নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বাড়াতে আশা জোগোচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা প্রযুক্তি ডেস্ক : নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রাকে আরো সহজ করতে বিভিন্ন কৌশল আয়ত্ত্বে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর ধারাবাহিকতায় নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করে চলেছেন তারা। যেমন সৌর শক্তির সংগ্রহের জন্য এনেছেন দ্বিমুখী সৌর প্যানেল, তেমনি সেই শক্তি সঞয় করে রাখতে আবিষ্কার করেছেন খনির ভেতর মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি প্রযুক্তি। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসের দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প হিসেবে কাজ করতে দ্বিমুখী সোলার প্যানেল উন্নত করার নতুন এক কৌশল খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দ্বিমুখী সৌর প্যানেলের দু’পাশেই আলোক শক্তি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা থাকায় এটি একমুখী সৌর প্যানেলের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়া প্রতিফলিত আলোক শক্তি সঞ্চয়ের সুবিধা থাকার পাশাপাশি দ্বিমুখী প্যানেল গতানুগতিক যে কোনো প্যানেলের চেয়ে বেশি টেকসই। আর এটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখানে উন্নত দক্ষতা ও স্থায়িত্বের মানে হলো, এগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক শক্তি চাহিদার ১৬ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এখন পর্যন্ত দ্বিমুখী ফটোভোলটাইক বা সৌর সেলের মাধ্যমে উৎপাদিত শক্তির সঠিক পরিমাপ করা তুলনামূলক জটিলই ছিল। তুষার, ঘাস ও বালুর মতো ভূপৃষ্ঠ আবৃত করা বিভিন্ন পদার্থের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে দ্বিমুখী প্যানেলের পরিমাপ ব্যবস্থা উন্নত করার নতুন এক কৌশল খুঁজে পেয়েছে কানাডার ‘ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়া’র এক গবেষক দল। এই কৌশলের বিভিন্ন সুবিধার মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান ও উদীয়মান দ্বিমুখী প্রযুক্তির মধ্যে তুলনা, নির্দিষ্ট নকশা অপটিমাইজ করে কার্যদক্ষতা বাড়ানো ও অপ্রচলিত বাজারে সৌর প্যানেল স্থাপন বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো। দ্বিমুখী সৌর প্যানেল স্থাপনের ফলে বিদ্যুতের খরচও ব্যাপক হারে কমে আসে। এই বিষয় সম্পর্কিত সর্বশেষ ‘এ জেনারেল ইলুমিনেশন মেথড টু প্রেডিক্ট বাইফিসিয়াল ফটোভলটাইক সিস্টেম পারফর্মেন্স’ শিরোনামের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে ‘জুল’ নামের বৈজ্ঞানিক জার্নালে। অন্যদিকে গোটা বিশ্ব নবায়নযোগ্য সমাধানের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয়ের সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে পরিত্যক্ত খনি। অস্ট্রিয়াভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ অ্যাপ্লাইড সিস্টেমস অ্যানালাইসিস (আইআইএসএ)’র গবেষণা বলছে, বিশ্বের পরিত্যাক্ত খনিগুলোতে মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি সংগ্রহ করা যাবে, যা গোটা বিশ্বের চাহিদার সমান। বিজ্ঞানীদের অনুমান বলছে, খনির ভেতর মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক ৭০ টেরাওয়াট বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় করা যেতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী দৈনিক বিদ্যুৎ খরচের প্রায় সমান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। বাতাস বা সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য উপাদানের মাধ্যমে উৎপাদিত অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি কাজ করে। এ সময়ে এটি ভারী ওজন উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেলে ওই ভারী ওজন ছেড়ে দেওয়া হয়। মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পতনের সঙ্গে সঙ্গে এটি টারবাইনকে ঘুরায় ও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। গবেষণাপত্রের লেখকরা বলেন, পুরোনো খনিকে মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি হাউজ হিসেবে পুনর্ব্যবহার করলে তা স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্যেও লাভজনক হবে। কোনো খনি বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েন। এটি সেইসব সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেয়, যাদের অর্থনীতি খনির ওপর নির্ভরশীল।’ বলেন আইআইএসএ’র ‘এনার্জি, ক্লাইমেন্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর গবেষক জুলিয়ান হান্ট। খনিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড গ্র্যাভিটি এনার্জি স্টোরেজে (ইউজিইএস)’ কিছু সংখ্যক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে কারণ এগুলো তখন শক্তি সঞ্চয়ের সেবা হিসেবে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, খনিগুলোতে এরইমধ্যে মৌলিক অবকাঠামো ও পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্তি থাকায় এটি খরচ কমিয়ে আনতে ও ‘ইউজিইএস’-এর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..