সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল পেরু

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা বিদেশ ডেস্ক : সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বামপন্থি নেতা পেদ্রো কাস্তিলোকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে চলছে সরকারবিরোধী আন্দোলন। গত মাস থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে সরকারের দমন-নিপীড়নে অন্তত ৫০ জন নিহত হওয়ার জেরে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছে। ১৯ জানুয়ারি কয়েক হাজার ক্ষুব্ধ জনতা রাজধানী লিমায় বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তের পদত্যাগ, সংবিধান পরিবর্তন ও আগাম নির্বাচনের দাবি জানান। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিক্ষোভকারী ছিলেন আদিবাসী অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা। জানা যায়, এদিন লিমার বিভিন্ন রাস্তায় নামা বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়েন। শহরের একটি ঐতিহাসিক ভবনে আগুন লাগার খবরও পাওয়া যায়। দাঙ্গাকারীদের প্রতিহত করতে মোতায়েন করা হয় দাঙ্গা পুলিশ। অস্থিরতা রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ পতাকা ও ব্যানার নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আয়াকুচো ও হুলিয়াকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য সরকার ও পুলিশের ওপর চড়াও হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর ভিডিও প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় আরেকিপায় বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করছেন কয়েকশ বিক্ষোভকারী। আর তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষ পরে আরেকিপা ও কুস্কো বিমানবন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। এ দুই বিমানবন্দরের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় হুলিয়াকা শহরের আরেকটি বিমানবন্দরে হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তে। দাঙ্গাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিবহন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির ২৫টি অঞ্চলের ১৮টিতেই বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। জানা গেছে, পুলিশ রাজধানী লিমার সব প্রবেশপথের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নেতারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই দাবি করেন, লিমার ঐতিহাসিক ওই ভবনে আগুন লেগেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার ছোড়া কাঁদানে গ্যাস থেকে। তবে পেরুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আলবের্তো ওতারোলা বলেন, এটা কোনোভাবেই বিক্ষোভ হতে পারে না। দাঙ্গাকারীরা আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাশকতা চালাচ্ছেন। গত মাস থেকে পেরুতে খণ্ড খণ্ড কখনো টানা কয়েকদিন যেসব সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে, তেমনটা দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেখা যায়নি। এসব বিক্ষোভে দরিদ্র, গ্রামাঞ্চলের মানুষরা জিনিসপত্রের বাড়তে থাকা দাম, অসাম্য নিয়ে লিমার ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, কপারসমৃদ্ধ আন্দিজ দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা নিচ্ছে। তারা ১৯৯০ এর দশকে ডানপন্থি লৌহমানব আলবের্তো ফুজিমোরির সময়ে করা বাজারবান্ধব সংবিধান বদলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও বলুয়ার্তেকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ এবং আগাম নির্বাচনও চাইছে। ‘আমরা দখলদার দিনা বলুয়ার্তের পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের ঘোষণা শুনতে চাই,’ বলেছেন বিক্ষোভকারী হোসে দে লা রোজা। দাবি না মানলে সামনের দিনগুলোতে বিক্ষোভ আরও প্রকট হবে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বামপন্থি নেতা পেদ্রো কাস্তিলো ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অল্প সময়ের ব্যবধানেই কাস্তিলোকে বন্দি করা হয়। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট দিনা বোলোয়ার্তে। তারপর থেকেই কার্যত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে দেশটি। ৬০ বছর বয়সি দিনা পেরুর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তবে কাস্তিলোকে ক্ষমতাচ্যুত ও গ্রেপ্তারের পর দায়িত্ব নেওয়া এ নেত্রীকে প্রথম থেকেই পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন বিক্ষোভকারীরা।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..