ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর পল্টন মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ [ ছবি: রতন কুমার দাস ] একতা প্রতিবেদক :
অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, চালসহ নিত্যপণ্য ও বিদ্যুৎ-গ্যাস-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং জনজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
গত ১৮ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটায় জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির ৫২ বছরে বাংলাদেশে নেই। তার উপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন এবং সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে সকল পর্যায়ের নির্বাচনকে কলুষিত করে ক্ষমতায় থাকতে তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের এক নির্বাচনে তো ইভিএম মেশিনই যুবলীগ নেতা ছিনতাই করে নিয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন দুর্নীতির দায় জনগণের কাধে চাপিয়ে দিতে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি করছে, ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রশ্রয়ে রোজার আগেই খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে, শিক্ষা চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে না, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের মৃত্যু ঘটছে, ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নাই, প্রতিনিয়ত শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছে না অথচ সার, কিটনাশক, বীজ সেচের খরচ দফায় দফায় বাড়ছে। দেশের বাইরে টাকা পাচারের চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ পাচ্ছে কিন্তু অভিযুক্তরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। টাকা পাচার, ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্প, আর দুর্নীতির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে আর তার দায় চাপানো হচ্ছে জনগনের কাধে। যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দমন পীড়ন ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ।
সরকারি ছত্রছায়ায় শিক্ষাঙ্গনগুলো সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে ছাত্র, শিক্ষক কেউ আজ নিরাপদ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে আজ নারী নির্যাতনের ঘটনা চরম রূপ নিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ও বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া কোন অধিকারই আদায় করা যাবে না।
সমাবেশ থেকে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কৃষি ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করা; গ্রাম শহরের শ্রমজীবীদের জন্য আর্মিরেটে রেশনিং ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু করা, নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করা, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমির অধিকার ও জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরীর বিভিন্ন পথ পরিক্রমণ করে।