
[এই প্রবন্ধটি গত ৭ নভেম্বর কমিউনিস্ট পার্টির ‘তত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগ’ আয়োজিত অক্টোবর বিপ্লব বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পঠিত ও প্রচারিত হয়েছে। প্রবন্ধটি বৃহৎ ও দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অংশে বিভক্ত। সর্বসাধারণের পাঠের জন্য একতার পূর্ববর্তী সংখ্যায় আমরা প্রথম অংশটি ইষৎ পরিবর্তনসহ প্রকাশ করেছি। এখন দ্বিতীয় অংশটি প্রকাশ করা হলো। -সম্পাদক]
অক্টোবর বিপ্লব ও জনগণ
অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব লেনিন ও বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে কার্যকরী হয়। বলশেভিক পার্টি ও লেনিনের নেতৃত্ব একদিনে গড়ে উঠে নি। এজন্য লেনিন ও তাঁর অনুসারীদের শ্রমিক শ্রেণির পার্টি গঠনের জন্য একই সঙ্গে চালাতে হয়েছে মূলতঃ চার ধরনের তীব্র শ্রেণিসংগ্রাম। এগুলি হচ্ছে ক) অর্থনৈতিক ইস্যুতে শ্রেণিসংগ্রাম, খ) সামাজিক ইস্যুতে শ্রেণিসংগ্রাম, গ) সংস্কৃতি ও ভাবাদর্শ ইস্যুতে শ্রেণিসংগ্রাম এবং ৪) রাজনৈতিক ইস্যুতে শ্রেণিসংগ্রাম। রাশিয়ার বিভিন্ন শ্রেণির এসব স্বতঃস্ফূর্ত অথবা/এবং সচেতন বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম-আন্দোলনকে এক সূত্রে গেঁথে একটি অর্কেস্ট্রা/মালায় পরিণত করার সুমহান দায়িত্ব নিযেছিল লেনিনের নেতৃত্বে RSDLP (Russian Social Democratic Labour Party)-র বলশেভিক অংশ। এই RSDLP-র সূচনা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ-এ (তদানীন্তন রাশিয়ার রাজধানী) ১৮৯৫ সালে ২০-৩০টি শ্রমিক পাঠচক্রের ঐক্যের মাধ্যমে।
এদিকে ১৯০০ সালের পর রাশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাদী বিকাশের ফলে পূর্বপ্রতিষ্ঠিত প্রধান দুই শ্রেণি ভূস্বামী ও কৃষকের পাশাপাশি গড়ে উঠতে থাকে নতুন দুটি শ্রেণি-বুর্জোয়া ও সর্বহারা। রাশিয়ার সমাজের শ্রেণি বিশ্লেষণ করে শহরে ও গ্রামে বিভিন্ন শ্রেণিকে লেনিন চিহ্নিত করেন। তাঁর রচনাবলীতে তখন উঠে এসেছে শহরে শাসক জারের অনুগামী অভিজাত ভূস্বামী ও ধর্মযাজকদের প্রতিক্রিয়াশীল অত্যাচারী ভূমিকার কথা, শহুরে বুর্জোয়াদের দোদুল্যমানতার কথা, শহুরে পেটি বুর্জোয়াদের (আমলা-পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী) নানামুখী মতাদর্শের বৈচিত্র্যের কথা, শক্তিশালী ক্রমবর্ধমান শ্রমিক শ্রেণির উত্থানের কথা, গ্রামের ধনী কৃষক/কুলাকদের জারপ্রীতি বা মোহের কথা, গ্রামীণ মধ্য কৃষকদের দোদুল্যমানতার কথা, প্রান্তিক কৃষকের ও গ্রামীণ মজুরদের সংগ্রামের কথা। ১৯০০-১৯১৭ এই ১৭ বছরে রাশিয়ায় এই বিভিন্ন শ্রেণিগুলি নিজ নিজ হেজেমনী প্রতিষ্ঠার জন্য পরস্পরের সঙ্গে নানারকম ঐক্য, সংগ্রাম ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। লেনিন আশু সাধারণ রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থির করেন জার সরকারের উৎখাত এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন শ্রমিক শ্রেণির হেজেমনী/একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
১৯০০ সালের প্রথম দিকে রাশিয়াতে বুর্জোয়াদের প্রশ্রয়ে legal marxism সম্ভব হলেও পরবর্তীকালে অগণতান্ত্রিক জারতন্ত্রের কারণে তা অবৈধ মতাদর্শে পরিণত হয়। ফলে বৈধভাবে মার্কসবাদী রাজনৈতিক দল গঠন প্রথম যুগে কিছুদিন পরেই আর সম্ভব ছিল না। তখন ঐ মার্কসবাদীদের আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হলো। অর্থাৎ মধ্যবিত্ত পেশা ত্যাগ করে সার্বক্ষণিক বিপ্লবী বা পেশাদার বিপ্লবী হতে হলো। কিন্তু এর অর্থ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন সত্তা তৈরি নয়। তারা ছিলেন জনগণের সঙ্গে সর্বদা যুক্ত একটি সত্তা, যারা প্রতি মুহূর্তে জনগণের দৈনন্দিন সংগ্রাম নিয়ে ভাবেন শুধু নয়– সক্রিয়ভাবে তাতে সাহায্য-সহযোগিতা করেন– অংশগ্রহণ করেন। তবে তদানীন্তন রাশিয়াতে প্রকাশ্য পার্টি সদস্য পরিচয় দিয়ে সেই কাজগুলো করা সম্ভব ছিল না।
