মো. খালেকুজ্জামান
নদ-নদীর সাথে বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক ইতিহাস, অর্থনীতি, শিল্প-কারখানা, কৃষি, জলজ প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশের মান এবং জনস্বাস্থ্য একসূত্রে গাঁথা। নদীবাহিত পলি স্তরায়নের মাধ্যমেই কোটি কোটি বছর ধরে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ এবং প্লাবনভূমি গঠিত হয়েছে। সেই অর্থে বাংলাদেশের অস্তিতের সাথে রয়েছে নদ-নদীর সম্পর্ক। নদ-নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ রক্ষা করে প্লাবনভূমির সাথে নদ-নদীর জৈবিক সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যমেই প্রাকৃতিক স্থিতিস্থাপকতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বাংলাদেশকে একটি সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা রূপসী বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নদ-নদী এবং প্লাবনভূমির স্বাভাবিক সম্পর্ক নিশ্চিত করা জরুরি।
বাংলাদেশের হাওরসমূহ নদ-নদীর প্রাকৃতিক গঠনেরই এক বর্ধিত এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্ষাকালে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলায় বিস্তৃত ৩৭৩টি (মতান্তরে ৪১২) হাওর আসলে ঐ অঞ্চলের নদ-নদীর প্লাবনভূমির একীভূত একটি রূপ। হাওরসমূহ একীভূত হয়ে একটি মিঠা পানির জলাবন কিংবা সাগরে রুপান্তরিত হয়। ভূ-প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের হাওরসমূহ এক অনন্যসাধারণ জীববৈচিত্র্যের লীলাভূমি। সুন্দরবনের পরেই হাওরে জীববৈচিত্র্যের আধিক্য এবং জৈবিক উৎপাদনশীলতা বিদ্যমান। হাওরের অর্থনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম। হাওর অঞ্চলে প্রায় ২ কোটি মানুষের বাস। এই অঞ্চল থেকে দেশের ১৬ থেকে ২০ শতাংশ ধান এবং ২৮ শতাংশ মাছের উৎপাদন হয়। বাংলাদেশের ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪০ প্রজাতির মাছই হাওর অঞ্চলে পাওয়া যায়। অগণিত পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য হচ্ছে বাংলাদেশের হাওর। হাওরের অবারিত জলরাশি, ফসলের বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ, এবং অপার সৌন্ধর্যে এবং জীববৈচিত্র্যে ভরপুর জলাভূমি; প্রকৃতি-ভিত্তিক পর্যটনের জন্য যেমন রয়েছে অপার সম্ভাবনা তেমনই মিঠা পানি, কৃষি, মৎস, হাঁস-মুরগি, পশু-প্রাণী সম্পদ-ভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার জন্য রয়েছে সমস্ত নিয়ামক এবং উপাদান। হাওরসমূহ মেঘনা নদীর ঊর্ধাংশের অববাহিকা অঞ্চলের অংশ, যার ৪৩% বাংলাদেশে এবং ৫৭% ভারতের আসাম, মেঘালয়, মণিপুর ও নাগাল্যান্ডে অবস্থিত।
ভূ-প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিল হচ্ছে নদীর প্লাবনভূমিতে অবস্থিত সবচেয়ে নিম্নাঞ্চল যেখানে বছরজুড়েই জলাশয় কিংবা জলাভূমি বিরাজ করে। সেই অর্থে, হাওরের অভ্যন্তরেই বিলের অবস্থান। হাওরের বাইরেও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য বিল রয়েছে, যেমন চলন বিল, আড়িয়াল বিল, এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত অসংখ্য বিল। হাওরের মতো জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণ-প্রকৃতি সমৃদ্ধ ভূমিরূপ হচ্ছে বিল। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিল হলো চলন বিল, যা উত্তরবঙ্গের বেশ কটি জেলাজুড়ে বিস্তৃত। পদ্মা এবং যমুনা নদীর প্রবাহ-উচ্চতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাকারী একটি বিশাল জলাধার হিসেবে এই বিল কাজ করে। দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত আড়িয়াল খাঁ বিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পুকুর এবং জলাধারগুলিও পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অপার সম্ভাবনা এবং প্রাণ-প্রকৃতির অনন্যসাধারণ বৈচিত্র্যে ভরপুর হাওর এবং বিলসমূহ বর্তমানে নানামুখী সংকট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের শিকার। আর্থ-সামাজিকভাবেও হাওর এবং বিল অঞ্চলের জনপদ; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং জীবনমানের বিভিন্ন সূচকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে পশ্চাদপদ। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, ইউনেসকোর হিসাব মতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের গড় শিক্ষার হার যেখানে ৬১% সেখানে হাওর অঞ্চলের শিক্ষার হার ২০% থেকে ৪২%। শিশুমৃত্যুর হারও জাতীয় গড়ের (এক লাখে ৬৪) তুলনায় হাওর অঞ্চলে (এক লাখে ৭৬) বেশি।
