কমিউনিস্ট পার্টি কি ও কেন?
মিজানুর রহমান সেলিম
কমিউনিস্ট পার্টি হলো সেই ধরনের পার্টি, যে পার্টি শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনার দিক থেকে সর্বাধিক যে শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত সেই শ্রমিক শ্রেণির পার্টি। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যে নির্ধারিত নীতিই হলো এই পার্টির রণনীতি এবং এই রণনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মকৌশলই হলো রণকৌশল। এখন প্রশ্ন হলো- শ্রমিক শ্রেণি কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চায়? প্রথমতঃ শ্রমিক শ্রেণি নিজেকে ধনতন্ত্রের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে চায়। দ্বিতীয়তঃ সমগ্র সমাজকে ধনতান্ত্রিক শোষণের হাত থেকে মুক্ত করতে চায় এবং তৃতীয়তঃ নতুন ধরনের উন্নত সমাজব্যবস্থা অর্থাৎ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শ্রমিক শ্রেণি এগুলো কেন চায়? কারণ হলো- ইতিহাস এই দায়িত্ব শ্রমিক শ্রেণির ওপর অর্পণ করেছে, অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবেই এই দায় শ্রমিক শ্রেণির ওপর বর্তিয়েছে। দায়মুক্তির এই কর্তব্য সম্পাদন করতে হলে শ্রমিক শ্রেণিকে তার নিজের শক্তি সম্পর্কে উপলব্ধি করে রাজনৈতিভাবে সচেতন হতে হয়। এই শক্তিকে সংগঠিত করার জন্যই শ্রমিক শ্রেণির জন্য তার নিজের স্বাধীন সত্তাবিশিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল থাকা জরুরি হয়ে পড়ে। এই দলের রাজনৈতিক কার্যসম্পাদনের জন্য তারা নিজেদের শুধু ট্রেড ইউনিয়ন বা সমবায় আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে না বরং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও সমাজের বৈপ্লবিক রূপান্তরের জন্য একটি উপযুক্ত সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল গঠন করবে। যে দল শ্রমিক শ্রেণিকে একশ্রেণি হিসেবে সংগঠিত করবে এবং সেই শ্রেণিকে শাসক শ্রেণি হিসেবে উন্নীত করবে। কমিউনিস্ট পার্টিকে এই দু’টি কাজ নৈপুণ্যের সাথে সম্পন্ন করতে হয়। কমিউনিস্ট পার্টিকে শ্রমিক শ্রেণির ঐতিহাসিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন করতে শ্রেণিসংগ্রামের তিন পর্বের কর্তব্য সম্পন্ন করতে হয়। অর্থনৈতিক শ্রেণিসংগ্রাম, আদর্শগত শ্রেণিসংগ্রাম ও রাজনৈতিক শ্রেণিসংগ্রামের বিষয়গুলোকে কমিউনিস্ট পার্টিকে ধৈর্যের সাথে এমন স্তরে উন্নীত করতে হয়, যা শ্রমিক শ্রেণির ঐতিহাসিক উদ্দেশ্যকে সম্পন্ন করে অর্থাৎ শাসক শ্রেণি হিসেবে শ্রমিক শ্রেণিকে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম করে তোলে।
সমাজতন্ত্রের জন্য সমাজ পরিবর্তনের বিপ্লবী কর্তব্য যেহেতু শ্রমিক শ্রেণি দ্বারা সম্পন্ন হবে সেহেতু সমাজে শ্রমিক শ্রেণির শক্তি কোথায় নিহিত থাকে তা উপলব্দি করা জরুরি। লেনিন বলেছেন, শ্রমিক শ্রেণির শক্তি নিহিত থাকে তার সংগঠনের মধ্যে। যতদিন না শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করা যাচ্ছে ততদিন শ্রমিক শ্রেণির কোনো ক্ষমতাই থাকে না অর্থাৎ সংগঠনই সবকিছু। এই সংগঠনে শ্রমিক শ্রেণি কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে সংগঠিত হবে।
প্রথমত, নীতিটি হলো এমন যে, যা উপলব্ধি করতে পারলে কমিউনিস্ট পার্টি কী এবং সমগ্র শ্রমিক শ্রেণির সাথে তার সম্পর্ক কী এবং পার্থক্য কোথায় তা পরিষ্কার হয়ে যায়। কমিউনিস্ট পার্টি হলো শ্রমিক শ্রেণির অগ্রণী বাহিনী, যাকে সমগ্র শ্রমিক শ্রেণির সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক দল হলেও এর মধ্যে যে অংশটি মার্কসবাদী তত্ত্বের জ্ঞানে সচেতন ও অগ্রবর্তী তারাই কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ যাদের লক্ষ্য হলো- সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ এবং যাদের শ্রেণি আদর্শ হলো- মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। পার্টিকে সমগ্র শ্রমিক শ্রেণির সাথে শুধু সম্পর্ক কী এবং পার্থক্য কোথায় তা চিহ্নিত করলেই হবে না, তাকে সংগঠিতভাবে মানুষের মাঝে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে শ্রেণিসংগ্রামের জ্ঞান প্রচার করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বৈপ্লবিক কর্মতৎপরতার দিক থেকে সক্রিয় পার্টিই হলো কমিউনিস্ট পার্টি। পার্টি সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য যেমন সুসংগঠিত হতে হয় তেমনি পার্টির নিয়ম-নীতির আলোকে পার্টির সকল কাজে সকলকে সম্পৃক্ত হতে হয়। কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপ্লব সংগঠিত করার প্রয়োজনেই শ্রেণিসংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হয়। এ সংগ্রাম অত্যন্ত জটিল ও কঠিন কাজ হওয়ায় পার্টিকে হতে হয় বৈপ্লবিক কর্মতৎপরতায় সক্রিয় পার্টি। যেহেতু জনগণের ভূমিকাই সমাজ পরিবর্তনের প্রকৃত শক্তি সেহেতু কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের মাঝে পড়ে থেকে কাজ করবে, তাদের সংগঠিত করবে, তাদের রাজনৈতিক চেতনার মান উন্নীত করবে এবং তাদের শ্রেণিসংগ্রামের জন্য সংগঠিত করবে। পার্টির গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে একটি শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি দরকার হয়। কিন্তু পার্টি সদস্যদের রাজনৈতিক মান যখন নিম্নস্তরে থাকে এবং পার্টি সংগঠনের সাধারণ রীতি-নীতি পালনে যখন ঢিলেঢালা অভ্যাস গড়ে ওঠে, তখন পার্টির অভ্যন্তরে নিষ্ক্রিয়তা বাসা বাঁধে। অর্থাৎ পার্টি দুর্বল হয় নিষ্ক্রিয় হয় তখন, যখন পার্টির আদর্শগত ও রাজনৈতিক চেতনার মান নিম্নস্তরে থাকে।
তৃতীয়ত, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শগত ভিত্তি। মার্কসবাদ- লেনিনবাদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত পথই হবে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য পথ। সমাজে মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণের হাত থেকে রক্ষা করে সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সমস্তরকম ব্যবস্থা করাই সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সমাজের আমূল পরিবর্তন করতে হয়। পরিবর্তনের লক্ষ্যে লড়াইয়ের এ পথকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সমাজের নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক অবস্থান, দেশের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসমূহ, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সামাজিক গঠন এবং তার উন্নয়নের স্তরকে বুঝতে হয়। মার্কসবাদ একদিকে যেমন সমাজের সকল গোড়ামি-পশ্চাদপদতা ও সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে বাতিল করে এবং অন্যদিকে মার্কসবাদ সমাজকে জানা ও বোঝার ক্ষেত্রে উন্নত চিন্তা নির্মাণের সমাজবিজ্ঞান হওয়ায় বাস্তব কাজের ধারার পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। আজকাল ইন্টারনেট, টিভি, সংবাদপত্র এবং অন্যান্য তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থার বিপুল বিস্তারের ফলে আদর্শগত সংগ্রাম এক অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চতুর্থত, আগেই উল্লেখ করেছি শ্রমিক শ্রেণির শক্তি নিহিত থাকে তার সংগঠনের ওপর এবং পার্টি একটি সংগঠন হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকে ও জীবন্ত থাকে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার যথাযথ চর্চার ওপর। শ্রমিক শ্রেণির অগ্রবর্তী অংশের পার্টি হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক আন্দোলনকে কতখানি তীব্র করে তুলতে পারবে তা নির্ভর করে পার্টি সংগঠন কতটুকু ঐক্যবদ্ধ এবং পার্টি কাঠামো কতখানি জীবন্ত তার