সুতরাং লেনিনের সামনে দুটি কর্তব্য উপস্থিত হয়। একটি হচ্ছে এসব “পেশাদার বিপ্লবীদের” একটি মার্কসবাদী পার্টিতে জড়ো করা এবং একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে জনগণের একটি জীবন্ত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। পরবর্তীকালে গ্রামসী তাই এই ধরনের সচেতন মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও অনুশীলনকারীদের (দুই ধরনের গুণেই যারা নিজেকে সজ্জিত করেছেন) বা এখনকার আধুনিক ভাষায় Self Conscious Activist Ideologist দেরকেই বলেছেন কমিউনিস্ট/রাজপুত্র। প্রশ্ন হচ্ছে এইসব Activist Ideologist রা কতটুকু Activist এবং কতটুকু Ideologist হলে আমরা একজন আদর্শ “কমিউনিস্ট” পেতে পারি। কমিউনিস্ট পার্টিতে যদি সে রকম কোন স্ট্যান্ডার্ড স্থির করতে হয় তাহলে তা যান্ত্রিকভাবে করা সম্ভব নয়। আদর্শগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অ্যাপটিচিউড, মানসিক প্রবণতা, বাস্তব প্রয়োজন, বাস্তব পরিস্থিতি সমগ্র বিষয়াবলীর সামষ্টিক (Macro) বিবেচনা দ্বারাই সেটা নির্ধারণ করা উচিত। সে রকম ভাবে বিষয়টি দেখতে হলে বিপ্লবী সংগ্রামকে একটি পরিকল্পিত সমন্বিত কার্যক্রম বা অর্কেস্ট্রা এবং সে জন্য একজন অকেস্ট্রা পরিচালকের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সংগঠিত শ্রম বিভাজন পার্টির ভেতরে থাকা দরকার। লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি সুচারুরূপে সেই সাংগঠনিক শর্তটি পূরণ করতে পেরেছিলেন বলেই অক্টোবর বিপ্লবে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে তাকে সফল করতে পেরেছিলেন।
প্রথমতঃ তিনি “মার্কসবাদী ভ্যানগার্ডদের” মধ্যে তাত্ত্বিক মার্কসবাদী পণ্ডিত প্লোখানভ ও তার অনুসারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের গণতান্ত্রিক কর্তব্য বুর্জোয়া উদারনীতিকরা রাশিয়াতে পালন করবেন না। কারণ, বিপ্লবের করণীয় হচ্ছে অভিজাত ভূস্বামীদের প্রতিনিধি জারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ, কৃষকদের জমি দান এবং অবিলম্বে সাম্রাজ্রবাদী যুদ্ধ থামানো। সেটা বুর্জোয়াদের বস্তুগত স্বার্থানুকূলও (objective interest) বটে। কিন্তু তার পরেও শ্রমিক-কৃষকের বিপ্লবী ক্ষমতায়নের ভয়ে কেরেনেস্কির বুর্জোয়া প্রভিশনাল সরকার তা কিছুতেই বর্তমানে করবেন না, এটাই ছিল লেনিনের বিশ্বাস। কখনো যদি করেও তারপরেও তাদের থাকবে দোদুল্যমানতা। শুধু তা-ই নয়, আর্থসামাজিক মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া, জনগণের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় “শান্তি, রুটি ও জমির” ব্যবস্থা ছাড়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। জার বা আপসকামী কেরেনেস্কি সরকার কারো পক্ষেই এক্ষেত্রে আর সামনে এগোনো সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় জনপ্রিয় এইসব দাবিতে জনগণকে বিশেষ করে শ্রমিক-কৃষক ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের একত্রিত করা সম্ভব বলে লেনিনের কাছে প্রতীয়মান হয়। তবে লেনিন “বলশেভিক পার্টির” রাজনৈতিক নেতৃত্বে প্রত্যক্ষভাবে এসব সদস্যদের সরাসরি সমবেত করার উপায় তখন স্পষ্টভাবে দেখতে পাননি। রুশ দেশে তখন পেশাজীবীদের