রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের ছায়া

আলতাফ হোসাইন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরে বিদেশিদের ঘনঘন যাতায়াত এবং ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাবহির্ভূত দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক কী বার্তা দেয়, তা ভালভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে কোন দেশের কী ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার বিষয়টি যদি এই ধরনের এজেন্ডার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাতে আপত্তির কোনো কারণ নেই। কিন্তু আলোচনা যদি এই এখতিয়ার বহির্ভূত অন্য কোনো বিষয়ের ওপরে হস্তক্ষেপ করে তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু আজকাল দেশের অভ্যন্তরে এমন কিছু বিষয় নিয়ে বিদেশিদের অযাচিত হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে তা নিয়ে কিছু কথা বলা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে আমাদের দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় কে থাকবে আর কে থাকবে না তাই নিয়ে বিদেশিদের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে। আর এই নিয়ে কার উপরে কি নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে তার হিসাব নিকাশের যেন এক মহা পৈশাচিক উল্লাস চলছে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়টি হলো এসব আলোচনায় গা ভাসিয়ে দিয়ে আমার দেশের কিছু রাজনৈতিক দল এবং তার চেলা চামুণ্ডাদের উল্লাসের শেষ নেই। একটা সুতা পেলেই অমনি যেন এসব অতি উৎসাহী নালায়েক ব্যক্তিরা নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। শুরু হয়ে যাচ্ছে সেই বিষয় নিয়ে নানা ক্ষিস্তিখেউড় কচকচানি। এই সব নালায়েকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করা আমাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। দেশের অভ্যন্তরে কোথায় কোন অনিয়ম ও অসঙ্গতি কিংবা দুর্নীতির আখড়া গেড়ে বসেছে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করার অধিকার আমাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। আমরা তা করবো। রাষ্ট্রক্ষমতায় কোন সরকার অধিষ্ঠিত, সেই সরকার জনগণের কল্যাণে তার গৃহীত নীতি ও আদর্শ সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারছে কি না তা দেখা ও বোঝার দ্বায়িত্ব এ দেশের জনগণের। জনগণ তা দেখবে এবং বুঝবে। প্রয়োজনে জনগণ ক্ষমতাসীন সরকারের যদি পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে তবে তাই করবে। কিন্তু অযাচিতভাবে বিদেশি কোনো শক্তি এসে তাতে নাক গলানোর চেষ্টা করবে আর আমরা তাতে মজা পাবো আর উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে উপভোগ করবো কিংবা ‘আহা বেশ বেশ, আহা বেশ বেশ’ বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবো- এটা কোনো সুষ্ঠু ও আদর্শ নৈতিকতা হতে পারে না। এই কালচারের চর্চা যে শুধু এবারেই হচ্ছে তাই না। অতীতেও আমরা বুর্জোয়া ধারার প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই ধরনের রাজনৈতিক কালচারের চর্চা বহুবার দেখেছি। যা আমার দেশের মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক কালচারের সঙ্গে বড়ই বেমানান ও লজ্জার। আজকে এটা বলার সময় এসে গেছে যে দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতার কাড়াকাড়ির খেলায় মত্ত বুর্জোয়া ধারার রাজনৈতিক দলগুলির দৌরাত্ম্যের কারণে আজকে আমারা যা চাই না তাই হরহামেশাই ঘটে চলেছে। দেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ধরে এরা এই ধরনের একটি গণস্বার্থবিরোধী কালচার দেশের অভ্যন্তরে চালু করে দেশকে একটা সীমাহীন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আজকে সময় এসেছে দেশকে এই অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে বের করে নিয়ে আসার। ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই। দেশ কারো বাপ-দাদার জমিদারি বা তালুকদারি নয়। এই দেশের স্বাধীনতা এমনি এমনি নদীর জলে ভেসে আসে নাই। এই দেশের স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে, দুই লক্ষ মা বোন তাদের পবিত্র ইজ্জত দিয়েছে, কত রাস্তা, পুল কালভার্ট, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহলের এক সংকীর্ণ স্বার্থের কাছে বিলীন হয়ে যাবে আর আমরা শুধু অসহায়ের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো তা হতে পারে না। বুর্জোয়া সার্থের দৌরাত্ম্যের গণ্ডি পেরিয়ে আমাদের আজকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে আজকে আমাদের বীরের মতো এগিয়ে যেতে হবে। বুর্জোয়া রাজনীতির সীমাহীন দৌরাত্ম্যের বেড়াজাল ছিন্ন করে এগিয়ে যেতে হবে আলোর পথে, মুক্তির পথে। ঘুস, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুটপাট, জবরদখল ইত্যাদি দেশের ভেতরে এত বেশি শিকড় গেড়ে বসেছে যে এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এসব