ওপর। গণতন্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতিসমূহকে যথাযথ অনুসরণই পার্টিকে জীবন্ত রাখতে পারে। গণতান্ত্রিকভাবে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কেন্দ্রিকতা এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিতে নীতি/সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব এই উভয়বিধ নীতিই হলো গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি। কেন্দ্রিকতা ভিন্ন গণতন্ত্র অবশ্যম্ভাবীভাবে পার্টিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এবং গণতন্ত্রবিহীন কেন্দ্রিকতা পার্টিকে স্বেচ্ছাচারের অধীন করে ফেলে। পার্টিকে নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে পার্টি সমস্ত রাজনৈতিক ইস্যুতে মুক্ত ও খোলাখুলিভাবে আলোচনার সুযোগ করে দিবে। পার্টি তার গঠনতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যে থেকে ভিন্ন মতকেও সম্মান দিবে। পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র সম্মিলিত চিন্তা ও সম্মিলিত কাজকে সুনিশ্চিত করে এবং শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অনুশীলনের মাধ্যমেই পার্টির ঐক্যকে ধরে রাখা সম্ভব হয়।
পঞ্চমত, পার্টির অভ্যন্তরে গণতন্ত্রকে বিকশিত করার জন্য সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা হলো পার্টির অন্যতম মূলনীতি। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত কাজের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পার্টির অভ্যন্তরে সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা অনুশীলন করতে হয় এবং পার্টির প্রতি খোলা মন ও সত্যবাদী হতে হয়। পার্টির নীতি হলো, ‘সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ’ যা অনুসৃত হবে সম্মিলিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পার্টিতে কাজের অভ্যাস ও সমষ্টিগত চেতনা আনতে এই নীতি গঠনমূলকভাবে প্রয়োগ করতে হয়। সমালোচনা ও আত্মসমালোচনাই হলো পার্টিতে বুর্জোয়াতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, উদারমতি, পার্টির রীতি-নীতি ভঙ্গ করার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সুস্থ পার্টিজীবনের জন্য একমাত্র অস্ত্র। নিজের ভুলের আত্মসমালোচনা এবং কোনো ত্রুটি গোপন না করে প্রকাশ্যে তা জনসম্মুখে স্বীকার করা হলো একটি লেনিনবাদী পার্টির নীতি। কমিউনিস্ট পার্টি ভুল করলে তা আলোচনা করতে ভয় পায় না। কারন ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জয় করা যায়। পার্টি সবসময় অভ্রান্ত পথে বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাবে এমন ধারণা ঠিক নয়, কারণ এ পথ এত সহজ নয়। সংগ্রামের অগ্রগতির পথ পরিচালিত হয় বাস্তব অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। বাস্তব অবস্থার সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে শ্রেণিসংগ্রাম পরিচালনার সময় পার্টি কখনও ভুল করতে পারে। সমালোচনা ও আত্মসমালোচনাই পারে এইসব ভুলগুলোকে শুধরে দিতে এবং একটি সঠিক রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পথকে প্রশস্ত করতে।
ষষ্ঠত, জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রক্ষা করা কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নীতি। এটা শুধু জনগণকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নয়, জনগণের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্যেও। জনগণের কাজই হলো কমিউনিস্ট পার্টির কাজ। পার্টির আদর্শ মন্ত্র হলো ‘জনগণের জন্য, জনগণের কাছ থেকে এবং জনগণকে’। পার্টি মূলত জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে গণসংগঠনের মাধ্যমে। গণসংগঠনগুলোকে পার্টি সংগঠিত করে এবং গড়ে তোলে শ্রেণিসংগ্রাম। কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্ব হলো গভীর সচেতনতার