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে। আমেরিকার বক্তব্য, ইরানের সেনার মদদপুষ্ট উগ্র গোষ্ঠীগুলির ঘাঁটিতে ফেলা হয়েছে বোমা। সিরিয়া যদিও অভিযোগ তুলেছে যে সাধারণ নাগরিকদের বসতি এলাকায় চালানো হয়েছে হামলা। সব মিলিয়ে দু’দেশের ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যে বোমা ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকার সেনা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে সামনে আরও কিছু হতে চলেছে। আমেরিকার এই বোমাবর্ষণে পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাত আরও বড় আকার নেবে বলে আশঙ্কা ছড়িয়ে। মার্কিন বাহিনীর লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র হিজবুল্লা গোষ্ঠীর বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা চালানো। এই গোষ্ঠী মার্কিন মদতে গাজায় লাগাতার ইজরায়েলের বোমাবর্ষণের বিরোধিতা করে আসছে। কাতাইব হিজবুল্লাহ বলেছে যে তারা আমেরিকান সেনাদের উপর হামলা বন্ধ করছে। কিন্তু অন্যদের ওপর হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। হিজবুল্লা নিজেদেরকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষের সৈনিক হিসাবে ঘোষণা করেছে। এর আগে সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ করেছে ইজরায়েলও। ফিলিস্তিনে গণহত্যায় অভিযুক্ত ইজরায়েলের সেনাও হিজবুল্লাহকে খতম করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের প্রধান সহযোগী ইজরায়েলের পাশে বরাবরই থেকেছে আমেরিকা। যদিও এই নীতি বিশ্ব জনমতের প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েছে। জর্ডন, সিরিয়া বা ইরাকে, আমেরিকার সেনা ঘাঁটি কেন, জোরালো হয়েছে সে প্রশ্নও। জর্ডানে নিহত মার্কিন সেনাদের দেহাবশেষ ফিরেছে আমেরিকায়। শোক পালনে যোগ দেন বাইডেনও।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..