অপকর্মের মধ্য দিয়ে সমাজে এক শ্রেণির লুটেরাগোষ্ঠী দেশকে লুটেপুটে খাচ্ছে, লুটের অর্থ অবাধে পাচার করে দিচ্ছে বিদেশে। আর বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী শাসকগোষ্ঠী শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কিংবা বুঝেও না বোঝার ভান করেছে। এ হতে পারে না। এই লুটেরাগোষ্ঠী কারা, এদের নাম ঠিকানা কী, তা জানার অধিকার দেশের প্রকৃত মালিক জনগণের আছে, জনগণকে তা জানাতে হবে। খবরের কাগজ থেকে শুরু করে দেশে যত ধরনের প্রচারমাধ্যম চালু আছে সবগুলিতে তা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এই তালিকা মূল মূল শহরের উল্লেখযোগ্য জায়গায় টানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সাথে এইসব অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে এমনিতেই দুই থেকে আড়াই লাখ বেকার মানুষ ছিল, করোনা দুর্যোগে পড়ে আরো সমসংখ্যক মানুষ তাদের পছন্দের জীবিকা হারিয়েছে, অতি সাম্প্রতিককালে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আরও একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তার পছন্দের জীবিকা হারিয়েছে। সবটা মিলিয়ে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এই যখন দেশের চলমান হালচাল ঠিক সেই মুহূর্তে শুনতে হচ্ছে লুটেরাগোষ্ঠীর সীমাহীন দৌরাত্ম্যের কথা। এজন্য দেশকে জনগণ স্বাধীন করে নাই। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল একটি শোষণমুক্ত ও সমঅধিকারের সমাজ ব্যবস্থার। আর সেই লক্ষ্য হাসিলের জন্য সংবিধানে যে চারটি মূল নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার মধ্যে একটি অন্যতম নীতি হলো সমাজতন্ত্র। সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে নীতি হিসাবে গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে চর্চা হচ্ছে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার। বাজারে খোলামেলাভাবেই চালু আছে ধনতান্ত্রিক নীতি তথা ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’। আর এই মুক্তবাজার অর্থনীতির দৌরাত্ম্যের কারণে চাল, ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, তেল, চিনি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের দাম ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো একবার নামছে তো আরেকবার উঠছে। এ যেন এক ভানুমতির খেলা। দেখার কেউ নেই, বোঝার কেউ নেই। সরকারের মন্ত্রী এখানে অসহায়, সরকার এখানে অসহায়। প্রশ্ন করলে মন্ত্রী সাহেবদের সাফ জবাব ‘কিছুই করার নেই’। বাজার যেহেতু মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতিমালা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সুতরাং তাদের করার কিছুই নেই। কিছু করতে গেলেই নাকি নীতিমালার লঙ্ঘন হবে। বাহ, কি চমৎকার কথা। মানুষ মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতিমালার কারণে প্রতিনিয়ত হাপিত্তেশ করছে আর সরকার বসে আছে তার সাধের নীতিমালা নিয়ে। এখন প্রশ্ন হলো- যে নীতিমালা জনজীবনের কোনো স্বস্তি আনতে পারে না, যে নীতিমালা জনজীবনকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেয়, একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে প্রান্তিক সীমান্তে ঠেলে দেয়। সেই নীতিমালার পদলেহন করে লাভ কী। সত্যিকার অর্থে যদি কেউ নিজেকে জনগণের সরকার বলে দাবি করে তাহলে সেই সরকারের পবিত্র দায়িত্ব হলো তড়িৎ গতিতে জনগণের স্বার্থে নীতিমালা গ্রহণ করে তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। কিন্তু বুর্জোয়া ধারার রাজনৈতিক দলগুলির সমস্যা হলো তারা তাদের শ্রেনিস্বার্থের নীতিমালা থেকে সরবেন না। জনগণের অবস্থা যেদিকে যায় যাক তাঁরা তাঁদের নীতিমালার বাইরে একচুল ছাড় দেবেন না। বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইদানিং নতুন হাওয়া লেগেছে। তারা বিভাগে বিভাগে বড় বড় জনসভা করে নিজেদের কিছুটা হালকা বোধ করছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা কুনো ব্যাঙের মত দলজাবুড়া মাথায় দিয়ে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। আষাঢ়ের ঝিরিঝিরি বর্ষণে তাদের জীবনে আবার নতুন প্রাণ ফিরে এসেছে। তাই তারা এবারে দলজাবুড়া ঝেড়ে ফেলে দিয়ে প্রকাশ্য মাঠে নেমে একসুরে তানপুরা বাজিয়ে দিয়েছে। আর এইসব দেখে এবারে সরকারের হুঁশ ফিরে এসেছে। এতদিন সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব রসিকতা করে বলতেন ‘—কই বিরোধী দলের আন্দোলন। এই ঈদ শেষ হলে তারা মাঠে নামবে, ওই পূজা শেষ হলে তারা মাঠে নামবে । ঈদ যায়, পূজা যায় বিরোধীদলের তো কোন আন্দোলন দেখি না...’