বেতিয়ারা শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা প্রতিবেদক : বেতিয়ারা শহীদ দিবস ১১ নভেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুমিল্লার বেতিয়ারা নামক স্থানে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ৯ সদস্য পাকিস্তান বাহিনী ও রাজাকারদের ব্রাশ ফায়ারে শহিদ হন। তারা হলেন– সিরাজুম মুনীর, নিজাম উদ্দিন আজাদ, মো. শহীদুল্লাহ, বশির মাস্টার, আব্দুল কাইয়ুম, জহিরুল হক দুদু, আওলাদ হোসেন, কাদের মিয়া, সফিউল্লাহ। বেতিয়ারা শহীদ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সহ বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কুমিল্লার বেতিয়ারা স্মৃতিসৌধে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য পরেশ করের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা। এছাড়াও শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সিপিবি কুমিল্লা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক অশোক দেব জয়, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিকাশ দেব, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী শিবু, ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন স্বপন প্রমুখ। এছাড়াও খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, শহীদদের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা থেকে দেশ অনেক দূরে সরে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন আক্রান্ত। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আজও অর্জিত হয়নি। নিজেদের স্বার্থে শাসকশ্রেণির দলসমূহ জামাত-শিবিরসহ একাত্তরে পরাজিত গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পদদলিত করছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে একাত্তরের ঘাতক ও তাদের দলসমূহকে সামাজিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করছে। নেতৃবৃন্দ দুঃশাসন হঠানো, বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলা এবং নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বগুড়া: কুমিল্লার বেতিহারা দিবস ও বগুড়ার বেদনাবিধুর বাবুরপুকুর দিবস ১১ নভেম্বর। দিবস দুটি উপলক্ষে সকাল ৯ টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বগুড়া জেলা কমিটি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদ যৌথভাবে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুর স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাবুরপুকুর স্মৃতিসৌধের পাদদেশে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সভার শুরুতে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরবতা পালন করেন। বিকাল ৫ টায় উদীচী বগুড়া জেলা কার্যালয়ে সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে বাবুরপুকুর শহীদ দিবস ও কুমিল্লার বেতিয়ারা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না এর সভাপতিত্বে এবং সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অখিল পালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার পাল, সাজেদুর রহমান ঝিলাম, ক্ষেতমজুর সমিতি বগুড়া সদর উপজেলা কমিটির সদস্য শুভ শংকর গুহ রায়, কৃষক সমিতি বগুড়ার সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিম মাহমুদ, যুব নেতা সাদ্দাম হোসেন, ছাত্র নেতা ছাব্বির আহম্মেদ রাজ, বায়েজিদ রহমান প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন ‘১৯৭১ সালের এই দিনে এই দেশীয় দোষরদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী বাবুরপুকুরে নৃশংসভাবে হত্যা করে শহরের ঠনঠনিয়া সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ১৪ জন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের। শহিদদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়ার সাবেক সভাপতি মান্নান পশারী, তার ছোট ভাই শহর ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হান্নান পশারী, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী সাইফুল ইসলাম, টিএনটির অপারেটর নূরজাহান প্রমুখ। দেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এই ১৪ জনকে শহিদ স্বীকৃতি পত্র ও শহিদ পরিবার গুলোকে ২ হাজার করে টাকা দেন। কিন্তু শহিদরা এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, তাদের পরিবার শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। তাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কেউ কোনো যোগাযোগ রাখেনি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ বক্তারা আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ ভুলন্ঠিত। মুক্তবাজার অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ নির্ভরতা, হেফাজত তোষণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। স্বাধীনতাবিরোধী জামাত শিবির এবং হেফাজতের রাজনীতি এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি। যে স্বপ্ন ও অঙ্গীকার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন ও অঙ্গীকার থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে সরে গেছে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে অগ্রসর করার মধ্য দিয়েই বাবুরপুকুর ও বেতিয়ারার শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় উজ্জীবিত বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। এছাড়া বক্তারা ১৪ জন বীর শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দান, সরকারিভাবে বাবুর পুকুর দিবস পালন, প্রশাসনকে বাবুর পুকুর স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণের দাবি জানান। নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন চত্বরে গত ১১ নভেম্বর সমমনা’র উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বেতিয়ারার শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সমমনা’র সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ। সঞ্চালনা করেন সমমনা’র সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহা। প্রধান আলোচক হিসাবে আলোচনা করেন বেতিয়ারা রণাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধা ও উদীচী’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি মাহমুদ সেলিম। বক্তব্য রাখেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারী নেত্রী রীনা আহমেদ, ন্যাপ নেতা অ্যাড. আওলাদ হোসেন, সিপিবি’র নেতা দুলাল সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ সাউদ প্রমুখ। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সমমনা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম ভূইয়া, উন্মেষ সভাপতি প্রদীপ ঘোষ প্রমুখ। সভা থেকে একটি শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রগতিশীলদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..