বিজ্ঞানীদের কথা

মনির তালুকদার

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

আলবার্ট আইনস্টাইনকে দিয়েই শুরু করছি। ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইন এতটাই স্মার্ট ছিলেন, আর তার ব্রেইন নিয়ে বিজ্ঞানীরা এতটাই বিস্মিত ছিলেন যে মৃত্যুর পর তার ব্রেইন চুরি করা হয়। তার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ “ঊ=গপ ঝয়ঁধৎব’র জন্য তিনি বিখ্যাত, যা প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নের বিষয়। “থিওরি অব রিলেটিভিটি” নিয়ে তিনি কাজ করেছেন বছরের পর বছর। তবে তিনি যে কেবল এই আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং সূত্রের জন্যই পরিচিত এমনটা নয়। বরং আইনস্টাইন শিখিয়েছেন কীভাবে কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্প জীবনে অসম্ভবকে অর্জন করতে সাহায্য করে। তার সফলতার পেছনেও বহু বাধা ছিল। ওইসব বাধা ডিঙিয়ে তিনি সফল হয়েছেন। সফল হতে জীবনে বেশ কিছু নীতি অনুসরণ করেছেন তিনি। আইনস্টাইনের জন্ম এমন এক সময় যখন বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার হয়। চার বছর বয়স পর্যন্ত আইনস্টাইন কথা বলতে পারেননি। ডাক্তার জানিয়ে দেন, তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক মস্তিষ্কের চেয়ে অনেক বড়। মা-বাবার ভয় ছিল তাদের ছেলে হয়তো জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হবে। এজন্য অবশ্য কটু কথাও শুনতে হয়েছিল তাকে। স্কুলজীবনে তার তেমন কোনো প্রতিভার প্রতিফলনও দেখা যায়নি। বাকি বিষয়গুলোতে কাঁচা, শুধু গণিত ও বিজ্ঞানেই তিনি শীর্ষ ছাত্র ছিলেন। স্কুলে পড়াকালীন সময় তার বাবা একদিন তাকে একটি কম্পাস দিয়েছিলেন যেটি তার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয়। তার মনে কৌতূহল জন্মায় আসলে এই মহাবিশ্ব কীভাবে কাজ করে। প্রচণ্ড মেধা থাকা সত্ত্বেও তিনি স্নাতকের পরে একটি একাডেমিক চাকরি নিশ্চিত করতে পারেননি। ১৯০৩ সালে জার্মানির বার্নে ফেডারেল অফিস ফর ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি পেটেন্ট অফিসে ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন। এরমধ্যে দুই বছর অনেক রিসার্চের পর আইনস্টাইন জার্নাল অ্যানালস অব ফিজিক্সে চারটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বগুলো সময়, স্থান, পদার্থ, শক্তি এবং মধ্যাকার্ষণকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়েছিল পুরো বিশ্বকে। তার কাজ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ, মহাকাশ অনুসন্ধান এবং আলোর প্রয়োগসহ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির দিকে নিয়ে গেছে। তিনি জীবনের ২০ বছর বিজ্ঞান সাধনায় কাটিয়েছেন। তবে মানবতার কল্যাণে সংগ্রাম করেছেন ৪০ বছর। আইনস্টাইন তার জীবনের অর্জন থেকে শিখেছেন এবং সবাইকে শিখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি একটি ৬ বছরের শিশুকে বোঝাতে পারা যায় তাহলে সত্যিই আপনি একজন সফল মাস্টার। সাফল্যের জন্য প্রয়োজন অনুশীলন এবং অনুসরণ। প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করতে এবং কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। তিনি মনে করেন কৌতূহল কল্পনার দরজা খুলে দেয় এবং কল্পনা আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যায়। আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, “এমনটা নয়, আমি সমস্যাগুলো নিয়ে বেশিক্ষণ থাকি। সবকিছু একইভাবে চিন্তা করাও যুক্তিযুক্ত নয়। সমস্যা সমাধানে আমি কঠিন সময়ের মধ্যে থাকতে পছন্দ করি। আমি সহজে ব্যর্থতার কাছে নতি স্বীকার করি না। তাই অধ্যবসায় দেখান। সাফল্য আপনাকে বেশি দিন এড়াতে পারবে না। কর্মের ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা না করে সঠিক পথে চলতে থাকুন, সাফল্য কাছে আসবেই।” আইনস্টাইনের মতে, ভুল করাটা