। এমনি কত কি। কিন্তু সেই রসিকতা দিয়ে যে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না আওয়ামী লীগ সরকার এবার তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের চাপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার ওপরে কথা নেই বার্তা নেই দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুদের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জনগণ যাবে কোথায়। জনগণ আর নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে রাজি নয়। সংকটের হাত থেকে মুক্তির জন্য তাই জনগণ হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জনগণের এমনি এমনি শোক হয়নি যে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যদি সঠিকভাবে হাল ধরতে না পারে জনগণের চাপা ক্ষোভের মাত্রা যে কী ধরনের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে সকালটা দেখলেই তা আন্দাজ করা যায়। তার মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতিমালা দিয়ে তা আর বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যাবে না। বুর্জোয়া ধারার রাজনৈতিক দলগুলি জনগণের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা ও সংকট নিয়ে যত না বেশি মাথা ঘামায় তার চেয়ে তাদের কাছে মাথা ঘামানোর বিষয়টি হলো নির্বাচন। নির্বাচন পদ্ধতিটা কী হবে সেটাই হলো তাদের কাছে মূল আকর্ষণ। তাই সরকারের ভাগ্য ভাল যে আন্দোলনটা শুধুমাত্র নির্বাচন প্রদ্ধতির খোলনলচে পাল্টে দেয়ার সীমারেখার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হোক- এসব জনগণের পুরোনো দাবি। দীর্ঘদিন ধরে এইসব দাবি নিয়ে লড়াই চলছে এবং চলবে। কিন্তু বুর্জোয়া ধারার রাজনৈতিক দলগুলি সেই দাবি নিয়ে থোড়াই চিন্তা করে। কারণ, তাদের হাতে আছে অঢেল অর্থ আর সম্পদ। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য তাদের কাছে আছে নতুন নতুন কৌশল। প্রয়োজনে তারা অর্থের সাথে হুন্ডাগুন্ডা নামিয়ে যেনতেন প্রকারে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। এই অবস্থা যেমন ক্ষমতাসীন দলের আছে, ঠিক তেমনিভাবে ক্ষমতা বহির্ভুত বুর্জোয়া ধারার রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও আছে। সুতরাং শুধুমাত্র নির্বাচন ইস্যুতে আন্দোলনকে সরকার এতটা ভয় পায় না। জনজীবনের মৌলিক সমস্যা ও সংকট সমাধানের পথে যদি আন্দোলন পরিচালিত হতো তাহলে সরকার বুঝতো ‘কত ধানে কত চাল’। কিন্তু একটি বুর্জোয়া সরকারের বিরুদ্ধে আর একটি বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের কেবলমাত্র নির্বাচন ইস্যু নিয়ে যে লড়াই সেই লড়াই যে এর থেকে আর বেশি কিছু দিতে পারবে না এটাই হলো বাস্তব সত্য। খাদ্য, বস্ত্র , বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মোটা দাগে এই দাবিগুলো হলো মানুষের মৌলিক অধিকার ও দাবি। সরকারের এসব মৌলিক দাবি পূরণে কোনো বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেই। বছর বছর সরকারের বাজেট হয় আর প্রতি বছরেই সেই বাজেটের কলেবর বৃদ্ধি হয় কিন্তু এই সব বাজেটে উপরোল্লিখিত মৌলিক দাবিগুলি পূরণে মোট বাজেটের কত অংশ বরাদ্দ থাকে সেই চিত্রটা একবার মনোযোগ দিয়ে দেখার জন্য দেশের সচেতন নাগরিক সমাজকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। বছরের পর বছর শুধু বাজেটের আকার বৃদ্ধি করে জণগনের ‘আই ওয়াশ’ করা হয়, কিন্তু বাস্তবে জনগণের মৌলিক সমস্যা ও সংকট সমাধানের পথে তার উদ্যোগ কতটুকু মৌলিক প্রশ্নটি হলো এই জায়গায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে কতকগুলি চমকপ্রদ কাজের মধ্যে সরকারের একটি ঢাক পিটানো কাজ হলো প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা বছরের সূচনা পর্বে সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচি। কিন্তু এই বই বিতরণ কর্মসূচিও এবারে হোঁচট খেয়েছে। কাগজের সংকট এবারে এতটাই তীব্র যে সরকার শেষ পর্যন্ত মসৃণ ও চকচকে কাগজের পরিবর্তে বিবর্ণ ধূসর রঙের কাগজ দিয়ে কোনোমতে বই ছাপিয়ে শিক্ষা বছরের শুরুতে অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে সরকারের বই বিতরণ কর্মসূচি শেষ করার পুরোনো ধারা ধরে রাখার চেষ্টাও বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। সুতরাং সরকারের এই বই বিতরণ কর্মসূচির হালহকিকত দেখে যা অনুমান করা যায় তাতে এই কর্মসূচিও এবার আর সেই সফলতার মুখ দেখাতে পারছে না। দেশের চলমান রাজনীতি যে বুর্জোয়া ধারার রাজনৈতিক ফাটলের মধ্যে আটকে আছে এই কথাগুলি জনগণের মধ্যে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই চেতনা দেশের প্রকৃত মালিক এ দেশের শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া না যাবে এবং তাদের একটি সঠিক রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের এই চলমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অচলায়তনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। সুতরাং আজকে দেশের সকল দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল মহলের পবিত্র দ্বায়িত্ব এ কাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার কাজে মনোযোগ নিয়োজিত করা। লেখক : সদস্য, সিপিবি

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..