সঙ্গে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শ্রেণিসংগ্রাম পরিচালনা করা। কমিউনিস্টরা শুধুমাত্র জনগণের তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণের কাজে নিবিষ্ঠ থাকে না। তাৎক্ষণিক চাহিদা ও চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সংযোগ রপ্ত করতে চেষ্টা করে। কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো গণসংগঠনগুলির মধ্যে শ্রমজীবী মানুষদের শ্রেণি হিসেবে তাদের চেতনা বৃদ্ধি করা ও তাদের মধ্য থেকে সর্বোৎকৃষ্ট মানুষকে পার্টির মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সংগঠিত করা। শক্তিশালী গনণসংগঠন ছাড়া পার্টি হাজার হাজার মানুষকে কাজে নামাতে পারে না। কাজেই গণসংগঠনে সম্পৃক্ত মানুষের রাজনৈতিক ভূমিকা গুণগতভাবে নতুন স্তরে উন্নীত করার জন্য কমিউনিস্টদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সপ্তমত, কমিউনিস্টরা দেশপ্রেমের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে প্রকৃত দেশাত্ববোধ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তারা দেশপ্রেমিক ও আন্তর্জাতিকতাবাদী, কেননা তারা পুঁজিবাদকে পৃথিবীব্যাপী সমাজশৃঙ্খল হিসেবে দেখে, যে শৃঙ্খল ভাঙা এবং সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াই হলো একটি আন্তর্জাতিক কর্তব্য। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পুঁজির ক্ষমতায় সারা পৃথিবীকে একটি আন্তর্জাতিক গ্রামে পরিণত করেছে। প্রতিটি জাতির দেশাত্ববোধ সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তা একটি আন্তর্জাতিক সংগ্রাম। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম একই সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক।
লেনিনবাদী এসব নীতির ভিত্তিতে পার্টি গড়ে তোলাই হলো জরুরি কাজ। আজ সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ সংগঠিত হচ্ছে। প্রতিটি দেশেই সমগ্র শ্রেণির মানুষের একটি উন্নত বিকল্পের পথ অনুসন্ধানই হলো একমাত্র পছন্দ। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ওয়াল স্ট্রিট, ইয়েলো ভেস্ট এবং ভারতের নর্মদা আন্দোলনের মতো আমাদের দেশেও শাহবাগ আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রধান প্রবণতা, স্বতঃস্ফূর্ততা। আরো কিছু আন্দোলনের প্রবল আধিপত্য রয়েছে, যারা নৈরাজ্যবাদী। এদের মধ্যে রাজনীতি, আদর্শ ও ইতিহাস সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন কোনো ধারণা নেই। মার্কসবাদীদের দায়িত্ব হলো এসব গণদাবি ও গণআন্দোলন নিয়ে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে শোষণমুক্তির রাজনীতি, আদর্শ ও ইতিহাস সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা দেওয়া। শ্রেণিসংগ্রাম ছাড়া সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব নয়, এই ধারণায় তাদের সচেতন করা। পার্টির সাংগঠনিক নীতি ছাড়া পার্টির রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা ও বহু সমর্থক থাকা সত্ত্বেও পার্টি তার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। লেনিনবাদীর নীতির ভিত্তিতে পার্টি গঠন কৃষক-শ্রমিক-বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য মেহনতি মানুষের গণসংগঠনগুলোকে তাদের নিজ নিজ শ্রেণিতে সংগঠিত করে তাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করাই হবে অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ। বাস্তব অবস্থা পরিপক্ব হলে মনোগত অবস্থাকে শক্তিশালী করতেই হবে। একবিংশ শতাব্দি হলো গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের। তাই পার্টির রাজনৈতিক ও আদর্শগত লক্ষ্য হওয়া উচিত শক্তিশালী ও লড়াকু কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা।
লেখক : সভাপতি, বরিশাল জেলা কমিটি, সিপিবি
Login to comment..