বামজোটের ডাকা হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল [ ছবি: রতন কুমার দাস ] একতা প্রতিবেদক :
একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোট সারাদেশে কর্মসূচি পালন করে আসছে। কেন্দ্রীয়ভাবে গত ১৯ নভেম্বর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বামজোটের সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে জোটের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচি পালন করলেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায় এবং পুলিশ বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাম গণতান্ত্রিক জোট এসব হামলা-গ্রেপ্তার এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, হামলা-বাধা প্রদান করে বামপন্থিদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। সব বাধা রুখে দিয়ে সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন ও গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে চলমান কর্মসূচি এগিয়ে নিতে হবে। বাম বিকল্প শক্তির সমাবেশ ছাড়া জনগণের মুক্তি অসম্ভব।
রংপুর: বাম জোটের ডাকা হরতালের কর্মসূচি চলাকালে রংপুরে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হামলা এবং একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৯ নভেম্বর রংপুরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুনরায় সেই মিছিলেও ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করে পুলিশ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৫ নভেম্বর একতরফাভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষণার প্রেক্ষিতে বাম জোট তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও তার পরের দিন অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরের দিন সারাদেশের ন্যায় রংপুরেও হরতাল পালন করলে পুলিশ এলোপাতাড়ি হামলা করেন। এবং বাসদ রংপুর জেলার সমন্বয়ক আব্দুল কুদ্দুসকে গ্রেপ্তার করেন। রংপুরের ন্যায় সারাদেশে হরতালে হামলা এবং গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজকের এই বিক্ষোভ মিছিল।
নেতৃবৃন্দ জানান, মিছিলটি প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে ছালেক পাম্প দিয়ে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে পৌঁছালে পিছন থেকে হামলা করে পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি এবং এলোপাথারি হামলার ঘটনা ঘটে। উক্ত হামলায় সিপিবি নেতা রাতুজ্জামান রাতুল, কাফি সরকার, ছাত্র নেতা মেহেদী হাসান, নাহিদ হাসান খন্দকার, নীরব সরকার সাম্য, আবীর ইয়ামান, ছাত্র নেতা রিনা মুর্মূ, বাসদ নেতা আব্দুল কুদ্দুস, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা আহসানুল আরেফিন তিতুসহ আরও অনেক নেতাকর্মী আহত হয়।
হামলা পরবর্তীতে বামজোটের নেতৃবৃন্দ পুনরায় হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করেন এবং সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ এই অবৈধ সরকারের দ্রুত পদত্যাগ এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান।
খুলনা: অবৈধ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে গত ১৯ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে নগরীতে
মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে পুলিশ আতর্কিতভাবে বাধা প্রদান করে এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদ জেলা আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নাণ্টু, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি ধীমান বিশ্বাস, জেলা অর্থ সম্পাদক ভবেশ রায়কে গ্রেপ্তার করে।
পরবর্তীতে বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এ রশীদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) খুলনা মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোজাম্মেল হক খান, বাসদ জেলা কমিটির সদস্য সচিব কোহিনুর আক্তার কণা, সদস্য আব্দুল করিম, সিপিবি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. এম এম রহুল আমিন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ খুলনা জেলা সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু, আনিসুর রহমান মিঠু, দেলোয়ার হোসেন, সিপিবি খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিত্যানন্দ ঢালী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঙ্গলাল মৃধা, সদর থানা সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাবু, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা, খালিশপুর থানা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল, মহানগর যুব ইউনিয়ন সভাপতি আফজাল হোসেন রাজু, জেলা সাধারণ সম্পাদক মৌফারশের আলম লেনিন প্রমুখ।
কিশোরগঞ্জ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিল করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাম গণতান্ত্রিক জোট কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকার জেলা সিপিবি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। এ সময় মিছিলকারীরা ‘তফসিল প্রত্যাহার করো, সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করো’, ‘প্রহসনের নির্বাচন, মানে না জনগণ’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিলে বাম গণতান্ত্রিক জোট কিশোরগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক ও জেলা সিপিবি সভাপতি আবদুর রহমান রুমী, জেলা বাসদ সমন্বয়ক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম, জেলা বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মো. আলাল মিয়া, জেলা সিপিবি সাবেক সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ডা. এনামুল হক ইদ্রিছ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এনামুল হক, জেলা বাসদ সদস্য সচিব অ্যাড. মাসুদ আহম্মেদ, জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সাত্তার, জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল নান্দু, জেলা সিপিবি’র সহকারী সম্পাদক রঞ্জিত সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।