অন্যায় নয়- বরং ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে, আর এগিয়ে যেতে হবে। আর একই কাজ বারবার পুনরাবৃত্তি করলে জীবন কখনোই মূল্যবান হয়ে ওঠে না। বরং প্রতিটি কাজকেই উন্নত করার চেষ্টা করা উচিত। একই কাজ বারবার করে ভিন্ন ভিন্ন ফল আশা করাও মূল্যহীন বটে। বিশেষজ্ঞ হতে হলে সেই বিষয় সম্পর্কে সবকিছু জানতে হবে। আইনস্টাইন তার জীবনে যে দিকগুলোকে অনুসরণ করেছেন সেগুলো কেবল বিজ্ঞানীদের জন্যই প্রযোজ্য নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্যও শিক্ষণীয়। প্রতিটি সফল ব্যক্তিত্বের জীবনে অনেক অজানা ঘটনা ঘটে থাকে। দার্শনিক ও আলকেমিস্ট স্যার আইজ্যাক নিউটনেরও অনেক অজানা তথ্য আছে। নিউটনের শৈশব কেটেছে তার মা-বাবার ছায়া ছাড়া। তার অসুখী শৈশব এমন গোপন ব্যক্তিত্ব গঠনের মূলে ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর নিউটনের মা বার্নাবাসস্মিথ নামে এক ধনী ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। দাদা-দাদির যতেœ বেড়ে ওঠেন নিউটন। তবে মায়ের ছেড়ে চলে যাওয়া নিউটনকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। তার এই একাকিত্ব তাকে অবিশ্বাসী প্রকৃতির বানিয়ে ফেলে। অদ্ভুত বিষয় হলো, নিউটন তার কিছু বৈজ্ঞানিক এবং গাণিতিক আবিষ্কার সম্পর্কেও বছরের পর বছর নীরব ছিলেন। প্রাথমিকভাবে নিউটন একজন শক্তিশালী ছাত্র ছিলেন না। নিউটনের মা ছেলেকে কৃষক বানাতে চেয়েছিলেন। ১৫ বা ১৬ বছর বয়সে তাকে তার মা স্কুল ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। এজন্য তাকে একজন কৃষক হতে ইংল্যান্ডের গ্রান্থাম শহরের উলস্থর্প ম্যানরে ফিরে আসতে হয়। তবে নিউটন মোটেও খুশি ছিলেন না। আর এর বাজে প্রভাবও পড়েছিল তার ওপর। পরবর্তী সময়ে সেখানকার প্রধান শিক্ষকের কথায় নিউটনকে স্কুলে ফেরাতে রাজি হন তার মা। ১৬৬১ সালে নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিলিটি কলেজে চলে যান এবং পাশাপাশি কৃষিকাজ করেন। এরপরই ঘটে সেই ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৬৬৫ সালে ইংল্যান্ডে বুবোনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাবের পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। নিউটনকে ফিরে যেতে হয় উলস্থর্প ম্যানরের বাড়িতে। সেখানে একদিন বাগানে বসে থাকা অবস্থায় তিনি গাছ থেকে একটি আপেল পড়তে দেখেন, যা তাকে অবশেষে তার সর্বজনীন মধ্যাকর্ষণের সূত্র তৈরির অনুপ্রেরণা জোগায়। আপেলের গল্পটি উইলিয়াম স্টুকেলির কাছে বললে তিনি এটাকে ১৭৫২ সালে তার প্রকাশিত “মেমইরস অব স্যার আইজ্যাক নিউটনস লাইফ” এ অন্তর্ভুক্ত করেন। মজার ঘটনা হলো, ২০১০ সালে একজন নাসা মহাকাশচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মিশনের জন্য স্পেস শাটল আটলান্টিসের ওপর প্রাচীন আপেল গাছের এতটা টুকরো বহন করছিলেন। নিউটনের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ক্যালকুলাস আবিষ্কার নিয়ে জার্মান গণিতবিদ এবং দার্শনিক গটফ্রিড লিবনিজ এবং নিউটনের মধ্যে তিক্ত দ্বন্দ্বও হয়েছিল। যার কারণে অনেক গবেষণার পর বর্তমানে নিউটন এবং লিবনিজ দুজনকেই ক্যালকুলাসের জনক বলা হয়। তাছাড়া নিউটনকে নিয়ে আরো এক মজার তথ্য হলো, দাস ব্যবসার জন্য কুখ্যাত কোম্পানি সাউথ সি বাবল বিখ্যাত হয়েছিল আইজ্যাক নিউটনের জন্যই। ওই কোম্পানির শেয়ার কিনে ২০ হাজার পাউন্ড হারান তিনি। এই ঘটনা নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি গ্রহ-নক্ষত্রের গতিকে পরিমাপ করা শিখলাম, তবে শেয়ারবাজারের গতি বুঝতে পারলাম না।” ১৯৭৯ সালে তার মায়ের মৃত্যুর পর সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে ধনী বনে যান নিউটন। এরপরই তার দুটি বড় কাজ প্রকাশ করেন। ১৬৮৭ সালে “ম্যাথমেটিক্যাল প্রিন্সিপালস অব ন্যাচারাল ফিলোসফি” এবং ১৭০৪ সালে “অপটিকস”।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..