রাজনৈতিক অঙ্গণে বাড়ছে অস্ত্রের ঝনঝনানি

শুভ চন্দ্র শীল

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
এক দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে, ‘আইন আছে প্রয়োগ নেই’। অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছুর সমাধানের স্বার্থে আইন আছে, আছে তার প্রয়োগ। অনেক খাতে আইন থাকলে তার প্রয়োগ নেই। তেমনি এক সেক্টর হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগ্নেয়াস্ত্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তিপর্যায়ে লাইসেন্সই বেশি। ব্যক্তিগত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতেই রয়েছে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র। বাকি অস্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের তথ্যানুযায়ী, ৫০ হাজারের বেশি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, এর থেকেও বেশি বৈধ অস্ত্র আছে দেশে। কারণ, জেলা প্রশাসন থেকেও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সেটির সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। পাশাপাশি অনেক থানা থেকে সব তথ্য ইনপুট করা হয়ে উঠেনি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া বলে জানান তারা। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বলছে, “রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে ১০ হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স”। “বৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে এগিয়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা”, “বৈধ অস্ত্রের হালনাগাদ তথ্য নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে”। “পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বলছে, দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার”। “বিভাগভিত্তিক সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ঢাকায়, সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৮৩টি কম ময়মনসিংহে, দুই হাজার ১১৮টি”। “বৈধ অস্ত্র ব্যবহারে নীতিমালা থাকলেও প্রয়োগে শিথিলতা”। “১০ বছরে অভিযোগ জমা পড়েছে ৫ হাজার, বাতিল হয়েছে মাত্র ২৭টির লাইসেন্স”। “শর্ত ভাঙলেও বাতিল হয় না লাইসেন্স”। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন বা নীতিমালা থাকলেই শুধু হবে না, সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে তা প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ, অস্ত্রের লাইসেন্স দেবার মতো যদি এর অপব্যবহার রোধেও রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে বৈধ অস্ত্রে অপরাধ শুধু বাড়বে না, তৈরি হবে ভীতিকর পরিবেশ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যা মোটেও কাম্য নয়। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬ এর ৩২ (ঞ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য বিশেষ প্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাদের লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত আয়কর পরিশোধে বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ সুযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় গত ১৫ বছরে সরকারি দল-সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে উঠেছে বেশির ভাগ অস্ত্রের লাইসেন্স। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক হালনাগাদ তথ্য না মিললেও বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের হিসাব রাখছে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ছাত্র-শ্রম বিভাগ। ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফএএমএস) মাধ্যমে এসব অস্ত্রের হিসাব সংগ্রহ করছে এসবি। কার্যক্রম চলমান বলে জানান দপ্তর সংশ্লিষ্ট এক সূত্র। সংবাদপত্রে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব (রাজনৈতিক-৪ শাখা) ইসরাত জাহান বলেন, দেশে ঠিক কী পরিমাণ বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স আছে, এর সঠিক তথ্য নেই। আমি না জেনে বলতে পারব না। এটা তো চলমান প্রক্রিয়া। কারও বাতিল হয়, নতুন করে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, অস্ত্রের ব্যবহার একটা সময় শুধু পুলিশ প্রশাসন এর কাছে লক্ষ্য করা যেত, কিন্তু গত কয়েকবছর যাবৎ যে পরিমাণ অস্ত্র ব্যবহার বেড়েছে তাতে পুলিশ প্রশাসনের সাথে তাল মিলিয়ে রাজনৈতিক নেতারা ও তাদের দেহরক্ষীরা ব্যবহার করছে। অনেক দলের ক্যাডার বাহিনীর লোকদের প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এ দুটি ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অস্ত্র ব্যবহারের কথা প্রকাশ্যে এসেছে বহুবার। সরকার দলীয় নেতাকর্মী-ক্যাডাররা অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরকম সংবাদ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। নিরাপত্তারা স্বার্থে অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক কারসাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব, নির্বাচনের মহড়া কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের মঞ্চে। সম্প্রতি একতরফা তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। ভোটের মাঠে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন তুলছে সাধারণ জনগণ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্যাডার বাহিনীর অস্ত্রের ঝাঝানিতে ফাকা হবে না তো কোন মায়ের বুক!

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..