হাওরের মূল সমস্যাসমূহ মোটাদাগে নদ-নদী এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত অববাহিকায় বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত অবক্ষয়ের সাথে সম্পর্কিত। হাওরের পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে বিভিন্ন অংশে ঘটে যাওয়া অকাল বন্যা, আফাল (বিশাল ঢেউ), আকস্মাৎ বা হড়কা বন্যা, বর্ষাকালে ঢেউয়ের আঘাতে গ্রাম ভাঙন, নদী-নালা-খাল ভরাট হয়ে ভূমিরূপ পরিবর্তন, মেশিনের মাধ্যমে নদীবক্ষ থেকে বালু উত্তোলন, কৃষিজমিতে বালু-পলি ইত্যাদি স্তরায়নের ফলে উর্বরতা হ্রাস, মাটি উঁচু করে হাওরভেদী রাস্তা এবং নদীর পার বরাবর বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও জলজট বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ্য পানি-স্তরের পতন, শুকনা মৌসুমে নদীর নাব্য এবং পানিবহন ক্ষমতা হ্রাস, কৃষিতে কৃষকের অনাগ্রহ ও পতিত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি, ইট ভাটার কারণে বায়ুদূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, নদী ভাঙ্গন ও বন্যার ফলে আশ্রয়হীনতার ফলে বেকারত্বের কারণে পরিবেশ শরণার্থীর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম।
দেশের হাওর, নদী, এবং বিলসমূহের বিভিন্নমুখী পরিবেশ-প্রতিবেশগত সংকটের পেছনে বিভিন্ন বৈশ্বিক, আঞ্চলিক, এবং অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ দায়ী। বৈশ্বিক কারণসমূহের মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন যার ফলে মেঘনা নদীর অববাহিকা অঞ্চলে (যার অংশ হচ্ছে হাওর অঞ্চল) এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, সময়কাল, এবং স্থায়িত্বকালে পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে নদ-নদী প্রবাহের ঋতুভেদ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আঞ্চলিক কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে উজানের দেশসমূহ কর্তৃক বাংলাদেশে প্রবেশকারী নদ-নদীর প্রবাহ অপসারণকারী ও বাধা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং অববাহিকা অঞ্চলে বনাঞ্চল নিধন ও অবাঞ্ছনীয় ভূমি-ব্যবহার ও ভূমি-রূপ পরিবর্তন, ইত্যাদি। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে; পানি প্রবাহের হঠাৎ উত্থানপতনের মাত্রা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; এবং সাধারণভাবে প্রবাহের পরিমাণ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ্য যে ২০২২ সালে হাওর অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে তিনবার বন্যা হয়েছে। গত বছরের অশ্রুতপূর্ব বন্যা, যাতে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ শহর নিমজ্জিত হয়ে যায়; বিষয়টি হাওর এলাকার সংকটকে সমগ্র দেশবাসীর সামনে নিয়ে এসেছে। শুধু জুনের ১৫-১৭ তারিখেই চেরাপুঞ্জিতে ২৪৫৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে; স্মর্তব্য যে ২০১৭ সালে ৮ দিনে ১২৬২ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছিল। সুনামগঞ্জেও ঐ তিন দিনে ১৫০০ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়, যা কিনা চেরাপুঞ্জির তুলনায় ৬০% বেশি। এই বন্যার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি, আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিগত ২০১৭ সনে সংঘটিত প্রলয়ংকরকারী বন্যাও হাওরের সমস্যাকে সকলের গোচরে এনেছিল।
বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক কারণের পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পানি উন্নয়ন বিষয়ে অনুসৃত কর্ডন (তথা বেষ্টনী)-পন্থা ভিত্তিক নীতিমালা এসব সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিগত সময়কালে হাওর এলাকায় বিপুল পরিমাণে মাটি উঁচু করে অনেক সড়ক নির্মিত হয়েছে। এইসব সড়কে পর্যাপ্ত সেতু এবং কাল্ভার্ট না থাকার কারণে ভূ-উপরিস্থ পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং অল্প বৃষ্টিতে শহরগুলিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। নদীর পার ধরে ফসল রক্ষা বাঁধ থাকার কারণেও বৃষ্টির পানি দ্রুত পার্শ্ববর্তী খাল-বিল-নদীতে গিয়ে পড়তে না পারার কারণেও বন্যা এবং জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিগত কয়েক দশকের তুলনায় হাওর অঞ্চলের প্লাবনভূমিতে অনেক বেশি ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য ভৌতিক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে, যার ফলে বন্যার প্রকোপ এবং স্থায়িত্বকালও বেড়েছে। উপরন্ত, বর্ষাকালে হাওরে প্রবাহমান ভূ-উপরিস্থ পানিপ্রবাহ নির্বিঘ্ন নিষ্কাশনের জন্য হাওরের নদী সমূহে যে পরিমাণ পানি-বহনক্ষমতা থাকা জরুরি তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিয়মিত ড্রেজিং না করার কারণে বন্যা এবং জলাবদ্ধতা আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হাওরের নদীসমূহ ভরাট এবং নদীর প্লাবনভূমিতে ব্যাপকহারে ভূমিরূপে পরিবর্তন হওয়ার ফলে বন্যাকালীন সময়ে পানি নিস্কাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে বন্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তাছাড়াও, হাওরের প্লাবনভূমিতে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণের ফলে ভূ-উপরিস্থ পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েও বন্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
চলমান ভূতাত্ত্বিক গঠন প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল আস্তে আস্তে অবনমনের শিকার হচ্ছে এবং যার ফলে ভূমি-উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে। কৃষিকাজের ফলেও একইভাবে প্লাবনভূমির জমির উপরিভাগের মাটি ক্ষয় হয়ে ভূমি-উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রতিটি নদী ভাটিতে প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্রমশ বেশি পানি বহন করার জন্য তার প্রস্থ এবং গভীরতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, হাওরের প্রায় প্রতিটি নদীর প্রস্থ এবং গভীরতা ভূমিরূপ পরিবর্তন এবং দখলের শিকার হয়ে ভাটিতে সংকুচিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ যাদুকাটা, রক্তি নদী, ধলা নদী, সারি-গোয়াইন, সুরমা নদীর কথা উল্লেখ করা যায়। তাছাড়া, সময়ের ব্যবধানেও অনেক নদীর প্রশস্থতা হ্রাস পেয়েছে। যাদুকাটা নদীটির প্রস্থ ২০০৪ সালে ভারত সীমান্তের নীচে ১৬৮ মিটার থেকে কমে ২০১৭ সালে ৪০ মিটারে পরিণত হয়েছে এবং সংকুচিত নদী পাড় কৃষিজমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। একইভাবে ঘোড়াউত্রা নদীটি নিকলী উপজেলার ছাতিরচরে ১৯৯৭ সালে ৪১১ মিটার প্রস্থ থেকে ২০০৭ সালে কমে ৩৬৪ মিটার হয়েছে। হাওর অঞ্চলের সমস্ত নদীর পানি ভৈরবের অবস্থিত মেঘনা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু তিনটি রেল এবং সড়ক সেতু নির্মাণের ফলে সেই নদীটির প্রস্থ অনেক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও সেতুর পিলার উজানে পলি জমে নদীটির নাব্যতা এবং পানিপ্রবাহ ক্ষমতা আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ভৈরবের উজানে অবস্থিত কালীপুরে নদীটির প্রস্থ যেখানে ১৬০০ মিটার সেখানে ভাটিতে অবস্থিত ভৈরব সেতুর নিচে প্রস্থ মাত্র ৬০০ মিটার। বন্যাকালীন সময়ে উজানে অবস্থিত হাওরের পানি নিষ্কাশনে অপ্রতুল হওয়ার কারণে বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং জলাবদ্ধতা বাড়ছে।
একইভাবে একাধিক সুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়াল নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে ফেলেছে। অথচ, বড়াল হলো চলন বিলের প্রধান নদী, যা পদ্মা এবং যমুনা নদীর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতো এবং এই উভয় নদীর পানি চলন বিলে প্রবাহিত করতো। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের বিলসমূহ বেষ্টনী-পন্থাভিত্তিক পোল্ডার নির্মাণের করুণ শিকারে পরিণত হয়েছে। এর ফলে এসব বিল এলাকার বহুলাংশ এখন জলাবদ্ধতা দ্বারা আক্রান্ত, যার ফলে সেখানকার মানুষ এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। পুকুর এবং জলাধারগুলোও সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। (চলবে)
লেখক : বৈশ্বিক সমন্বয়ক, বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন); অধ্যাপক, লক হ্যাভেন ইউনিভার্সিটি, পেনসিল্ভনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র