হাওরের বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করুন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
প্রতিবছরই বিস্তৃত হাওরের মানুষ ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ নিয়ে উদ্বেগে থাকেন। থাকারই কথা। কারণ, বছরের এই একটি ফসলের ওপরই লাখ লাখ কৃষককে নির্ভর করে বাঁচতে হয়। হাওর বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের এক বিরাট ভাণ্ডার। সরকারি হিসেবেই, এখান থেকে সারাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ বোরো ধান আসে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে হাওরের ফসলডুবির পর ঠিকাদারী প্রথা বিলোপ করে হাওরের বাঁধ এলাকার কৃষকের মাধ্যমে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন জেলা কমিটিতে সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক এবং সদস্যসচিব হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকেন। উপজেলায় উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার সভাপতি ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা কমিটি হাওরে গিয়ে গণশুনানী করে মাঠেই কমিটি ঘোষণা করার কথা। কিন্তু মাঠে কমিটি না করে নানাভাবে প্রভাবিত হয়ে ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন করা হয় বলে অভিযোগ করে আসছেন হাওরের অনেক ও সংগঠন। গত বছর এপ্রিলের অকালবন্যায় সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি হয়েছে। অনেক কৃষক তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। এরপর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের প্রাথমিক প্রক্রিয়া অক্টোবরে শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে হাওরে এবার প্রকল্প বেড়েছে; বরাদ্দ বেড়েছে বলে জানা গেছে। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর জেলার ৫৪টি হাওরের ৭৪৫ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে এক হাজার ৭৮টি ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। গতবার ৭৬৫টি প্রকল্পে ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এবার বরাদ্দ ও প্রকল্প বাড়িয়েও যথাসময়ে কাজ শুরু ও শেষ করা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষক নেতারা। তাদের আরও অভিযোগ, কৃষকের জন্য করা পিআইসিতে কৃষক স্থান পায়নি। স্থান পেয়েছে বহিরাগতরা। এ কারণে কাজের গতিও কম। বাঁধ এলাকার কৃষকরা কাজ পেলে তারা দ্রুত কাজ করতেন এবং ভালোভাবে কাজ করতেন। বাঁধের প্রি-ওয়ার্ক ও পোস্ট-ওয়ার্কে চরম দুর্নীতি করা হয়। জেলায় এখনও অনেক বেশি কাজ বাকি আছে, অথচ বন্যার দোহাই দিয়ে প্রকল্প ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছিল। তাই দ্রুততার সঙ্গে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। পাশাপাশি হাওরের নদ-নদী, খাল-বিল খননের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। হাওর এলাকায় বিএডিসি, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খনন কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করা, হাওরে অপ্রয়োজনীয় ও হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি বিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাওরের কৃষক নেতারা মনে করেন, হাওরের বাঁধের কাজে প্রকৃত কৃষকদের যুক্ত করে যথাসময়ে অর্থ ছাড় দেওয়ার কাজটি করতে হবে। এই কাজগুলো করা উচিত। কারণ, তা নাহলে এই বৈশ্বিক সংকটের সময়ে হাওরের ফসল নষ্ট হলে দেশ গভীর সংকটে নিপতিত হবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..