যে ক্ষমতাসংস্থা ছিল সেগুলিকে বলা হতো “সোভিয়েত” এবং নির্দিষ্ট সংখ্যানুপাতে বিভিন্ন পেশার electoral college থেকে নির্বাচিত সোভিয়েত ডেপুটিরাই পার্লামেন্ট বা দুমার সদস্য হতেন। আপামর শ্রমজীবী জনগণ তথা শ্রমিক-কৃষক-সৈনিকরা নিজেরা প্রত্যক্ষ ভোটে শ্রমিক-কৃষক-সৈনিক সোভিয়েতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে দুমায় বা পার্লামেন্টে প্রেরণ করতেন। তবে তাদের জন্য কোটা ছিল নির্দিষ্ট এবং সমাবদ্ধ। লেনিন এই তৃণমূল গণসংগঠনগুলির দিকে নজর দিলেন। তিনি দেখালেন যে এখানে অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে যারা বামপন্থি- বলশেভিক পার্টি, মেনশেভিক পার্টি ও সোশ্যালিস্ট রেভলিউশনারি পার্টির সদস্য। এসব সোভিয়েতে বলশেভিক পার্টির সদস্যদের শ্রমিক-কৃষক-সৈনিকদের নেতৃত্বদানে সক্ষম করে তুলতে পারলে জনগণের গণতান্ত্রিক ব্লক গঠন করে গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে তার চৌহদ্দি অতিক্রম করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দিকে অগ্রসর করা সম্ভব বলে লেনিন সিদ্ধান্ত নিলেন। মেনশেভিকরা যেখানে যান্ত্রিক বস্তুবাদীর মত চাইলেন বুর্জোয়াদের দ্বারাই বুর্জোয়া বিপ্লব সম্পন্ন করতে সেখানে লেনিন তা খণ্ডন করে তার বিখ্যাত এপ্রিল থিসিসে লিখলেন-
‘বর্তমান অবস্থার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দেশ এখন বিপ্লবের প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রথম স্তরে সর্বহারার অপরিণত শ্রেনি চেতনা ও অপর্যাপ্ত সংগঠনের দরুন ক্ষমতা বুর্জোয়াদের হাতে চলে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় স্তরে ক্ষমতা অবশ্যই সর্বহারা ও কৃষকদের দরিদ্রতম অংশগুলোর হাতে ন্যস্ত করতে হবে।’ (লেলিন, সংগৃহীত রচনাবলী, খণ্ড ২৪, পৃঃ২২৮)
কিন্তু যেহেতু বুর্জোয়া অস্থায়ী সরকার ইতোমধ্যে মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট রিভলিউশনারিদের নেতৃত্বাধীন ‘সোভিয়েত’গুলোর আংশিক অনুমোদন সংগ্রহ করতে পেরেছিল, যেহেতু ‘সোভিয়েত’গুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক-কৃষক তখনো বিপ্লব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা অর্জন করে নি, সেহেতু লেনিন তখনই সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করার আহ্বান জানালেন না। শ্রমিক-কৃষকের তখনকার চেতনার স্তরে সে ধরনের আহ্বান জানানোটা ছিল বুলিবাগীশতা ও হঠকারিতার সামিল। লেনিন তাই বললেন,
‘এখন আমাদের অবশ্যই জনগণের রাজনৈতিক উপলব্ধির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়াতে হবে।’ (প্রাগুক্ত, খণ্ড-৩৬, পৃঃ৪৩৬) আর সেই অবস্থায় জনগণের রাজনৈতিক চেতনাকে আরো অগ্রসর করে নেওয়ার জন্য লেলিন অপূর্ব শিক্ষণীয় এই একটি মাত্র দাবার চালে জনগণের “গণতান্ত্রিক বিপ্লবের” জন্য জারকে হটিয়ে সেখানে সোভিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠা করার ধারায় সমাজতন্ত্রের দিকে– তথা শ্রমিক-কৃষকের বিপ্লবী ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। সম্ভব হয়েছিল বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতা দখল নয়, সেই ক্ষমতার প্রতিষ্ঠা হিসেবে সোভিয়েতগুলিকে প্রতিষ্ঠা করা।
কিন্তু আজ বিপ্লব বার্ষিকীতে আমরা লেনিনের সাফল্যের শর্তগুলি নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না, আমরা চাই তার সাধারণ শিক্ষাগুলি অনুধাবন করতে এবং বাংলাদেশে তা প্রয়োগ করতে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রবন্ধ এখানেই শেষ করার আগে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় সারমর্মটি নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরে প্রবন্ধটি শেষ করবো-
১। ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লব’ প্রচলিত চিরায়ত অর্থে হচ্ছে ‘বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব’। এর কাজ হচ্ছে সামন্তবাদী উৎপাদন সম্পর্ক, সামন্তবাদী ধ্যান-ধারণা এবং বিদেশি আধিপত্য অপসারণ করে আধুনিক বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। সাম্রাজ্যবাদী যুগে জাতীয় বুর্জোয়ারা শ্রমিকশ্রেণির জাগরণের ভয়ে এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন। তখন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলি পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য শ্রমিক–কৃষক–মানসিক শ্রমজীবী বা শ্রেণিত্যাগী বুদ্ধিজীবীদের তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে সংগঠিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে হবে। এই ধরনের বিপ্লবের সীমানা পুঁজিবাদী সংস্কারের চৌহদ্দি অতিক্রম করে সমাজতান্ত্রিক সংস্কারের অনেক কিছুই আত্তীকরণ করে নেয়।
২। ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবের’ মূল শক্র হচ্ছে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বা শাসন ক্ষমতার বাইরে অবস্থানরত সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপসকামী বুর্জোয়া ও সামন্ত শ্রেণি। তারা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্তব্যগুলির বিপ্লবী চরিত্র ছেঁটে ফেলতে চায়। যেমন রাশিয়ায় জনগণের জন্য “রুটি-শান্তি-জমি”-র অধিকার কায়েমে বুর্জোয়া সরকার আগ্রহী ছিল না। তারা তাদের শ্রেণিস্বার্থের গন্ডির মধ্যে গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিল।
৩। শ্রমিক-কৃষক-জনগণকে সংগঠিত করার জন্য দরকার ছিল তখন এসব শ্রেণির ও পেশার সকল সদস্যদের পৃথক পৃথক গণতান্ত্রিক গণসংগঠন ও তাদের Voice গুলির একত্রীকরণ। সংগঠনগুলি শ্রেণি-পেশাগত স্বার্থের ভিত্তিতে উন্মুক্ত ও সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে গঠিত হতে হবে। যেমনটি ১৯১৭-২২ সালে রুশ বিপ্লবের গর্ভে সোভিয়েতগুলি গড়ে উঠেছিল।
৪। এসব গণসংগঠনে বিপ্লবী অগ্রগামী শ্রমিক ও শ্রেণিত্যাগী বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু সেটা করতে হবে উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে নয়, গণতান্ত্রিক সম্মতির ভিত্তিতে। নিজেদের দূরদৃষ্টি, আত্মত্যাগ ও দক্ষতা দিয়েই সোভিয়েতগুলিতে বলশেভিকরা যেভাবে হেজেমনী গড়ে তুলেছিলেন (Class Struggle in USSR, বেটেলহেইমের গ্রন্থ দ্রঃ), সেভাবেই এখানেও অগ্রসর হতে হবে।
৫। শ্রেণি-পেশার নানা গণসংগঠনে সমাজতান্ত্রিক আদর্শবাদী নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে সেখান থেকে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের একটি মৌলিক পরিবর্তনের সর্বসম্মত কর্মসূচি-স্লোগানের ভিত্তিতে জনগণের বিশাল শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
৬। সমাবেশে জনগণের পক্ষ থেকে বিপ্লবী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ নির্বাচনী সংগ্রাম বা/এবং গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিদের সরকার তৈরির পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
[মূল সহায়ক গ্রন্থ- এম এম আকাশ, ‘কী করে রাশিয়ায় শ্রমিক-কৃষক ক্ষমতা দখল করেছিল?’, প্রথম সংস্করণ (১৯৮৩, ৭ নভেম্বর), প্রাচ্য প্রকাশনী, ঢাকা, মোহাম্মদ ফরহাদ]
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিবি