জনগণের মুক্তির লড়াই গড়ে তুলুন: শাহ আলম
সংগ্রামী কমরেডগণ,
ভারত বিভক্তির পটভূমিতে ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ আমাদের পার্টি প্রতিষ্ঠা হয়।
পৌনে দুইশত বছর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে ভারতীয় জনগণ অনেক বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে আপস করে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশভাগ করেছে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ। সাম্রাজ্যবাদ-সাম্প্রদায়িকতার কাছে পরাজিত হয় ভারতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন। এই বিভক্তির যন্ত্রণা থেকে উপমহাদেশের মানুষ ও গণতন্ত্র এখনও মুক্তি পায়নি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমাদের পার্টিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন-নির্যাতন ভোগ করতে হয়, তেভাগা আন্দোলনের অকুতোভয় নেত্রী ইলা মিত্রের ওপর পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী বর্বর নির্যাতন চালায়। লড়াই করতে হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে, ২৪ এপ্রিল ১৯৫০ সালে খাপড়া ওয়ার্ডে পুলিশের গুলিতে আমাদের ৭ জন কমরেড শহীদ হন। ৫০-এর দাঙ্গার কারণে হাজার হাজার কমরেডকে দেশত্যাগ করতে হয়, আত্মগোপনে যেতে হয়।
টংক-নানকার আন্দোলনে আমাদের পার্টি বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে। এ লড়াইয়ে শত কমরেড শহীদ হন।
১৯৪৮-৫২ ভাষা আন্দোলনে আমাদের পার্টি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভূমিকা পালন করেছে।
পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়াশীল স্বৈরাচারী-আমলা শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট গঠনে আমাদের পার্টির ছিল সবচেয়ে বড় অবদান। যে যুক্তফ্রন্ট মুসলিম লীগকে পাকিস্তান হওয়ার ৭ বছরের মাথায় চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে।
আমাদের পার্টিকে বেআইনি করে রাখা হয়, পুরো পাকিস্তান আমলে শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়, জেলে ভরে রাখা হয়, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টিকে দমিয়ে রাখা যায়নি।
শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের লড়াই, ৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪-র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে আমাদের পার্টির কর্মীরা লড়াই করেছে।
গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন-১১ দফা রচনা ও আন্দোলনে আমাদের পার্টি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-র নির্বাচন, ৭১-র মুক্তিযুদ্ধে যৌক্তিক ও যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করেছে আমাদের পার্টি। মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার বেতিয়ারায় আমাদের ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখযুদ্ধে নিহত ও শহীদ হন।
পাকিস্তান ও আমেরিকার ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষ নিরসনে, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের অধিকার ও দেশ গড়ায় পার্টি ভূমিকা রাখে।
৭৫-র পর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, জিয়া-এরশাদ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের পার্টি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদমজীতে লড়াই করতে গিয়ে কমরেড তাজুল নিহত হন-শহীদ হন।
২০০১ সালে পল্টনে আমাদের মহাসমাবেশে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির বোমা হামলায় আমাদের ৫ জন কমরেড শাহাদাত বরণ করে।
পুঁজিবাদ আজ ব্যর্থ, যুদ্ধ ছাড়া তারা আজ বাঁচতে পারছে না। ভবিষ্যৎ পৃথিবী সামজতন্ত্র ও সাম্যবাদের।
এরশাদ স্বৈরাচারের পতন হয়েছে ৩২ বছর। আওয়ামী লীগ-বিএনপি বারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু দেশে গণতন্ত্র আসেনি, দেশ সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হয়নি, দেশে ধনবৈষম্য-শ্রেণি বৈষম্য পর্বতপ্রমাণ। দেশ ৫ এবং ৯৫-এ ভাগ হয়ে গেছে। দেশে দুটি অর্থনীতি চলছে। একটা গরিবের আরেকটা ধনীর।
আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। আমাদের রাজনীতিতে তারা প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ করছে।
কমিউনিস্টরা-কমিউনিস্ট পার্টি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, ভোট ও ভাতের জন্য লড়াই করছে। দেশের জনগণের মুক্তির জন্য যত নির্যাতন আসুক ব্যবস্থা বদল, গণতন্ত্র কায়েম, বিকল্প গড়ার লড়াই কমিউনিস্ট পার্টি অব্যাহত রাখবে, জোরদার করবে।
মানুষের সামাজিক মুক্তির জন্য কল-কারখানায়, গ্রামে-গঞ্জে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছড়িয়ে পড়তে হবে। প্রত্যেক কমিউনিস্টকে শাসকশ্রেণির বিকল্প শক্তি-সমাবেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে নামতে হবে। এই বিকল্প ছাড়া ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা ও গণতন্ত্র আসবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জিম্মিদশা থেকে জনগণকে মুক্ত করা যাবে না। আসুন, জনগণের মুক্তির লড়াই গড়ে তুলি।
দুনিয়ার মজদুর এক হও,
কমিউনিস্ট পার্টি জিন্দাবাদ।
প্রথম পাতা
বিদেশিদের কাছে ধরনা রাজনৈতিক দলগুলোর দেউলিয়াত্ব
‘ফ্যাসিবাদী শাসন বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না’
গাইবান্ধায় কৃষক নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি
নড়াইলের বড়দিয়ায় উদীচী উৎসবে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ‘প্রশাসন ব্যর্থ’
ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’
ছাত্রীদের আন্দোলন, ‘পদের গরম দেখানো’ বিচারককে সরানো হল বগুড়া থেকে
সুখের সূচকে ২৪ ধাপ নামল বাংলাদেশ
মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা
‘শব্দ-নিঃশব্দ’
Login to comment..