জাবি ধর্ষণকাণ্ডে ছাত্রলীগ নেতাসহ জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা প্রতিবেদক : ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগ কর্মী মানিকের ধর্ষণের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানি মুক্ত একটি ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করেছিল। সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে নিরাপদ শিক্ষাঙ্গনের প্রয়াসে যৌন হয়রানি নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু আজ ২৬ বছর অতিক্রম হলেও আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সেই নীতিমালা কার্যকর হয় নি এবং শিক্ষাঙ্গন ধর্ষণমুক্ত হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে গণধর্ষণ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি দীপক শীলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজোয়ান হক মুক্ত, ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি শাহরিয়ার ইব্রাহিম মিমো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল হাসান সুজন প্রমুখ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই দেশে সন্ত্রাসীরা অপরাধ করেও ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে বুক ফুলিয়ে নির্বিঘ্নে বিচরণ করে আর ভুক্তভোগীদের মাথা নিচু করে, মুখ বুজে সয়ে যায় অসহনীয় লাঞ্ছনা। গত ১৫ বছর জোর জবরদস্তির ক্ষমতার জোরে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মানুষের জীবনকে বিপন্ন ও দুর্বিসহ করে তুলছে, নারীদের জন্য ঘর থেকে রাজপথ করে তুলেছে শংকাময়। ২০১৮ সালে আওয়ামী সরকারের বাহিনীর শুরু হয়েছিল নৌকায় ভোট না দেওয়ার অপরাধে একজন নারীকে ‘ধর্ষণ’ করার মাধ্যমে, যা প্রমাণ করেছে যে, এই সরকার ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষকদাতা ও পাহারাদার। একই দাবিতে, গত ৫ই ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় শাহবাগ চত্বরে প্রগতিশীল নারী, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক

সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সাথে যুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ, মামুন ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে। বক্তারা বলেন, কেবল সংগঠন থেকে বহিস্কার নয়, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশের আদালত যদি এই শাস্তি না দেয়, তবে জনগণ এই ধর্ষক ও যৌন নিপীড়কদের গণআদালতে শাস্তি নিশ্চিত করবে। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায়ের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, ছাত্র নেতা দীপা মল্লিক, আদৃতা রায়, স্কাইয়া ইসলাম, হিল উইমেনস ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, আইনজীবি দিলরুবা শরমীন, উমামা ফাতেমা, ছাত্র নেতা নুজিয়া হাসান রাশা, নওশীন সাহা প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ময়মনসিংহ : গত ৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সনৎ কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক গকুল সূত্রধর মানিকের সঞ্চালনায় প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় বক্তব্য রাখেন, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র ইউনিয়ন জেলা সংসদের সভাপতি বাহাউদ্দিন শুভ, যুব ইউনিয়ন জেলা কমিটির সভাপতি জহিরুল আমিন রুবেল, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক যীশুতোষ তালুকদার, কৃষক সমিতির জেলা সভাপতি মোতাহার হোসেন, ক্ষেতমজুর সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুশান্ত দেবনাথ খোকন, মুক্তবাতায়ন পাঠচক্রের সংগঠক রঞ্জিত সরকার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি মনিরা বেগম অনু, ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বিবদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আনোয়ার বিন আকাশ প্রমুখ। সমাবেশ থেকে বক্তারা জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম

বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নে জড়িতদের বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। বগুড়া : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণধর্ষণের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও অব্যাহত নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতমাথায় এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে ছাত্র নেতা ছাব্বির আহম্মেদ রাজের সভাপতিত্বে ও বায়েজিদ রহমানের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, ক্ষেতমজুর সমিতি বগুড়া সদর উপজেলার সভাপতি শুভ শংকর গুহ রায়, সাধারণ সম্পাদক সোহাগ মোল্লা, যুব নেতা মিঠুন পাল, শাওন পাল, সাদ্দাম হোসেন, সোহানুর রহমান, জয় ভৌমিক, আফ্রিক হাসান প্রান্ত, শাওন শওকত, আব্দুল হামিদ সুজন প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের সকল প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসমূহে ছাত্রলীগের যে একচ্ছত্র দখলদারিত্ব, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ভয়ের সংস্কৃতি উৎপাদনের অপচেষ্টা তারই একটি নগ্ন বহিঃপ্রকাশ সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত গণধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক, ঘৃণ্য কর্মকান্ড। স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট হাসিনার কর্তৃত্ববাদী, একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের ফলস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয় গণধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে যা জাতিকে রীতিমতো লজ্জিত করেছে। সারাদেশে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা বছরের পর বছর ধরে এসব ঘটিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশে চলমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই সমস্ত অপরাধীদের আরো আস্কারা দিচ্ছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..