
একতা বিদেশ ডেস্ক :
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশে দেশে নানা দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। ‘বিশ্বের সবচেয়ে দমনমূলক দেশ’ হিসেবে জাতিসংঘের আখ্যা পাওয়া আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় সব রাজধানীই এদিন কেঁপে ওঠে অধিকার-সচেতন নারীদের ক্ষুব্ধ স্লোগানে। বেশিরভাগ দেশেই নারীদের দাবি ছিল সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার।
এদিন সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে নারীরা বিক্ষোভে নামেন। ব্যানার প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চড়াও হয় দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীটি। এর পরও নারীরা মিছিল নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ।
নারী দিবসে বিক্ষোভ হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও। ফরাসি সরকারের অবসর সংক্রান্ত নীতিমালা সংস্কারের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন নারীরা। আন্দোলনকারীরা জানান, দেশটিতে পুরুষদের তুলনায় গড়ে ৪০ শতাংশ কম উপার্জন করেন নারীরা। একইসঙ্গে তাদের পেনশনও পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। তাই সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দাবি তোলেন তারা।
বিক্ষোভ হয়েছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদেও। সমঅধিকার আদায়ের দাবিতে প্ল্যাকার্ড ব্যানার হাতে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় নারীদের।
লাল রঙের পোশাকে রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন ইসরাইলি নারীরা। বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাদের। এ আইন পাশ হলে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বাধার মুখে পরবে বলে মত আন্দোলনকারীদের। তাই সরকারের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের সিদ্ধান্ত তাদের জন্য বিপজ্জনক বলেও দাবি করা হয়।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে নারী দিবস উপলক্ষে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন অন্তত ২০ জন নারী।
নারী দিবসের মিছিল শেষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারীরা। মিছিল পরবর্তী এই সমাবেশে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সাধারণ আফগানদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন নারীরা।
২০২১ সালে দেশের ক্ষমতা দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত নারীদের ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করে যাচ্ছে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান গোষ্ঠী। ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, বিদেশভ্রমণ এমনকি বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে তালেবান।
অত্যাবশ্যক ক্ষেত্রগুলো ছাড়া সব সরকারি চাকরি থেকে ইতোমধ্যে নারীদের বিতাড়িত করেছে ক্ষমতাসীন তালেবানগোষ্ঠী। যেসব নারী এখনও তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন, তাদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্ক, মেলা এমনকি পথে ঘাটে গণশৌচাগারেও নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে তালেবান।
কিন্তু সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যে নীতিটি নিয়েছে এই গোষ্ঠী, তা হলো নারীদের মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক

ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষায় স্থগিতাদেশ দেওয়া।
এসব নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে এর আগেও বিক্ষোভ করেছেন আফগান নারীরা, কিন্তু তালেবানের সশস্ত্র বাহিনী সহজেই সেসব মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন, মিছিল থেকে নারীদের গ্রেপ্তার ও পরে তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এই বিশেষ দিনটিতে দেশে দেশে বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের গর্ভপাত থেকে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও উঠে আসে বিশ্ব নারীদের জোরালো কণ্ঠস্বরে। বিক্ষোভকারীরা প্রায় ১৫০টি শহরে ‘কাজে ও জীবনে সমতা’ দাবি নিয়েই নারীরা রাস্তায় নামে।
লন্ডনে মাদাম তুসো জাদুঘর এমমেলিন পাংখার্স্টের একটি নতুন মোমের ভাস্কর্য উম্মোচনের মাধ্যমে দিনটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। এমমেলিন ১২০ বছর আগে নারী ভোটের অধিকার নিয়ে তীব্র সংগ্রাম করেছিলেন।
তবে অনেক অঞ্চলে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে একটি মিছিলকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। জানানো হয়, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদ, যৌন হয়রানি এবং ঋতুস্রাবের মতো বিতর্কিত বিষয় সম্বোধন করে ব্যানার এবং প্ল্যাকার্ড বানানো হয়েছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিওটিভি জানায়, ৮ মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ‘আওরত আজাদি মার্চ’ নামের এই মিছিলটি। ইসলামাবাদের প্রেসক্লাব এলাকায় মিছিলপূর্ব সমাবেশে যোগ দেন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রহমানও।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শেরি রহমান এক টুইট-বার্তায় পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের প্রেসক্লাব এলাকায় নারী দিবসের মিছিলে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত ও আইনের আওতায় তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
আফগানিস্তান ও ইরানের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান আইনে নারীদের পদ্ধতিগতভাবে দমন-নিপীড়নের বিষয়টি ধরা পড়ে না। আফগান ও ইরানি নারীদের একটি বিশিষ্ট দল লিঙ্গ-বর্ণবৈষম্যকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত করার আহ্বান জানিয়েছে। স্বাক্ষর করা হয় খোলা চিঠিতে।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শিরিন এবাদিও। এছাড়া সহ করেছেন আফগান পার্লামেন্টের প্রথম মহিলা ডেপুটি স্পিকার ফওজিয়া কুফি, আফগান স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের কমিশনার বেনাফশা ইয়াকুবি।
থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াতেও বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন নারী গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য দীর্ঘপ্রতীক্ষিত বিল পাসের দাবিতে পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তাঁরা ইন্দোনেশিয়ার নারীরা দীর্ঘজীবী হোক বলে স্লোগান দেন।