গত বছর প্রতি মাসে ৩৭ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা!

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : দেশে গত বছর স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর। বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত বছর প্রকাশিত আত্মহত্যার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন। তাদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের (সমমানের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ) ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ের আছে ১০৬ জন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে শুধু মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৪ জন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কষ্টের বিষয়টি উঠে এসেছে বলে মনে করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এ আত্মহত্যার তথ্যের মধ্য দিয়ে সচেতন সমাজের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে শিক্ষার্থীরা ‘সাফার’ করছে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার, যেখানে বা যার কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের কষ্টের কথাগুলো বলতে পারে। তাঁর মতে, আত্মহত্যার আগে শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে থাকে। ওই সময় কোনো শিক্ষকের কাছে কষ্টের কথা বলার সুযোগ পেলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে। এ ছাড়া মা–বাবা হিসেবে সন্তানকে সময় দেওয়া এবং তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রতিও জোর দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আত্মহত্যার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এর কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, গত বছর আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটি অংশ (২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ) এই পথ বেছে নিয়েছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মান-অভিমানের কারণে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন অভিমানের করে। এ ছাড়া প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আবার আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪ জন, শিক্ষকের মাধ্যমে অপমানিত হয়ে ৬, গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় ৭, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া মুঠোফোন কিনে না দেওয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চকলেট, জুসসহ শিশুরা যখন যা চায়, তখনই তা কিনে দিলে শিশুরা ধৈর্য ধারণ করতে শেখে না। পরবর্তী সময় তারা কিছু চেয়ে না পেলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই ইতিবাচকভাবে সন্তান লালন–পালনের প্রতি জোর দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আত্মহত্যা মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বাড়ানো; সন্তানদের মানসিক বিকাশ এবং তাদের কথা সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; স্কুল, কলেজপর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা; প্রেম-প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে বা অজ্ঞাতসারে ধারণ করা গোপন ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রচার তথা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ ও সাইবার অপরাধের বিষয়ে শাস্তি উল্লেখ করে বিশেষ প্রচারণাভিযানসহ ১১ দফা সুপারিশ করা হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..